Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

তফসিলের পর ঢাকা ছেড়ে মাঠে প্রার্থীরা

Icon

তারিকুল ইসলাম

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তফসিলের পর ঢাকা ছেড়ে মাঠে প্রার্থীরা

ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিএনপি-জামায়াতসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা জোরেশোরে গণসংযোগ শুরু করেছেন। ঢাকায় যেসব প্রার্থী অবস্থান করছিলেন, তারাও এখন নিজ নিজ এলাকায়। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নেমে পড়েছেন ভোটের মাঠে। যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচন কমিশনের আহ্বান অনুযায়ী নিজ নিজ এলাকায় প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন সরিয়ে ফেলার কাজও করছেন দলগুলোর প্রার্থীরা।

এদিকে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় সারা দেশের অন্য প্রার্থীরাও উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন। অন্তত ২০টি আসনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চান তারা। নাহলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব ধরনের সহযোগিতার কথাও জানান প্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ১২ ফেব্রুয়ারি। বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে স্বাগত জানিয়ে দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে আনন্দ মিছিল বের করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা।

শুক্রবার চট্টগ্রামে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এদিন জেলার অন্য প্রার্থীরাও প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। খসরু মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, ঘোষিত প্রতিটি আসনেই বিএনপির প্রার্থীরা গণসংযোগ করছেন। মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। তফসিলের পর মানুষের মধ্যে উৎসাহ আরও অনেক বেড়েছে।

ময়মনসিংহ-৫ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রচার উপকরণ সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামী সারা দেশ থেকে প্রচারসামগ্রী সরিয়ে নিয়েছে। আমরা এই দুই দিনে ঘোষিত সব সভা-সমাবেশও স্থগিত করেছি। কিন্তু ব্যক্তিগত যোগাযোগ, ভোটার কন্টাক্ট, সালাম বিনিময়-এই কাজ অব্যাহত আছে। ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

গোপালগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী সেলিমুজ্জামান সেলিম। শুক্রবার সকালে নিজ এলাকায় যান তিনি। যদিও মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই এলাকায় গণসংযোগ করছেন তিনি। সেলিমুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার ঘটনার (হাদিকে গুলি) মধ্য দিয়ে বোঝা যায় চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চলছেই। তবে তফসিলের পর সাধারণ মানুষ খুব আনন্দিত। মানুষের মনে যে সন্দেহ ও শঙ্কা ছিল, তা দূর হয়েছে। মানুষের মধ্যে আগের চেয়ে স্বতঃস্ফূর্ততা ফিরে এসেছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপটা কী হতে যাচ্ছে, সেটাও দেখার ব্যাপার।

গাজীপুর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী এম মঞ্জুরুল করিম রনি বলেন, প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকেই দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। তফসিলের পর গণসংযোগ আরও চাঙা হয়েছে। এই আসনে ধানের শীষের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

জামালপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল যুগান্তরকে বলেন, সারা দেশের মতো আমার নির্বাচনি এলাকায়ও সর্বস্তরের মানুষ নির্বাচনি উৎসব-আমেজে যোগ দিয়েছে।

তফসিলের পর রাজশাহী বিভাগের আসনগুলোতেও বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা আরও জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন। রাজশাহী-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু কয়েকদিন ঢাকায় অবস্থানের পর রাজশাহী যান। শুক্রবার তিনি মহানগরীর টিকাপাড়া জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের পর মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বিকালে মহানগরীর ভদ্রা এলাকায় সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এছাড়া জামায়াত প্রার্থী ডা. মো. জাহাঙ্গীরও জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে বিএনপির প্রার্থী ডিএম জিয়াউর রহমান শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে রাজশাহী ফেরেন। তার সমর্থক বাগমারা উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শামসুজ্জোহা সরকার বাদশা বলেন, অচিরেই সাত দিনের নির্বাচনি কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এরপর তারা আরও জোরেশোরে মাঠে নামবেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ডা. আব্দুল বারী সরদার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনি কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন।

খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনি প্রচারণার ব্যানার-ফেস্টুন খুলে ফেলা শুরু করেছেন। তিনি এখন এলাকাভিত্তিক প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল প্রার্থীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ আসনে এনসিপির প্রার্থী ডা. ফরিদুল ইসলাম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে না নামলেও ভেতরে ভেতরে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত।

খুলনা-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী আলী আজগর লবী তফসিল ঘোষণার পর এলাকায় ফিরেছেন। তিনি ওমরা পালনের পর খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর শুনে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। শুক্রবার এলাকায় ফিরে নির্বাচনি কার্যক্রম ফের শুরু করেন। আসনটিতে জামায়াতের হেভিওয়েট প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এলাকার ব্যানার-ফেস্টুন খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। খুলনা-৬ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ তফসিলের পর থেকেই এলাকায় অবস্থান করছেন। আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল ইসলাম বাপ্পি তফসিলের পর থেকেই গণসংযোগ জোরদার করেছেন।

নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরপরই যশোর শহরে মিছিল করে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যশোর-৩ আসনে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম শুক্রবার সকালে স্থানীয় ওলামা-মাশায়েখদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন যশোর শহরের মডেল মসজিদে। যশোর-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণও তার নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ করেন। শুক্রবার সকালে শ্রাবণ কেশবপুরের সাংবাদিক শামিম আক্তার মুকুলের বাবা দীন মোহাম্মদের জানাজায় অংশ নেন। কেশবপুর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজায় একই আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক মোক্তার আলীও ছিলেন।

যশোর-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ তফসিল ঘোষণার দিনও চৌগাছার স্বরূপকাঠি ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন। শুক্রবার সিংহঝুলি ইউনিয়নে গণসংযোগের কথা ছিল। কিন্তু তফসিল ঘোষণা হওয়ায় সেই কর্মসূচি বাদ দিয়েছেন।

বরিশাল বিভাগে রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে নতুন উদ্যম। যারা নির্বাচনি এলাকায় আছেন তারাসহ রাজধানী ঢাকায় থাকা প্রার্থীরাও ফিরতে শুরু করেছেন এলাকায়। তফসিলের আগে থেকেই নির্বাচনি এলাকায় আছেন বরিশাল-৫ আসনের বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। এলাকায় থেকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও গণসংযোগ করছেন তিনি। শুক্রবার নির্বাচনি এলাকায় যান বরিশাল-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী জহিরউদ্দিন স্বপন। পটুয়াখালী-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী আলতাফ হোসেন চৌধুরী আছেন নির্বাচনি এলাকায়। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরিশাল-৪ আসনের বিএনপি প্রার্থী রাজিব আহসানও এলাকাতেই ব্যস্ত আছেন প্রচারণায়। এদিকে বরিশাল-১ আসনে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসাইন হেলাল। পিরোজপুর-১ ও ২ আসনে গণসংযোগসহ নির্বাচনি নানা কর্মকাণ্ড করছেন জামায়াতের দুই প্রার্থী মরহুম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই পুত্র মাসুদ সাঈদী ও শামিম সাঈদী।

তফসিল ঘোষণার পর শুক্রবার কুমিল্লা জেলার অধিকাংশ আসনের বিএনপির প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় জুমার নামাজ আদায় করে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও গণসংযোগ করেন।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও কুমিল্লা ব্যুরো।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম