অপেক্ষার অবসান, নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস
তারেক রহমান দেশে ফিরছেন ২৫ ডিসেম্বর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। টানা ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানের পর এদিন তিনি দেশে ফিরবেন। শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর শুনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা।
অন্যদিকে, তারেক রহমানের মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শাশুড়িকে দেখতে গত ৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, যিনি কোটি কোটি মানুষের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। প্রায় ১৮ বছর ধরে নির্বাসিত অবস্থায় বিদেশে রয়েছেন। বিগত প্রায় এক যুগ ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গণতান্ত্রিক উত্তরণে ছাত্র নেতৃত্বে যে গণ-অভ্যুত্থান তা সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন। সেই সংগ্রামী নেতা ও এই দেশের গণমানুষেরও প্রিয় মানুষ তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার মাটিতে এসে পৌঁছাবেন। সেদিন বড়দিনের বন্ধও রয়েছে। দলের পক্ষ থেকে আমরা তার এই আগমনকে শুধু স্বাগতই নয়, আনন্দের সঙ্গে সমগ্র জাতিকে জানাচ্ছি। গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যেসব বাধা সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা মনে করি তারেক রহমান দেশে এসে পৌঁছালে সেসব বাধা দূর হয়ে যাবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে। বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করেছে। এতে করে সারা দেশের মানুষের মধ্যে যে আশা প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে তা বাস্তবায়িত হতে শুরু করেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আগমন সুন্দর ও সুষ্ঠু হবে সে বিষয়ে সবার সহযোগিতাও চান মির্জা ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
এদিকে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর শুনে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা জানান, অবশেষে তাদের প্রতীক্ষার অবসান হলো। এতে করে নেতাকর্মীরা নবোদ্যোমে নির্বাচনের প্রচারণাসহ সব কর্মকাণ্ড করতে পারবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বরণ করতে সেদিন লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় থাকবেন বলেও জানান নেতাকর্মীরা। তারা আরও বলেন, তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরলে মা-ছেলের দেখা হবে। এর চেয়ে বড় খুশির খবর আর কী হতে পারে।
ওয়ান-ইলেভেনের সময় প্রায় ১৮ মাস কারান্তরীণ থাকার পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান তারেক রহমান। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান।
তারেক রহমান মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলার গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হন। আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনে যোগ দেওয়ার আগেই তিনি রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারেক রহমান তার মা খালেদা জিয়ার সহচর হিসাবে সারা দেশে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও মায়ের পাশাপাশি তারেক রহমান দেশব্যাপী নির্বাচনি প্রচারণা চালান। এই নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতির প্রথম সারিতে তার সক্রিয় আগমন ঘটে। ২০০২ সালে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এরপরই দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। মূল সংগঠনসহ যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে তৃণমূল সভা আয়োজন করেন। মূলত এই জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মাঝে তারেক রহমান শুধু প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিতি থেকে বেরিয়ে এসে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। তার এই সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বিরোধী পক্ষ অপপ্রচার শুরু করে। তবে এর কোনোটারই ভিত্তি ছিল না।
তবে ওই অপপ্রচারের সুদূরপ্রসারী ফলস্বরূপ ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়ে তাকে কারাগারে যেতে হয়, নির্যাতনের শিকার হতে হয়। একপর্যায়ে চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডনেও যেতে হয়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তিনি দল পরিচালনায় সম্পৃক্ত হতে থাকেন। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝেও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেন তারেক রহমান। তবে সেখানেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকার উচ্চ আদালতের মাধ্যমে এক আদেশে তার বক্তব্য-বিবৃতিও প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যা গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের আগ পর্যন্ত ছিল।
২০০৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে ও ২০১৬ সালে ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে তারেক রহমান দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে যুক্তরাজ্য থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সেখান থেকে সব সময় ভার্চুয়ালি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, নেতাকর্মীদের প্রতি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।
তারেক রহমান ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান, সাবেক যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের মেয়ে ডা. জোবাইদা রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র মেয়ে জাইমা রহমান লন্ডনের কুইনমেরি ইউনিভার্সিটি থেকে আইনশাস্ত্রে ল’ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে যুক্তরাজ্য থেকেই তারেক রহমান সব সময় ভার্চুয়ালি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের গত প্রায় ১৬ বছর বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, খুন-গুম-নির্যাতন সত্ত্বেও তারেক রহমানের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার কারণে দল ছিল ঐক্যবদ্ধ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রয়াস চালাচ্ছেন। বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি ঐক্যের বার্তা দিচ্ছেন, পেশিশক্তির উত্থানের পরিবর্তে জনমানুষের পক্ষে কাজ করে জনসমর্থন সৃষ্টির বার্তা দিচ্ছেন। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিএনপিরই প্রায় চার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তিনি বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের প্রতি নৈতিক রাজনৈতিক চর্চার কঠোর বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। তার এ উদ্যোগ ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিবেশের গুণগত পরিবর্তনের গোড়াপত্তন করবে বলে মনে করেন নেতারা।
তারা জানান, বিএনপির মতো সর্ববৃহৎ দলের গুণগত পরিবর্তনের উদ্যোগ অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তিসহ জাতীয় রাজনৈতিক পরিসীমায় এক নবতর সাম্য ব্যবস্থার সৃষ্টি করবে। তার দূরদর্শী রাজনীতির ভূয়সী প্রশংসা করে নেতারা বলেন, গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইতিবাচক ও পরিবর্তনের রাজনীতি জাতির সামনে নতুনভাবে আশার সঞ্চার করছে। মানুষের মন জয় করতে তিনি নিচ্ছেন একের পর এক যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। তার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনা জনগণ গ্রহণ করেছে। বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রেখে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসাবে এক অনন্য জায়গায় নিয়ে গেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এর সুফল পাবেন দেশবাসী।
