স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আর বাকি ২ দিন
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে নিরাপত্তার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় ফেরার পর তারেক রহমানের নিরাপত্তায় চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স-সিএসএফ কাজ করবে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সিএসএফ পুনর্গঠন করা হয়েছে। সিএসএফের সদস্য সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। দলীয়ভাবেও দশ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত করা হচ্ছে, তারাও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে। এদিকে তারেক রহমানের দেশে ফেরার জন্য নির্ধারিত লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট থেকে দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নিরাপত্তা ও ভিআইপি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় পর ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে সপরিবারে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এদিকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ঢাকা মহানগরজুড়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা জানাতে রাজধানীতে যে বড় ধরনের জনসমাগম হবে, তা শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে বিএনপির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সূত্রমতে, ঢাকায় অবতরণের পর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরে তিনশ ফিট সড়কে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। মূলত রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ এড়াতে স্থানটি বেছে নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। জানা গেছে, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সারা দেশ থেকে ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এছাড়া ঢাকা মহানগরী থেকেও ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষের সমাগম হবে। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগের দিন অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন।
জানা গেছে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা পাওয়ার পরপরই পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। ২৪ ডিসেম্বর থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হবে। এছাড়া তারেক রহমানের চলাচলের প্রতিটি স্থানে থাকবে নিরাপত্তা বেষ্টনী। দেশে ফিরে তারেক রহমান উঠবেন গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে। এর পাশেই ‘ফিরোজা’ নামের বাড়িটিতে থাকেন তার মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১৯৬ নম্বর বাড়ির সামনে ইতোমধ্যে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। সড়কের সামনে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
এদিকে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে তার আগমনকে স্বাগত জানিয়ে রোববার রাজধানীতে মিছিল করে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর। মিছিলটি রাজধানীর বনানীর কাকলী ফুটওভার ব্রিজের নিচে থেকে মহাখালী কাঁচাবাজার গিয়ে শেষ হয়। এতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েল ও সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজের নেতৃত্বে স্বাগত মিছিলে ছিলেন মহানগর উত্তর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম স্বপন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান, তসলিম হাসান মাসুম, তানভীর আহমেদ ইকরামসহ উত্তর যুবদলের আওতাধীন ২৬টি থানা ও ৭১ ওয়ার্ডের নেতারা মিছিলে অংশ নেন।
নিরাপত্তা বিবেচনায় ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রু বদল : তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট থেকে দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা কেবিন ক্রুরা হলেন জুনিয়র পার্সার মো. সওগাতুল আলম সওগাত এবং ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস জিনিয়া ইসলাম। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে আসায় তাদের ওই ফ্লাইটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক বদরুল হাসান লিটন যুগান্তরকে বলেন, ভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কেবিন ক্রুদের বিশেষ ভেটিং ও বাছাই প্রক্রিয়া থাকে। প্রাথমিকভাবে যাদের নাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাদের বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ ও প্রশ্ন ওঠায় তাৎক্ষণিকভাবে বিকল্প ক্রু দিয়ে ফ্লাইটটি পুনর্গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট দুই কেবিন ক্রুকে কোথাও সরানো হয়নি বা চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়নি; শুধু ওই নির্দিষ্ট ফ্লাইটের তালিকা থেকে নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভিআইপি ও ভিভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তা ও প্রটোকল নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের বিতর্ক বা ঝুঁকি না থাকে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে ওই দুই কেবিন ক্রুর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা নতুন করে আলোচনা তৈরি করে। এ নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিমান সূত্র জানায়, তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি বুধবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা পৌঁছাবে ফ্লাইটটি।
