ব্যাপক ক্ষতি থেকে রক্ষা
দুর্বল ফণীর মৃদু ছোবল
শনিবার ভোর ৬টায় ঘূর্ণিঝড় আকারে সাতক্ষীরা দিয়ে প্রবেশ, রাতে লঘুচাপ আকারে আসামে প্রস্থান * দুই দিনে বজ্রপাত, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, গাছ ও ঘর চাপায় নিহত ২৭, আহত কয়েকশ’ * বিভিন্ন জেলায় আড়াই হাজার বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড, ভেঙে গেছে অসংখ্য গাছপালা * ভেসে গেছে মাছের ঘের-পুকুর, নষ্ট হয়েছে মাঠের ফসলসহ বোরো ধান
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪ মে ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরার স্থলভাগের ওপর দিয়ে শনিবার ভোর ৬টার দিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঘূর্ণিঝড় ফণী। এর আগে ওড়িশায় আঘাত হানার পর ২২ ঘণ্টার দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়টি।
আর প্রবেশের ৩ ঘণ্টার মধ্যেই এটি গভীর নিুচাপে এবং পরে লঘুচাপে পরিণত হয়। সবমিলে দুর্বল ফণীর মৃদু ছোবলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে গেছে বাংলাদেশ। ফণীর কারণে ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ায় লন্ডনে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছেন।
এরপরও বজ ঝড়, ঝড়ো হাওয়া, প্রবল বর্ষণ ও বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে প্রায় সারা দেশেই জানমালের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যুগান্তর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুয়ায়ী, শুক্র ও শনিবারের ঝড়ে বজ পাত এবং গাছ ও ঘরের চাপায় ২৭ জন নিহত হয়।
আহত হয়েছে কয়েকশ’। এর মধ্যে বজ পাতে কিশোরগঞ্জে ৬, নেত্রকোনায় ২, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন নিহত হয়েছে। বরগুনায় ২ জন, ভোলা, রামগতি, কাউখালী, কুয়াকাটা, গোমস্তাপুর, কলাপাড়া, লালমোহন, সুবর্ণচর, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও নোয়াখালীতে একজন করে মারা গেছে। পাথরঘাটায় দাদা ও নাতি এবং চট্টগ্রামে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে একজন নিহত হন। যদিও সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ৪ এবং আহত ৬৩ জন।
ঝড়ে অনেক স্থানে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। এর ফলে অনেক স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ। বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় লণ্ডভণ্ড হয় বহু বাড়িঘর।
এতে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ঘরবাড়ি ভাঙার কারণে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে। অন্তত আড়াই হাজার বাড়িঘর নানাভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে।
অনেকের কাছে সরকারি বরাদ্দের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ এসেছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রাক্কালে অমাবস্যার জো চলছিল। যে কারণে সাগরে ছিল পানির বাড়তি প্রবাহ।
পাশাপাশি ছিল ঘূর্ণিঝড়ের কারণেও বায়ুতাড়িত জোয়ার। সবমিলে ৪-৫ ফুট উচ্চতার জোয়ারের অতিরিক্ত পানি এবং বিক্ষুব্ধ সাগরের উত্তাল উঁচু ঢেউ কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে ফেলে। আবার কোথাও পোল্ডার ও বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।
এর সঙ্গে ছিল বজ বৃষ্টি, দমকা ও ঝড়ো হাওয়া। সবকিছু মিলে বিভিন্ন স্থানে ফসলের মাঠ, মাছের ঘের এবং পুকুর ভাসিয়ে নেয়। ফলে নষ্ট হয়েছে মাঠের ফসলসহ বোরো ধান। ভেসে গেছে চাষের মাছ।
ফলে নিঃস্বদের অনেকে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। ফণীর প্রভাব কমে যাওয়ার পর বিকালে অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত দু’দিন নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার বিমানের তিনটি ফ্লাইট বাতিল হয়। শনিবারও অভ্যন্তরীণ রুটের একটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আহতদের চিকিৎসাসেবা দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত টিমগুলো সারা দেশে তৎপর আছে। ঝড়ের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আজকেরও সব পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শনিবার ভোরে বাংলাদেশে প্রবেশের ২২ ঘণ্টা আগে ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় আকারে ২০০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগসহ ফণী আঘাত হানে ভারতের ওড়িশায়। ফণী প্রথমে ওই রাজ্যে তাণ্ডবলীলা চালায়। এরপর এটি ছোবল মারে পশ্চিমবঙ্গে। শনিবার ভোরে বাংলাদেশে ঢোকার আগে এটি অনেকটাই শক্তি হারায়।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, অতি প্রবল হয়ে ওঠা ফণী দুর্বল হয়ে শনিবার সকালে বাংলাদেশে ঢোকায় ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়। যদি এটি স্থলভাগের পরিবর্তে উপকূল দিয়ে খুলনা অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করত তাহলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ত বাংলাদেশ। এরপরও এখন ক্ষতি একেবারে কম হয়নি। বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঁধ ও পোল্ডার ভেঙে লোকালয়ে নোনা পানি ঢুকে যাওয়ায়। এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড আগাম ব্যবস্থা নিতে পারত।
বিএমডি পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, শনিবার সকাল ৬টায় স্থলভাগের ওপর দিয়ে ভারতের অংশ থেকে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর অঞ্চলে প্রথমে অবস্থান নেয়। সকাল ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি ফরিদপুর-ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছিল। তখনই এটি স্থল নিুচাপে পরিণত হয়। এরপর আরও দুর্বল হয়ে ফণী দুপুরের দিকে টাঙ্গাইল, পাবনা, জামালপুর ও ময়মনসিংহের দিকে যায়। সন্ধ্যা নাগাদ এটি লঘুচাপ আকারে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা হয়ে ভারতের আসামের দিকে চলে যায়।
বিএমডির পরিচালক আরও জানান, শক্তি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ এখন অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত। এ কারণে সংকেতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সব সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি প্র্যাকটিস যে, যখন বিপদ সংকেত নামবে, তখন ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দিয়ে ১৮ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে বলি।’
বিএমডির পরিচালক আয়েশা খাতুন শনিবার যুগান্তরকে বলেন, এখনও এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট পরবর্তী অবস্থার প্রভাব আছে। দেশের অনেক স্থানে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে, যার গতিবেগ থাকতে পারে ৫০-৬০ কিলোমিটার। আজ যে ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে, সেটা অব্যাহত থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে।
শনিবার বিকালে বিএমডির এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা এবং এসব এলাকার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর সর্বশেষ অবস্থা জানাতে শনিবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ফণীর অগ্রভাগ বাংলাদেশ স্পর্শ করার পর উপকূলসহ সারা দেশের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এটি তখনও ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই অবস্থান করছিল। শনিবার সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়ের চারপাশের বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। বাংলাদেশে এ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সবচেয়ে বেশি বাতাসের গতিবেগ ছিল বরিশালে। সেখানে ঘূর্ণিঝড় ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার বেগে আঘাত করে। এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে কোথাও ৪৫, কোথাও ৩৭ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যাদের সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠানোর পরামর্শ দেন তিনি।
ওই সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। আমরা আনন্দিত যে, আমরা যে শঙ্কায় ছিল, সেই শঙ্কা কাটিয়ে ভালো অবস্থানে আছি। তেমন উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি কোথাও হয়নি বলে জেনেছি। যারা মারা গেছেন, তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাননি। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, উপকূলের একটি লোকও যাতে নিরাপদ আশ্রয়ের বাইরে না থাকে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পুরো বিবরণ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের কাছে আসবে। সেই অনুযায়ী প্রত্যেক মন্ত্রণালয় তাদের পুনর্বাসনের জন্য দায়িত্ব নেবে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল বলেন, আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমাদের খুব একটা ক্ষতি হয়নি। ফসল ও গবাদিপশুর ক্ষতি হয়নি। এটা আমাদের প্রাথমিক মূল্যায়ন। ঝড়ে মারা গেছে চারজন। এর মধ্যে বরগুনায় দু’জন, ভোলা ও নোয়াখালীতে একজন করে। আহতের সংখ্যা ৬৩। তিনি বলেন, শুক্রবার আপনাদের বলেছিলাম সাড়ে ১২ লাখ লোক আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। এটা বর্তমানে হল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৪১৭ জন।
এ প্রসঙ্গে নিজের বক্তৃতায় ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা মারা গেছেন, তাদের দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। আহতদের চিকিৎসায় মেডিকেল টিম আছে। সিভিল সার্জনরা এটি মনিটরিং করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, তথ্য সচিব মো. আবদুল মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামছুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, উপকূলীয় জেলাগুলোয় যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে। আমাদের খাদ্যের কোনো সংকট নেই। আমাদের এখন প্রয়োজন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সব স্তরের লোকজন সম্পৃক্ত হয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতির বিশাল কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করে। সবার মধ্যে যে সমন্বয়টা ছিল, সেটা প্রশংসনীয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কিছু ক্ষয়ক্ষতি তো হবেই। এগুলোর অ্যাসেসমেন্ট আমাদের ডিপার্টমেন্টগুলো যাতে সঠিকভাবে করে, পরিসংখ্যানের মধ্যে যাতে কোনো ঘাটতি না থাকে, এটা খুব শিগগিরই সবাই যাতে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়, সেটা আমরা সবাইকে অনুরোধ করব।’
চট্টগ্রামে বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে জড়িয়ে নিহত ১ : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে নগরী ও আশপাশের এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন সড়কে গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে। বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে স্পৃষ্ট হয়ে একজন নিহত এবং গাছ ভেঙে পড়ে পাঁচজন আহত হয়েছেন। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪টি ফ্লাইটের যাত্রা বাতিল করা হয়। কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটেছে। গ্রামাঞ্চলে কাঁচা ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
শনিবার নগরীর চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিসের সামনে একটি গাছ উপড়ে পড়ে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের টিম গাছটি সরিয়ে দিলে প্রায় আধা ঘণ্টা পর যান চলাচল শুরু হয়। একইভাবে দমকা হাওয়া নগরীর আসকার দীঘিরপাড় এলাকায় লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনের জাকির হোসেন সড়কে একটি গাছ রাস্তার ওপর উপড়ে পড়ে। এতে একটি প্রাইভেটকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী যুগান্তরকে জানান, ‘আসকার দীঘিরপাড়, চন্দনপুরা, কোতোয়ালি থানার সামনে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ার তথ্য আসে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। পরে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের টিম পাঠিয়ে এসব সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করি।’ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাবে চট্টগ্রামে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। নগরীতে কয়েকটি জায়গায় গাছপালা ভেঙে পড়েছে। মীরসরাই উপজেলায় তিনটি কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলেও কয়েকটি এলাকা থেকে গাছ উপড়ে পড়ার তথ্য পেয়েছি।
তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’ চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে এক যুবক মারা গেছেন। শনিবার দুপুরে নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের পকেট গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মো. নুর নবী (২৫)। তিনি স্থানীয় সুলতান সরদারের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় গাছ ভেঙে পড়ে পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে তিনি জানান। আহতরা হলেন- সীতাকুন্ড উপজেলার ছোট কুমিরার আবু তাহেরের স্ত্রী রোজিনা বেগম, জোরারগঞ্জ থানার নারায়ণ দাসের স্ত্রী রিনা রানী দাস (৪৫), একই থানার বেতে পাড়ার মনা মিয়ার স্ত্রী জাকারিয়া (৬০), একই থানার জামসেদের স্ত্রী বিবি খাতিজা (৩০) ও রাউজান থানার মাখন দে’র স্ত্রী স্বর্ণ দে (৪৫)। আহতরা চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বরিশালে এক হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি : বরিশাল ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে বরিশাল জেলায় এক হাজার বসত বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি ৯ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্তহয়েছে বলে জানিয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬৮০ হেক্টর বোরো ধান, ১ হাজার ৫১০ হেক্টর মুগডাল, ১ হাজার ৪৬৬ হেক্টর মরিচ, ২৫০ হেক্টর তিল, ৯৪০ হেক্টর শাকসবজি, ১২০ হেক্টর ভুট্টা, ৫৩৫ হেক্টর পান ও ৫৫২ হেক্টর সয়াবিন ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য দেন।
ফেনীতে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক ঘরবাড়ি : ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে শতাধিক ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি ও বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সকাল পর্যন্ত দমকা হাওয়ায় উপকূলীয় এলাকা সোনাগাজীসহ জেলার প্রায় সব ক’টি উপজেলায় ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
ফরিদপুরে ২৬ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত : ফরিদপুর ব্যুরো জানায়, দুটি উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ২৬টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে শতাধিক গাছপালা। শুক্রবার বিকালে মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ও রাতে ফরিদপুর সদরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে এ ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ে ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর, ফতেপুর, ভবানীপুর ও চক ভবানীপুর গ্রামে ১৮টি টিনের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশির ভাগ বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে। এছাড়া ওই চারটি গ্রামে আম ও লিচুগাছসহ শতাধিক গাছ উপড়ে গেছে।
ভোলায় নিহত ১ আহত ৫০ : ভোলা প্রতিনিধি জানান, জেলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নসহ জেলায় বিধ্বস্ত হয়েছে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি। ঘরচাপায় নিহত হয়েছেন গৃহবধূ রানু বেগম রানী (৪৫)। ৮নং ওয়ার্ডের সামসুল হক ফরাজির স্ত্রী নিহত রানু বেগমের লাশ শনিবার সকালে বিধ্বস্ত ঘরের চালা কেটে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। এদিকে ঘরচাপায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এদের মধ্যে ১২ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। অন্যদের এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা দেন সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন চিকিৎসক দল।
কুমিল্লায় গাছপালা বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতি : কুমিল্লা ব্যুরো জানায়, শনিবার সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যাওয়ার সময় বজ সহ বৃষ্টি হয়। এতে জেলার কোনো এলাকা থেকে হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও বেশ কিছু গাছপালা এবং বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা ইসমাইল ভূঁইয়া জীবন জানান, সকাল ৬টা ৫০ মিনিট থেকে ৭টা পর্যন্ত যে ঝড়টি বয়ে গেছে তার গতি ছিল ৮২ কিলোমিটার।
চাঁদপুরে চরাঞ্চলের দুই শতাধিক বসতঘর লণ্ডভণ্ড : চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে চাঁদপুর জেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মতলব উত্তর ও চাঁদপুর সদরের মেঘনা নদীর পশ্চিমপাড়ে চরাঞ্চলে প্রায় দুই শতাধিক বসতঘর ও গাছলপালা ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ছিন্নমূলদের বেশ কয়েকটি ঘর। তবে কেউ হাতহত হয়নি।
গাজীপুরে বিদ্যুতের ১৫ খুঁটি পড়ে যান চলাচল ব্যাহত : গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে গাজীপুরে পল্লী বিদ্যুতের ১৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি সড়কে হেলে পড়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জেলা পুলিশ লাইনের সামনে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের কাছে ঢাকা-গাজীপুর সড়কে এ খুঁটিগুলো হেলে পড়ে। এতে ওই সড়কে যান চলাচল সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়।
বগুড়ায় গাছ ভেঙে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত : বগুড়া ব্যুরো জানায়, ফণীর প্রভাবে বগুড়ায় শনিবার বিকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সকালে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার। দুপুরে শহরতলির ঠেঙ্গামারা এলাকায় একটি পুরাতন কৃষ্ণচূড়া গাছ মহাসড়কের উপর ভেঙে পড়লে কিছু সময়ের জন্য যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়। তবে কোনো ক্ষতি হয়নি।
কচুয়ায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড : কচুয়া প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরের কচুয়ায় ফণীর ভয়াবহ তাণ্ডবে ও গাছ পড়ে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়েছে। এতে বাবা-ছেলে গুরুতর আহত হয়েছেন। ভোরবেলায় কচুয়া উপজেলার পাড়াগাঁও, রসুলপুরসহ কয়েকটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
হাজীগঞ্জে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৩০টি ঘর লণ্ডভণ্ড : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে দেশগাঁও গ্রামে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ১৪টি বসতঘর লণ্ডভণ্ড হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১৬টি ঘরের।
তালতলীতে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত : তালতলী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক ও শতাধিক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেঢ়িবাঁধের বাইরের ৫সহস াধিক বসতবাড়ি।
পাথরঘাটায় কেড়ে নিল দাদি ও নাতির প্রাণ : পাথরঘাটা প্রতিনিধি জানান, বরগুনার পাথরঘাটায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে এবং দাদি ও নাতি ঘরের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে। এ সময় আরও কয়েকজন আহত হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহিন মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ চরদুয়ানীর বাধাঘাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হল- চরদুয়ানী ইউনিয়নের বাধাঘাটা গ্রামের মৃত আবদুল বারেকের স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬০) ও তার ছেলে ইব্রাহীমের ছেলে জাহিদুল (৮) এবং ইউনুচ মিয়া নামে আরও একজন আহত হয়েছেন।
কালীগঞ্জে ভেঙে পড়ল শতবর্ষী গাছের ডাল : কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানায়, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরে শতবর্ষী রেইন্ট্রি গাছের শুকনা ডাল ভেঙে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন পথচারীরা। শনিবার সকালে শহরের বৈশাখী মোড়ে রাজু টি স্টোরের ওপর ডালটি ভেঙে পড়লেও বিদ্যুৎ ও ডিশের তারের কারণে অল্পের জন্য বেঁচে যায় ৪-৫টি তাজা প্রাণ।
রামগতিতে ১ বৃদ্ধার মৃত্যু, দুই শতাধিক কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত : রামগতি প্রতিনিধি জানায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে আনোয়ারা খাতুন (৭৫) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। ঝড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দুই শতাধিক কাঁচা ঘর ভেঙে ও চাল উড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপড়ে গেছে শত শত গাছপালা। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে কয়েকটি গ্রাম।
কাউখালীতে জোয়ারের পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু : কাউখালী প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুরের কাউখালীতে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সন্ধ্যা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা কন্ট্রোল রুম ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শনিবার উপজেলার পূর্ব বেতকায় গ্রামে নূরুজ্জামান খান সোহাগের ছেলে মোরছালিন খান (৪) বাড়ির সামনে একটি ডোবায় পড়ে মারা যায়।
কুয়াকাটায় আহত এক যুবকের মৃত্যু : কুয়াকাটা প্রতিনিধি জানান, কুয়াকাটায় তীব্র বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আহত মোটরসাইকেল চালক হাবিবুর রহমান মুসল্লি (২৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ওরকা পল্লীর বাসিন্দা হারুন মুসল্লির পুত্র হাবিব। এ ঘটনায় আরও দু’জন আহত হয়েছেন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
মঠবাড়িয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি : মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শুক্রবার রাতে ফণীর প্রভাবে ঝড়, জোয়ার ও বৃষ্টিতে উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বলেশ্বর নদের তীরের মানুষ বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জলোচ্ছ্বাসের ভয়ে আতঙ্কিত।
বানারীপাড়ায় কাঁচা-ঘরবাড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটির ক্ষয়ক্ষতি : বানারীপাড়া প্রতিনিধি জানান, বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর পানি তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পায়। ঝড়ে গাছ পড়ে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়িসহ বিদ্যুতের খুঁটি ও ক্রস আর্ম ভেঙে যাওয়ার পাশাপশি অর্ধশতাধিক স্পটে তার ছিঁড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রাঙ্গাবালীতে শতাধিক ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত : রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় শতাধিক বসত ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৮৫ হেক্টর জমির রবিশস্য নষ্ট হয়ে গেছে এবং উপড়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক গাছপালা।
গোমস্তাপুরে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু : গোমস্তাপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট ভারি বর্ষণের কারণে জলাবদ্ধতায় পানিতে ডুবে মোরসালিন নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত মোরসালিন উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে।
গলাচিপায় আহত ১ : গলাচিপা প্রতিনিধি জানান, গলাচিপায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বাদশা নামের এক যুবক আহত হয়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে উপজেলার দক্ষিণ পানপট্টি লঞ্চঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস মিয়ার ঘরসহ ৫টি ঘরের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে।
মীরসরাইয়ে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত : মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শনিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা নাগাদ ফণীর প্রভাবে দমকা হাওয়া ও ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্ন এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গাছ পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকের বাড়ির টিনের চাল চলে গেছে। প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চরফ্যাশনে শতাধিক ঘরবাড়ির ক্ষতি : চরফ্যাশন (দক্ষিণ) প্রতিনিধি জানান, চরফ্যাশন উপজেলা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচরের শতাধিক কাঁচা ও টিনশেড ঘরবাড়ি, গাছপালা, পুকুরে মাছসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
কলাপাড়ায় একজনের মৃত্যু : কলাপাড়া প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঝড়ের সময় চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর গাছের ডাল পড়ে গুরুতর জখম হাবিব মুসল্লি (৩৭) বরিশালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শুক্রবার মধ্যরাতে হাবিব মারা যান।
ভাণ্ডারিয়ায় কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি : ভাণ্ডারিয়া প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীতে ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় কয়েকটি কাঁচা ঘরবাড়ির চালা উড়িয়ে নিয়ে যায়, প্রায় ৪০টি কাঁচা ঘরবাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়। জোয়ারে ধানক্ষেত, মুগডাল, ভুট্টার খামার তলিয়ে যায়, বেশ কিছু মাছের ঘেরের মাছ ভেসে যায়। এছাড়া বেশ কয়েকটি গাছ উপড়ে পড়া ছাড়া তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
সোনাগাজীতে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত : সোনাগাজী প্রতিনিধি জানান, সোনাগাজীতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, রবি ফসল ও বৈদ্যুতিক খুঁটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
লালমোহনে শিশু নিহত : লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে জোয়ারের পানিতে ডুবে ভোলার লালমোহনে এক শিশু নিহত হয়েছে। এছাড়া ১১২টি কাঁচা ঘর, ৫টি বিদ্যালয়, ৭টি মাদ্রাসা ও একটি ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মোংলায় ৫ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত : মোংলা প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী শুক্রবার দিনগত মধ্যরাতে মোংলাসহ সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানে। আর শনিবার বিকাল ২টায় উপকূল অতিক্রম করছে এ ঘূর্ণিঝড়। এতে ৫ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।
কাজিপুরে দাদা ও নাতনির মৃত্যু : সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে প্রায় দুশ’ বছরের পুরাতন গাছের নিচে চাপা পড়ে দাদা ও নাতনির মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও ৮ জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত সম্রাট হোসেন ও মুকুল হোসেনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার বিকালে কাজিপুর উপজেলার ভানুডাঙ্গা বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- কাজিপুর উপজেলার ভানুডাঙ্গা গ্রামের মুকুল হোসেনের মেয়ে বিথী খাতুন (৮) ও মুকুল হোসেনের বাবা ইসমাইল হোসেন (৫৫)।
সুবর্ণচরে এক শিশু নিহত : কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্তে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে কয়েক মিনিটের টর্নেডোর আঘাতে বসতঘরের চাপা পড়ে ইসমাইল হোসেন নামের দুই বছরের এক শিশু নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে।
ফসলের ক্ষয়ক্ষতি : আগৈলঝারা প্রতিনিধি জানান, ভারীবর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বোরো রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার দোচাই, গোহাড়া, বরহট্রি, রঘুনাথপুর গ্রামে ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ২৫ভাগ মাঠের আধা-পাকা উঠতি বোরো ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। ধান ছাড়াও পটল, করল্লা, পেঁপে, কলার ক্ষেত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলেও কৃষকরা জানান।
