জেলগেটে বাবাকে মিন্নি
আব্বু, আমি আর বাঁচব না
মিন্নি বলেছে, রিফাতের কোমরে চাকু আছে, তাই কোমর ধরে থাকি-রিশান ফরাজী
বরগুনা ও দক্ষিণ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বরগুনায় প্রকাশ্যে হত্যার শিকার শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সঙ্গে শনিবার জেলগেটে সাক্ষাৎ করেছেন তারা বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর, মা জিনাত জাহান মনি, চাচা মহিউদ্দিন দুলাল ও আবু সলেহ। মাত্র ৪ মিনিট কথা বলতে পেরেছেন জানিয়ে কিশোর যুগান্তরের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘মিন্নি কয়, আব্বু, আমি আর বাঁচব না।’ এছাড়া এদিন আরেক আসামি রাব্বি আকনের সঙ্গে জেলগেটে দেখা করেন তার বাবা কামাল আকন।
আরেক আসামি রিশান ফরাজীর সঙ্গে কারাগারে ছিলেন হাবিব খান নামে এক যুবক। তার কাছে খুনের বিষয়ে অনেক কথাই বলেছেন রিশান। বৃহস্পতিবার জামিনে বেরিয়ে আসা হাবিবের সঙ্গে শনিবার বিকালে কথা হয় যুগান্তরের। রিশান হাবিবকে জানান, ‘ভাই (রিফাত ফরাজী) ডেকেছিল বলেই হত্যায় অংশ নেই।’ আর রিফাত শরীফকে হত্যার সময় তার কোমর ধরে রাখার কারণ হিসেবে রিশান জানায়, ‘মিন্নি বলেছিল, তার (রিফাত শরীফ) কোমরে চাকু আছে।’
সকাল সাড়ে ১০টায় জেলগেটে মিন্নির সঙ্গে দেখা করেন বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর। বিকালে কিশোর যুগান্তরকে বলেন, “আমার মেয়ে খুবই অসুস্থ। মেয়েকে দেখে চিনতে পারিনি। আমার মেয়ের দিক চাওন যায় না। মেয়ের সঙ্গে একটু কথা কমু তাও পারি না। গোয়েন্দারা গায়ের সঙ্গে দাঁড়াইয়া থাকে। মিনিট চারেক কথা কইয়া রাগ করিয়া চইলা আসি। মিন্নি কয়, ‘আব্বু আমি আর বাঁচব না।’ আমার সন্দেহ, আমার মাইয়াডারে জীবিত বাইর করতে পারুম কিনা জানি না।” তিনি বলেন, ‘মিন্নি একেবারে কাহিল হইয়া গেছে। ও বলেছে, তার মাথায় ও বুকে ব্যথা। সারা শরীরে ব্যথা। মিন্নি খুবই দুর্বল।’
মিন্নির মা কথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে কিশোর বলেন, কিভাবে কথা বলবে। গোয়েন্দা দাঁড়াইয়া থাকে। ভাই আমিও অসুস্থ। কেমনে সুস্থ থাকব। আমার জীবনে এমন একটা ধস নামবে। আমার পরিবারটাই তো শেষ। আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেষ। আমি কেমনে বাঁচমু। আমার মেয়েটাকে জেলখানায় কোনো খাবার দিতে পারি না। জেলখানায় টাকা দেই। সেই টাকা দিয়ে জেলখানার ভেতর ক্যান্টিন থেকে কিনে খায়।
মিন্নির কী হয়েছে? জবাবে কিশোর বলেন, ‘আপনারা বোঝেন না। রিমান্ডে নিয়ে কী করে। কেন আমার মেয়ের শরীরে ব্যথা হয়েছে। খালি খালি কি ব্যথা হতে পারে। তিনি বলেন, মিন্নি কিছু আমাকে বলতে চায়। কিন্তু গোয়েন্দা দাঁড়াইয়া থাকে, তাদের জন্য কিছু বলতে পারে না। ’
ভাই ডাক দিলে না গিয়ে পারি : তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়ীয়া গ্রামের আজাহার খানের ছেলে হাবিব খান। এক প্রতারণা মামলায় ৪ দিন বরগুনা কারাগারে ছিলেন। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় রিফাত শরীফ হত্যার আসামি রিশান ফরাজীর সঙ্গে। হাবিব যুগান্তরকে বলেন, আমি রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিদের সঙ্গে কথা বলি। ২২ জুলাই রাতে রিশান শরীফের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে বলে, ‘আমরা রিফাত শরীফকে হত্যা করতে চাইনি। ওকে মারধর করতে চেয়েছি।’
হাবিব রিশানকে বলেন- ভিডিও ফুটেজে দেখলাম, আপনি ওইদিন (২৬ জুন) রিফাত শরীফের কোমর ধরে রেখেছেন। কেন? জবাবে রিশান বলেন, ‘মিন্নি আমাকে বলেছে, রিফাত শরীফের কোমরে চাকু আছে। এ কারণে তার কোমর ধরে রেখেছি।’ চাকু কি পেয়েছেন? ‘না, চাকু পাইনি।’ মিন্নি কি রিফাত শরীফকে মারতে বলেছে? জবাবে রিশান বলেন, ‘সেটা আমি জানি না। আমার ভাই (রিফাত ফরাজী) বলতে পারবে।’
হাবিব খান রিশান ফরাজীকে বলেন, ‘আপনি তো লেখাপড়ায় ভালো। আপনি কেন এমন কাজে গেলেন। তাছাড়া লোকে বলে নয়ন বন্ডকে ক্রোস (ক্রসফায়ার) না দিয়ে আপনার ভাইকে ক্রোস দিলে ভালো হতো।’ তখন রিশান ফরাজী হাবিবকে বলেন, ‘আমার ভাইয়া কারও কথা শোনে না।’ রিশান বলেন, ‘রিমান্ডে পুলিশ আমাকে একটা থাপ্পড়ও দেয়নি।’ তাহলে কেন দোষ স্বীকার করেছেন?
জবাবে রিশান হাবিবকে বলেন, ‘আমি যেটা সত্য সেটা বলেছি।’ আপনি কেন রিফাত শরীফ হত্যায় অংশ নেন? রিশান ফরাজী বলেন, ‘আমার ভাই (রিফাত ফরাজী) আমাকে বলেছে। এ কারণে আমি গেছি। ভাই ডাক দিলে না গিয়ে পারি।’
রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. হুমায়ূন কবির শনিবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, আমরা বাকি আসামিদের গ্রেফতার করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অল্প দিনের মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করব।
বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে ২৬ জুন সকালে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকালে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে মামলা করেন। এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়।
