মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব অনুমোদন
জমি রেজিস্ট্রেশনের ৮ দিনের মধ্যেই নামজারি
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জমি দলিলের সর্বোচ্চ আট দিনের মধ্যে নামজারি হবে। আর দলিল করার আগেই সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি বা এসি ল্যান্ড) কার্যালয় থেকে জমির তথ্য জেনে নেবেন সাবরেজিস্ট্রার। একইভাবে দলিলের পর সেই তথ্য এসি ল্যান্ডকে জানিয়ে দেবেন। তখন এসি ল্যান্ড নামজারি করবেন। জমি রেজিস্ট্রেশন ও নামজারি কার্যক্রম সমন্বয় সাধনের এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ, ইনভেস্টররা একটা বড় রকমের রিলিফ পাবেন। এর ফলে মামলা-মোকদ্দমাও অনেক কমে যাবে। এটা করতে অনেকদিন থেকে কার্যক্রম চলছিল। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন জমির রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন কীভাবে আরও কমফোর্টলি করা যায়, মানুষের হয়রানি না হয়, সময় যাতে কম লাগে। এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে রেজিস্ট্রেশন স্বচ্ছ হবে, নামজারি ও রেকর্ড সংশোধন অটোমেটিক হবে। এছাড়া উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিকানার বিষয়টিও এই সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের (ট্রান্সজেন্ডার) মানুষও যেন জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত না হন তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।’ বর্তমানে ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাবরেজিস্ট্রার অফিস করে। আর ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা অফিস বা সার্কেল ভূমি অফিস জমির নামজারির কাজ করে থাকে। বিষয়টি উল্লেখ করে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দুটি ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা হয় বলে সমন্বয় করা কষ্টসাধ্য ছিল, এজন্য দীর্ঘসূত্রতা ছিল। রেজিস্ট্রেশনে কিছুটা অস্পষ্টতা ছিল, যে কোনো জমি যে কেউ গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারত। আবার মিউটেশনের ক্ষেত্রে ঝামেলা হতো, দলিল পাওয়া যেত না, এলটি নোটিশ বোঝা যেত না, এ কারণে দীর্ঘদিন এগুলো পড়ে থাকত। এখন থেকে সাবরেজিস্ট্রার অফিস এবং এসি ল্যান্ড অফিসের মধ্যে ইন্টার-অপারেটবল সফটওয়্যার থাকবে। বাংলাদেশের সব এসি ল্যান্ড অফিসের চার কোটি ৩০ লাখ রেকর্ডস অব রাইটস অনলাইনে চলে এসেছে। এখন থেকে সাবরেজিস্ট্রার অফিস এবং এসি ল্যান্ড অফিসের একজন আরেকজনের ডাটাবেজে ঢুকতে পারবে। যখন কেউ জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য যাবে, সাবরেজিস্ট্রার আগের মতো সঙ্গে সঙ্গে রেজিস্ট্রি করে দেবে না, অনলাইনে এসি ল্যান্ডের অফিস থেকে রেকর্ড অব রাইটসের স্ট্যাটাস জানবেন। রেসপন্সিভ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেই তথ্য জানানো হবে। তখন এসি ল্যান্ডও জানবেন এই তথ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
এলটি (সম্পত্তি হস্তান্তর) নোটিশ এমনভাবে লেখা ছিল যে অনেক সময় বোঝা যেত না। এখন ছোট ফরম করে দিয়েছি, সেটা পূরণ করলে সঙ্গে সঙ্গে এসি ল্যান্ডের কাছে চলে যাবে। জমি মিউটেশন করতে গেলে দলিল লাগে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এতদিন দুটি দলিল করা হতো, যিনি দলিল করতে যান তিনি একটা পান, আরেকটা থাকে সাবরেজিস্ট্রারের কাছে। মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দিয়েছে এখন থেকে তিনটি দলিল করতে হবে। একটা সাবরেজিস্ট্রার, একটা এনকামমেন্ট এবং আরেকটি এলটি নোটিশের পাশাপাশি এসি ল্যান্ডের কাছে চলে যাবে।
যেহেতু এসি ল্যান্ড দলিল ও এলটি নোটিশ অনলাইনে পেয়ে যাচ্ছেন, এই জমি তার কাছ থেকেই ভেরিফিকেশন করে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে সুতরাং এসি ল্যান্ডের আর কিছুই লাগবে না, ওই সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে সে মিউটেশন সম্পন্ন করে ফেলবে। কাউকে ডাকতে হবে, পরবর্তীতে নোটিশ দেবেন বা সেও যদি এসে দরখাস্ত দেয় তবে সর্বোচ্চ আট দিনের মধ্যে এসি ল্যান্ড মিউটেশন করে দেবেন। দেশের সব জমির রেজিস্ট্রেশন আর্কাইভ করার জন্য সাবরেজিস্ট্রার অফিসে দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি আরও বলেন, ১৭টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা দেখেছি এটা খুব ভালোভাবে কাজ করছে। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে পুরো দেশে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে। নামজারির জন্য আলাদা কোনো আবেদন করতে হবে না। আট দিনের মধ্যে নামজারি হয়ে যাবে। এসবের ম্যানুয়াল কপিও দেয়া হবে। আমরা দেখছি জমির রেজিস্ট্রেশন করলেও অনেকে নামজারি করেন না। সাবরেজিস্ট্রার অফিস থেকে হাতে লেখা যেসব তথ্য সেগুলো খ্বু পরিষ্কার ছিল না। সাবরেজিস্ট্রার নিজেও রেকর্ড অব রাইটস নিয়ে ক্লিয়ার থাকতেন না। আপনি যে কোনো দলিল নিয়ে রেজিট্রেশন করতে চাইলেই করে দিতেন, কিন্তু এখন আর তা পারবে না। রেকর্ডস অব রাইটস দেখে তারপর তফসিলটা সফটওয়্যারের ইনপুট দিতে হবে। আগে ভেরিফিকেশনের কোনো সিস্টেম না থাকায় যে কোনো জমি রেজিস্ট্রেশন করে দিতে পারত।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনেকে রেজিস্ট্রেশন করে নামজারি করলেও রেকর্ড সংশোধন করেন না। এখন এসি ল্যান্ডের দায়িত্ব থাকবে মাসিক প্রতিবেদন দেবে এসিডি রেভিনিউ এবং ইউএনওর কাছে কতটি নামজারি হল এবং কতটি রেকর্ড সংশোধন হল। রেকর্ড সংশোধন করাটা এসি ল্যান্ডের দায়িত্ব হলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা করতেন না। এখন লালকালি দিয়ে এসি ল্যান্ডকে রেকর্ড সংশোধন করতে হবে। আগে দলিল পেত না বলে অনেক সময় (নামজারি না করেও) বেঁচে যেত এখন আর সেটা হবে না। এতদিন নামজারি করলেও ৫০-৬০ শতাংশই রেকর্ড সংশোধন করতেন না।
জমির উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে জমির কে কতটুকু অংশ পাবে সেটাও এই সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও যাতে বাবা-মায়ের জমি থেকে বঞ্চিত না হন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময় পরপর তহশিলদারদের রিপোর্ট দিতে হবে তার এলাকায় কোন লোক মারা গেছেন।
টাকা ছাড়া সাবরেজিস্ট্রার অফিসে কোনো কাজ হয় না- এমন অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এখন সেই স্কোপ নেই। রেকর্ড কারেকশন পর্যন্ত কোনো স্কোপ নেই। করাপশনটা কমিয়ে নিয়ে আসব। ৭৫ শতাংশ দুর্নীতি কমে যাবে। আমাদের হিসাব হল জমিকে কেন্দ্র করেই ৭৫ শতাংশ মামলা হয়। এটা হয়ে গেলে ৫০ শতাংশ মামলা কমে যাবে। মানুষের জীবনযাত্রাও অনেকটা কমফোর্ট হয়ে যাবে। জমিজমা নিয়ে যে একটা টেনশন বা আনক্লিয়ার একটা সিনারিও এটা থেকে তারা মুক্তি পাবেন।’
এছাড়া লবঠকে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট : বাংলাদেশে অগ্রগতি প্রতিবেদন-২০২০’ সম্পর্কে অবহিতকরণ ও ‘বাংলাদেশ গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন’-এর আঞ্চলিক অফিস স্থাপন সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
