বিশ্বকে বলার মতো গল্প দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু: লোটে শেরিং
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেছেন, বিশ্ববাসীকে বলার মতো একটি সুন্দর গল্প বাংলাদেশকে দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, অন্যকে বলার মতো একটি গল্প প্রত্যেক মানুষ ও জাতির থাকা উচিত।
বুধবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। তিনি বলেন, আজ আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং এমন একটি দেশের ৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপন করছি, যার জন্য তিনি পুরো জীবন ব্যয় করেছেন। লোটে শেরিং বলেন, বাংলাদেশকে আমার সেকেন্ড হোম মনে হয়। দুই দেশের মধ্যে অনেক মিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন অনুপ্রেরণাদায়ী নেত্রী। তিনি আমার কাছে মায়ের মতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই দেশের মানুষ সত্যিই ভাগ্যবান-তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নেতা হিসেবে পেয়েছে। আমার বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। তিনি এবং তার দল যে দক্ষতার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। বক্তৃতা শুরুর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে নিজের দেশের একটি স্মারক ডাকটিকিট শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন লোটে শেরিং। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ‘অভাবনীয়’ অগ্রগতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করার পাশাপাশি ভুটানের সঙ্গে ‘চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। জিডিপির বদলে জিএনএইচকে (সম্মিলিত জাতীয় সুখ) গুরুত্ব দেওয়ার যে নীতি ভুটানের রাজা তার দেশকে দিয়েছেন, এর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নীতির মিল খুঁজে পাওয়ার কথা বলেন তিনি। লোটে শেরিং বলেন, ‘উন্নয়নের যে নীতি আমাদের রাজা দিয়েছেন, আমি এটাকে আপনাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রজ্ঞার সঙ্গে খুব ভালোভাবে মেলাতে পারি। যিনি বলেছেন ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বিদ্বেষ নয়’। শেখ মুজিবুর রহমান উদ্ভাবন করেছেন, কারও সঙ্গে বিদ্বেষ নয়। আমাদের রাজা উদ্ভাবন করেছেন, ‘শান্তি ও সৌহার্দ সাফল্যের চাবিকাঠি।’ একই ধরনের নীতির কারণে দুই দেশের মধ্যে যে ‘মমত্বপূর্ণ ও চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘দূর থেকেও আমি বাংলাদেশের মানুষের জন্য তার উদ্বেগ লক্ষ করেছি। তার মতো একজন নেতা পেয়ে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে ধন্য হয়েছে। আমি নিশ্চিত, শেখ মুজিবুর রহমানও পরপার থেকে বাংলাদেশ এবং তার মেয়ে শেখ হাসিনার জন্য গর্বিত।’ মানুষের সুখ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করাকে ভুটানের রাজা সব সময় তার ‘পবিত্র দায়িত্ব’ বিবেচনা করেন। লোটে শেরিং বলেন, ‘রাজা ও বঙ্গবন্ধুর মতো নেতাদের মানবতা ও সহমর্মিতার নীতি পুরো পৃথিবীতে প্রত্যাশিত শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিপুল জনসংখ্যা নিয়েও শেখ হাসিনা ও তার সরকার যেভাবে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করেছে, তা প্রশংসার যোগ্য।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শান্তিপূর্ণ, প্রগতি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশের জন্য তার যে চেতনা, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আমি সম্মান জানাতে এসেছি শেখ হাসিনার প্রতি, যিনি তার বাবার সোনার বাংলা স্বপ্ন ধারণ করে কাজ করে চলেছেন।’
এদিকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও ভুটান। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন, বিশেষ করে বাণিজ্য ও কানেকটিভিটি গুরুত্ব পেয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশের নৌপথের সুবিধা কাজে লাগানোর বিষয়েও তারা একমত হয়েছেন বলে প্রেস সচিব জানান।
তিনি বলেন, সহযোগিতার ভিত্তিতে ভুটানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে দ্বিপক্ষীয় বা ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে উল্লেখ করেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং তার দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশে এককালীন ফুলটার্ম ভিসা এবং মাল্টিপল এন্ট্রি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সঙ্গে একমত পোষণ করে সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটসহ তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ ভুটানকে সহযোগিতা করবে বলে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে জানিয়েছেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ও ভুটান একসঙ্গে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ভুটানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত একেএম শহীদুল করিম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশে ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিঞ্চেন কুয়েন্সি এবং ভুটানের চিফ প্রটোকল অফিসার দাসো উগিয়েন গংফেল। দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, উভয় নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করেছেন এবং দুই দেশের সম্ভাবনাময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিস্তা খসড়া চুক্তির প্রতিটি পাতায় সই করা আছে। কিন্তু এখনো বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সমাধান হয়নি। বাংলাদেশ সরকার তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতকে চাপে রেখেছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, যে খসড়াটি সই করা আছে ভারত সরকার কখনো সেটা বাতিল করে নাই। তিস্তা নিয়ে তারা এখনো একমত যে, এটা হবে। তাদের কিছু অসুবিধার কারণে এখনো চূড়ান্ত করতে পারছে না। তিস্তা নিয়ে আমরা সব সময় আশায় বুক বেঁধে আছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ, কোভিড পজিটিভ হয়েছেন। সেজন্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতা এবং কোভিড থেকে উত্তরণের আশা প্রকাশ করে বার্তা পাঠিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুটানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত একেএম শহীদুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
