Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

লাইভে আত্মহত্যা : বিশিষ্টজনের অভিমত

নিজের জীবন কেড়ে নেওয়া যাবে না

Icon

মেহতাব খানম

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নিজের জীবন কেড়ে নেওয়া যাবে না

প্রথমত সবাইকে এটি অনুধাবন করতে হবে-আমার এই জীবন সৃষ্টিকর্তার দান। সেই জীবন অর্থপূর্ণ না করতে পারলেও নিজের জীবন নিজে কেড়ে নেওয়া যাবে না।

ফেসবুক লাইভে যিনি আত্মহত্যা করেছেন, আমরা জানি না তিনি কোনো ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন কি না। ওনার মধ্যে সবকিছু মিলিয়ে কোনো বিষণ্নতা কাজ করছিল কি না-সেটা জানারও ব্যাপার আছে।

যখন কোনো মানুষ ‘সুইসাইড’ করে, তখন তার জীবনটাকে অর্থহীন মনে হয়। অস্তিত্ববাদীরা বলেন, মানুষ তিনভাবে জীবনের অর্থ খুঁজে পায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো যখন মানুষ শুধু নিজের জন্য না ভেবে সমাজের জন্য, অন্যের জন্যও মঙ্গলজনক কিছু ভাবে। কারও যদি মনে হয় টাকাপয়সা, বাড়ি- গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স-এটাই জীবনের অর্থ, সেটাও হতে পারে। কিন্তু কিছু মানুষ শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের মঙ্গলেও অনেক কিছু করে। এটি মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন আনে। তখন সেই মানুষটির জীবন আরও অর্থপূর্ণ মনে হয়। বাঁচতে ইচ্ছা করে।

মানসিক স্বাস্থ্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, তাদেরই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো, যারা নিজের কষ্ট, রাগ অভিমান, অনুভূতিগুলো সুন্দর করে পরিচালিত করতে পারে এবং একটি অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করে।

তারপরই বলা হয়েছে যে মানুষ তার সমাজ বা কমিউনিটির জন্য কিছু করে, শুধু নিজের কথা যে ভাবে না-তারই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো। যখন এগুলোর সব কারও হারিয়ে যায়, জীবনের কোনো অর্থ খুুঁজে পায় না, চলতে চলতে মানুষের কাছ থেকে অনেক আঘাত আসে, প্রিয় মানুষেরা মুখ ফিরিয়ে নেয় কিংবা কেউ তাকে মূল্যায়ন করে না, তখন আস্তে আস্তে সে মানুষটি মনে করে তার জীবন অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে।

অনেকে আবার একাকিত্ব বোধ করে। এটি দুই ধরনের। কারও হয়তো দেখাশোনার কেউ নেই বা চারপাশে কাউকে পাচ্ছে না। আবার অনেকে বলে, আমার ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়। শূন্যতা অনুভব করে।

শিশু যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন একজন মায়ের শরীরের সঙ্গে গর্ভের শিশুটি আটকানো থাকে। আম্বেলিকাল কর্ড কেটে মায়ের কাছ থেকে শিশুকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। মায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে আমাদের সব সময় কারও না কারও সঙ্গে যুক্ত হতে খুব ইচ্ছে করে।

কেউ আমার হাতটা ধরবে, মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে, চোখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করাবে যে তোমার বেঁচে থাকার অর্থ আছে। এই জিনিসগুলো আমরা চারপাশের মানুষের কাছ থেকে খুব খুঁজি। সেটা যখন হারিয়ে যায়, কারও কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়া যায় না, সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না, তখনই সমস্যা হয়। আরেকটি বড় ভূমিকা রাখে পার্টনারশিপ।

আমরা জানি না আত্মহত্যা করা মানুষটির জীবনে পার্টনারশিপ কেমন ছিল। অন্যকিছু মানুষ আমাকে ভালোবাসবে, শ্রদ্ধা করবে, আমাকে মনে করবে-এ বিষয়গুলো মনটাকে ভালো রাখে। মন ভালো না থাকলেই মানুষ আত্মহত্যার মতো জায়গায় চলে যায়। ওনার মনে হয়তো অনেক ক্ষোভ, রাগ, কষ্ট জমেছিল-আমি সেটা জানি না। মানুষের জীবনে স্পর্শও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে অনেক ক্ষত থাকে। মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালো স্পর্শ ‘লাভ হরমন’ সিক্রেশন করে। এটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : মেহতাব খানম, অনারারি অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অভিমত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম