Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর

ভাষা আন্দোলনই স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়েছিল: চৌধুরী আব্দুল হাই

Icon

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভাষা আন্দোলনই স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়েছিল: চৌধুরী আব্দুল হাই

ভাষা আন্দোলনই মূলত বাঙালির স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়েছিল। অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এ সময়ই মূলত স্বাধীনতার বীজ বপন হয়। এ কথা বলেছেন ভাষাসৈনিক অ্যাডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই। হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। পড়তেন অষ্টম শ্রেণিতে। এ শাখার ক্যাপ্টেন ছিলেন।

সে সুবাদেই নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি হয়। আন্দোলন-সংগ্রামও তাকে যেন ভেতর থেকেই টানত। তাই কিশোর বয়সেই মাতৃভাষার টানে ঝাঁপিয়ে পড়েন আন্দোলনে। নেতৃত্বের ভারও তুলে নেন নিজের কাঁধে। চষে বেড়ান পুরো জেলার (তৎকালীন মহকুমা) প্রতিটি স্কুল। ছাত্রদের নিয়ে করেন কমিটি।

সংগ্রামী এ মানুষটির জন্ম ১৯৩৯ সালে। জেলা শহরতলির বড় বহুলা গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৫ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ৩য়। হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে আইএ ও বিএ পাশ করেন বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এলএলবি পাশ করার পর পাকিস্তান সরকারের আমলে মুন্সেফ পদে নিয়োগ পান। পদায়ন হয় কুমিল্লায়। তখন তিনি পত্র দিয়ে চাকরি করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পরে হবিগঞ্জে আইন পেশায় যোগ দেন। ইতোমধ্যে এ পেশায় প্রায় ৫৫ বছর অতিবাহিত করেছেন তিনি। তার দুই মেয়ে ও একমাত্র ছেলে আমেরিকাপ্রবাসী। তিনিও সন্তানদের কাছ থেকে দেশে ফিরেছেন জানুয়ারির শুরুর দিকে। ১৯৮৬ সালে তিনি ন্যাপ (মোজাফফর) থেকে হবিগঞ্জ-লাখাই আসনে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত।

যুগান্তরকে চৌধুরী আব্দুল হাই জানান, তিনি অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। তখন দেশব্যাপী ছাত্রদের সংগঠিত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের কয়েকজন ছাত্র হবিগঞ্জে আসেন। তিনি ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়ার সুবাদে তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

তাদের কয়েকজনকে নিয়ে কোর্ট স্টেশনে বৈঠক করেন। ভাষা আন্দোলনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। আন্দোলনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় তৎকালীন বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ছাত্রনেতা (মরহুম) সৈয়দ শফিক উদ্দিন আহমেদকে। আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান চৌধুরী আব্দুল হাই।

এরপর থেকেই তারা চষে বেড়ান বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন মহকুমা) প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ছাত্রদের নিয়ে আন্দোলনের জন্য কমিটি গঠন করেন। প্রতিটি স্থানেই অভূতপূর্ব সাড়া পান তারা। তাদের ডাকে আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হন সর্বস্তরের মানুষ।

তিনি বলেন, তখন অনেকেই বলতেন মাওলানারা আমাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে থাকবেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল পুরো উলটো। প্রকৃতপক্ষে তারাও আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। আমাদের পরামর্শ দিতেন। সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। মানুষের মধ্যে একটা জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল। এ আন্দোলনই মূলত স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে চৌধুরী আব্দুল হাই এখন নিজেকে ধন্য মনে করছেন। তিনি বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দেশ এখন বেশ ভালোই চলছে। আমারও বেশ ভালো লাগে। নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশকে জানতে হবে। ইতিহাস জানতে হবে।

দেশকে ভালোবাসতে হবে। বাংলাকে ভালোবাসতে হবে। দেশের যা দুর্বলতা আছে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই এ দেশ সত্যিকারের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে। ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের উদ্দেশ্য সার্থক হবে।

চেতনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম