Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেল গৃহবধূর

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেল গৃহবধূর

রাজধানীতে স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন এক গৃহবধূ। নিহতের নাম নাসরিন খানম (২০)। আহত হয়েছেন স্বামী মো. শিপন (২৩)। খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ায় শুক্রবার রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই গাড়ি জব্দসহ চালককে আটক করে পুলিশ। পরে নিহত নারীর বাবার জিম্মায় চালককে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এদিকে রাজধানীতে বেপরোয়া ময়লার গাড়ি প্রায়ই কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ। শুক্রবারের দুর্ঘটনাসহ গত পাঁচ মাসে দুই সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় মারা গেছেন পাঁচজন।

খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক সোনিয়া পারভীন যুগান্তরকে বলেন, তিলপাপাড়া ১৩ নম্বর রোডে লাকী ফার্মেসির সামনে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেপরোয়া গতির ময়লার গাড়ি একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী নারী মারা যান এবং তার স্বামী আহত হন। পরে পথচারীরা তাদের খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন।

একজন পথচারী যুগান্তরকে বলেন, ময়লার গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলটি সড়কে কাত হয়ে যায়। এ সময় শিপন বাঁদিকে পড়ে যান। আর তার স্ত্রী নাসরিন ছিটকে ডানদিকে পড়ে যান। তার মাথা ময়লার গাড়ির চাকার নিচে চলে যায়।

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুকুল আলম শনিবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, লাকী ফার্মেসির সামনের প্রধান সড়ক দিয়ে দ্রুতবেগে যাচ্ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি। অন্যদিকে পাশের গলিপথ দিয়ে এসে শিপনের মোটরসাইকেলটি সড়কে উঠলে ধাক্কা দেয় সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িটি। এ সময় মোটরসাইকেল থেকে শিপন ও তার স্ত্রী ছিটকে পড়ে যান। গুরুতর অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে পথচারীরা খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক নাসরিনকে মৃত ঘোষণা করেন। ওসি বলেন, ময়লার গাড়িসহ চালক বকুলকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয়। এ বিষয়ে মামলা নিতে অনেক চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নিহতের বাবা আবু বকর সিদ্দিক ও স্বামী শিপন কোনোভাবেই ময়লার গাড়িচালকের বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজি হননি। তারা বিনা ময়নাতদন্তে লাশ নিয়ে যেতে চান। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে রাতে নিহত নাসরিন খানমের বাবা আবু বকর সিদ্দিকের জিম্মায় ময়লার গাড়ির চালক বকুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর বিনা ময়নাতদন্তে নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিহতের স্বামী শিপন শনিবার টেলিফোনে জানান, তিনি হাত, পা এবং কোমরে আঘাত পেয়েছেন। শিপন একটি লেদ কারখানায় চাকরি করেন। আড়াই বছর আগে নাসরিন খানমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই পূর্ব গোড়ানের বাসা থেকে খিলগাঁও তালতলা মার্কেট এলাকায় ঘুরতে আসি। শুক্রবার রাতেও স্ত্রী নাসরিনকে নিয়ে তালতলা মার্কেটে আসি। সেখানে ফুসকা, চটপটি খেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসায় ফিরছিলাম। পথে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় আমার স্ত্রী মারা গেল। মামলা করেননি কেন জানতে চাইলে শিপন বলেন, যেহেতু মানুষই বেঁচে নেই; তাহলে ঝামেলায় জড়িয়ে কী হবে। মামলা করলে তো আমার স্ত্রী আর ফিরে আসবে না। তাই মামলার মতো ঝামেলায় আমরা যেতে চাইনি। তিনি জানান, নাসরিনের লাশ নিয়ে তার শ্বশুর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর রামগঞ্জে গেছেন। সেখানেই তার দাফন করা হবে। তবে শ্বশুর আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো নম্বর দিতে চাননি শিপন। তিনি জানান, তার বাড়ি নোয়াখালীতে। তিনি পরিবার নিয়ে পূর্ব গোড়ানে রাহিমা ভিলায় ভাড়া থাকেন।

এর আগে ২২ জানুয়ারি ভোরে মহাখালীতে ফ্লাইওভারের নিচে উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান একই সিটি করপোরেশনের এক নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মী। গত বছরের ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হয়েছিলেন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান। এর একদিন পর পান্থপথে উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান আহসান কবীর নামে এক ব্যবসায়ী। এরপর ২৩ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকায় ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত হন স্বপন কুমার সরকার নামে এক বৃদ্ধ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম