রমজানুল মোবারক
তাকওয়া কতটুকু অর্জন করতে পারলাম
মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রমজানুল মোবারকের আজ অষ্টম দিবস। আত্মবিশ্লেষণ করি, আমি কতটা মুত্তাকি হতে পারলাম! তাকওয়ার মাধ্যমে মানুষ সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে। সুরা হুজরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, হে মানুষ, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন নর ও একজন নারী থেকে এবং তোমাদের জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি এজন্য যে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হবে। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে মুত্তাকি ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত।
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহর কাছে বান্দার মর্যাদার মাপকাঠি তার তাকওয়া। যার চরিত্রে তাকওয়ার মাত্রা যেমন, আল্লাহতায়ালার কাছে তার মর্যাদা তেমন। কুরআন মজিদের শুরুতে বলা হয়েছে, এই কিতাবে কোনো সন্দেহ নেই। এ কিতাব পথনির্দেশক মুত্তাকিদের জন্য, যারা অদৃশ্যে ইমান রাখে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদের যা দিয়েছি তা থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করে। আর যারা ইমান রাখে আপনার প্রতি যা নাজিল করা হয়েছে এবং আপনার আগে যা নাজিল করা হয়েছে তার প্রতি। আর তারা আখিরাতে বিশ্বাস রাখে।
এখানে তাকওয়ার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি মুত্তাকিদের মৌলিক গুণাবলি উল্লেখ করা হয়েছে। তাকওয়া শব্দের অর্থ সাবধানতা ও সংযম। কর্তব্য পালন ও বর্জনীয় পরিহারের সমষ্টিই তাকওয়া। সাধারণভাবে তাকওয়া শব্দের অর্থ করা হয় আল্লাহর ভয়। মহান রাব্বুল আলামিনের সামনে একদিন সবাইকে হাজির হতে হবে। দুনিয়াবি জীবনের প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণের হিসাব দিতে হবে। এ বিশ্বাস ও ভয়ই মানুষকে সাবধানি ও সংযমী করে তোলে।
তাকওয়ার মর্ম বর্ণনায় হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-এর একটি উক্তি অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। হজরত ওমর ফারুক (রা.) তাকে তাকওয়ার মর্ম বর্ণনার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, আমিরুল মুমিনিন, আপনি কি কখনো কাঁটা ঝোপের মধ্য দিয়ে পথ চলেছেন? সেখানে যেমন আপনাকে সব সময় সাবধানে নিজের শরীর ও কাপড় রক্ষা করে চলতে হয়। তাকওয়া ঠিক তেমনই সাবধানি আচরণ ও জীবনযাপনের নাম। বস্তুত আল্লাহর কাছে বান্দার জবাবদিহির অনুভূতিই তাকওয়া।
ইসলামি শরিয়তে বান্দার করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তেমনই এসবের গুরুত্ব ও মাত্রার পর্যায়ক্রম নির্ণীত আছে। করণীয়গুলোকে আবশ্যকতার মাত্রার পর্যায়ভেদ অনুযায়ী ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব পরিভাষায় প্রকাশ করা হয়। আর বর্জনীয়গুলোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় হারাম, মাকরুহ তাহরিমি, মাকরুহ তানজিহি ইত্যাদি পরিভাষা। কর্তব্য পালন ও বর্জনীয় পরিহারের মাত্রা অনুযায়ী তাকওয়ার স্তর বিন্যস্ত করা হয়।
মুসলিম মনীষীরা তাকওয়ার তিনটি স্তর বর্ণনা করেন প্রাথমিক, মধ্যম ও উচ্চ। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য যা অবশ্যপালনীয় অর্থাৎ ফরজ ও ওয়াজিব, তা পালন করা এবং যা অবশ্য বর্জনীয় অর্থাৎ হারাম ও মাকরুহ তাহরিমি, তা বর্জন করা তাকওয়ার প্রাথমিক পর্যায়। তাকওয়ার ন্যূনতম পর্যায় হারাম ও মাকরুহ তাহরিমি বর্জন এবং ফরজ ও ওয়াজিব আদায় করা। কারও মধ্যে কমপক্ষে এতটুকু থাকলেও তিনি মুত্তাকি। বলা যায়, একজন মুমিনের জন্য তাকওয়ার এ স্তরটি আবশ্যিক। নিম্নতম এ তাকওয়া নাজাতের জন্যও শর্ত। ফরজ ও ওয়াজিবের পাশাপাশি সুন্নতগুলো পালন এবং হারাম ও মাকরুহ তাহরিমির পাশাপাশি মাকরুহ তানজিহ বর্জন তাকওয়ার মধ্যম স্তর। আর মুস্তাহাবগুলো পালনে এবং সন্দেহজনক কাজগুলো বর্জনে সচেষ্ট থাকা তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তর।
মহানবি (সা.) এরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি দূষণীয় কাজে জড়িত হওয়ার আশঙ্কায় নির্দোষ কাজগুলো বর্জন না করা পর্যন্ত তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হতে পারে না। অতএব, শুধু নিষিদ্ধ উক্তি, আচরণ ও উপভোগ থেকে নিবৃত্ত থাকা নয়, সন্দেহজনক বিষয়গুলোও এড়িয়ে চলা একজন মুমিন বান্দার কর্তব্য। এভাবেই উন্নত হতে পারে তাকওয়ার স্তর। সুতরাং পবিত্র মাহে রমজানে সিয়াম আদায়ের পাশাপাশি তাকওয়ার স্তর উন্নত করতে সচেষ্ট থাকা আমাদের প্রয়োজন।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি
