দাতাদের ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি
ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমাবেন না
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সাহায্য কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে ইউএনএইচসিআর। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, ইউক্রেন ও আফগানিস্তানের পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের সাহায্য নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। দাতাদের উচিত হবে না এই সহায়তা কমানো। ঝুঁকি পরিহারে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।
বাংলাদেশে পাঁচ দিনের সফর শেষে বুধবার রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। গ্র্যান্ডি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের। এই সংকটের সমাধান মিয়ানমারেই নিহিত। তবে সবাইকে বাস্তব চিন্তা করতে হবে। রাতারাতি রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবে না। ধৈর্য ধারণ করতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করবে।
শরণার্থীসংক্রান্ত জাতিসংঘ হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির এটি পঞ্চমবার বাংলাদেশ সফর। এবার সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কক্সবাজার ও ভাসানচর সফর করেছেন। ঢাকায় বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ভাসানচর সফর করে খুবই খুশি জানিয়ে গ্র্যান্ডি বলেন, এটি খুবই কৌতূহলোদ্দীপক এবং নতুন অভিজ্ঞতা। ভাসানচরে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। অনেক বাংলাদেশি এনজিও সেখানে কাজ করছে। ভাসানচরে আমাদের উপস্থিতি জোরদার করব। তবে সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্ন দশা কমাতে হবে। তাদের স্থলভাগের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নৌযানের সেবা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, জীবিকায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। ভাসানচরের বিষয়ে দাতাদের আগ্রহ রয়েছে। দাতারা অবশ্য টেকসই উপায়ে সহায়তা করতে চায়। তবে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের অবস্থান অবশ্যই অস্থায়ী। তাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ফিরে যাওয়াই স্থায়ী সমাধান।
এক প্রশ্নের জবাবে গ্র্যান্ডি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন এখনো প্রাসঙ্গিক। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কফি আনান কমিশনের সুপারিশে রয়েছে। ওই কমিশন মিয়ানমারের সরকারের গঠিত। মিয়ানমারের প্রতিনিধিও এতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। যদিও কোভিড পরিস্থিতি এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধার সম্মুখীন হয়েছে। তবুও রোহিঙ্গা সংকট একটি মানবিক বিষয় হওয়ায় এ নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমরা এ নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব। ধৈর্য হারালে চলবে না। রাতারাতি সমাধান আশা করা যায় না। সংকট সমাধানে কখনো কখনো মানবিক কূটনীতি অধিক কার্যকর।
ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে ঢাকার উদ্বেগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রধান বলেন, ভারত থেকে হাজার খানেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে শুনেছি। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দেশে আছে। ভারতে ৪০ হাজার, মালয়েশিয়ায় দুই লাখ রোহিঙ্গা আছেন। তবে বাংলাদেশ যে বিরাট বোঝা নিয়েছে; সেই তুলনায় এটা অনেক কম।
তাই বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আসিয়ানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মিয়ানমার আসিয়ানের সদস্য। এছাড়া ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াকে ভূমিকা রাখতে হবে।
নিরাপত্তাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গা একত্রে থাকলে নিরাপত্তা সমস্যা থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাধারণ রোহিঙ্গারা ভয়ে থাকেন বিশেষ করে রাতে অপরাধী ও মাদক কারবারিরা নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করে। রোহিঙ্গারা যাতে আইন মেনে চলেন, সে ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। অপরাধ বন্ধে নজরদারি বাড়াতে হবে। তবে নিরাপত্তাসংক্রান্ত সবকিছু দেখা সরকারের দায়িত্ব।
