যুগান্তরকে মোহাম্মদ নূরুল আফসার
সর্বাধুনিক প্রযুক্তিই কনকা ফ্রিজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের ঐতিহ্যবাহী ইলেকট্রনিক্স পণ্যের প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রো মার্ট গ্রুপের হাত ধরে বিশ্বখ্যাত কনকা ফ্রিজের যাত্রা এ দেশে শুরু হয় ১৯৮০ সালে। এই ফ্রিজের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী মূল্যই ইলেকট্রো মার্টকে ট্রেডিং ব্যবসা থেকে উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে সহায়তা করেছে।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও প্রতিনিয়ত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় এই ফ্রিজকে এনে দিয়েছে বাজার খ্যাতি ও বিশেষ সুনাম। যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান ইলেকট্রো মার্ট গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আফসার। এ সময় তিনি রেফ্রিজারেটর শিল্পের ভবিষ্যৎ, বিদ্যমান সমস্যা ও সমাধানে করণীয়সহ নানা দিক তুলে ধরেন।
যুগান্তর : বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে বছরে ফ্রিজের চাহিদা কত?
নূরুল আফসার : বিশাল জনগোষ্ঠীর এদেশের ফ্রিজের বাজার বছরে ২৫ লক্ষাধিক। আমরা চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশের অধিক বিক্রয়ের মাধ্যমে বৃহৎ স্থান দখল করে আছি।
যুগান্তর : গত তিন বছর সার্বিকভাবে এ খাতের প্রবৃদ্ধি কেমন ছিল। এ বছর আপনারা কেমন প্রবৃদ্ধি আশা করছেন?
নূরুল আফসার : বিগত তিন বছর করোনা প্রভাবে ফ্রিজের চাহিদার প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম ছিল। আমরা আশা করি এ বছর প্রবৃদ্ধি হার ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
যুগান্তর : আপনাদের মার্কেট শেয়ার কতটুকু? গত বছর অভ্যন্তরীণ বাজারে আপনাদের প্রবৃদ্ধি কেমন হয়েছে?
নূরুল আফসার : আমরা বাজার চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশের বেশি বিক্রির মাধ্যমে বৃহৎ স্থান দখল করে আছি। গত বছর অভ্যন্তরীণ বাজারে আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১০-১২ শতাংশ।
যুগান্তর : বাংলাদেশ থেকে ফ্রিজ রপ্তানির সম্ভাবনা কেমন? এ বাজার নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
নূরুল আফসার : আমরা আশা করি আগামী দশ বছরে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দ্বিগুণ হবে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে মানুষ এখন জীবনযাপনে আধুনিকতার ছোঁয়া নিতে চাইছে। দেশে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন হওয়ায় বিদ্যুৎচালিত গৃহস্থালি পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে।
অনেক পণ্যই এখন আর বিলাসিতা নয় বরং নিত্যপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। সেই পরিস্থিতিতে ভালোমানের পণ্য গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতেই আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং আরও সম্ভাবনা রয়েছে।
সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করার লক্ষ্য থেকেই আমরা কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) কাজে চীনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের।
যুগান্তর : প্রতিযোগিতামূলক এ বাজারে চ্যালেঞ্জগুলো কী কী? সরকারের কাছে কোন ধরনের নীতি সহায়তা আশা করেন?
নূরুল আফসার : ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। দেশে এখন অনেক রেফ্রিজারেটর শিল্পকারখানা স্থাপিত হয়েছে এবং সরকার প্রতিবছর বাজেটে এই খাতে পরিবর্তন আনছে, ফলে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত গ্রহণে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। দেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভ্যাট ছাড় আছে।
আর আমরা কারখানা করেছি মাত্র ২০১৮ সালে। তাই আমাদের আবেদন, সরকার যেন ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই ভ্যাট ছাড় অব্যাহত রাখে। শ্রমিক সংকটের কারণে চীনসহ ইউরোপের দেশগুলো এই শিল্পে সুবিধা করতে পারছে না। ফলে এ সুবিধাটা নেওয়ার সুযোগ আমাদের রয়েছে।
যুগান্তর : দেশের ফ্রিজ শিল্পে বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে, এ বাজারে বাংলাদেশের বৈশ্বিক সম্ভাবনা কেমন দেখছেন? আগামী দুই বছরে নিজেদের কোথায় দেখতে চান?
নূরুল আফসার : দেশে ফ্রিজ শিল্পে বাংলাদেশ অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে। চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশের অধিক দেশে উৎপাদিত হয় এবং সামান্য পরিমাণ ফ্রিজ আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হব বলে আশাবাদী।
যুগান্তর : নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও গবেষণায় আপনারা কেমন বিনিয়োগ করছেন?
নূরুল আফসার : নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও গবেষণায় আমাদের যথেষ্ট বিনিয়োগ রয়েছে। গ্রাহকদের চাহিদা ও নিত্যনতুন প্রযুক্তি আনয়নে আমাদের চীনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) কাজ রয়েছে।
যুগান্তর : ফ্রিজের তথা ইলেকট্রনিক শিল্প এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার কী সহায়তা দিতে পারে?
নূরুল আফসার : দেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভ্যাট ছাড় আছে। আমাদের আবেদন, সরকার যেন ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই ভ্যাট ছাড় অব্যাহত রাখে। তাতে আমরা দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নিতে পারি। শ্রমিক সংকটের কারণে চীনসহ ইউরোপের দেশগুলো এই শিল্পে সুবিধা করতে পারছে না। ফলে এ সুবিধাটা নেওয়ার সুযোগ আমাদের রয়েছে।
যুগান্তর : আপনাদের ফ্রিজের বিশেষত্ব কী? বাজারে আপনাদের কতগুলো পণ্য আছে?
নূরুল আফসার : কনকা ফ্রিজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় একে এনে দিয়েছে বাজার খ্যাতি ও বিশেষ সুনাম এবং অন্যান্য ফ্রিজ থেকে আলাদা।
কনকা ফ্রিজের বিশেষত্ব হলো- ক) ব্লু জোন অ্যান্ড ভিটামিন ফ্রেশ টেকনোলজি : ফলমূল এবং সবজি জাতীয় খাবারগুলো বাগানে যেরকম সতেজ থাকে এবং ভিটামিন মিনারেল সব ঠিক রাখে। ব্লু জোন ভিটামিন ফ্রেশ টেকনোলজি ফ্রিজের ভেতর ও ফলমূল এবং সবজি জাতীয় খাবারগুলোকে রাখবে ফ্রেশ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ। ফলমূল এবং সবজির গুণাগুণও ঠিক রাখবে দীর্ঘদিন।
খ) অ্যাকটিভ কার্বন ডিয়োডোরাইজার : আমরা সচরাচর একটি ফ্রিজের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের খাবার স্টোরেজ করি। যেমন ডিম, মাখন, ছানা, রান্না করা খাবার এবং বেবিদের খাবার। একটি খাবারের স্বাদ-গন্ধ একেক ধরনের, ফ্রিজের মধ্য খাবার রাখার পর একটি খাবারের গন্ধ অন্য একটি খাবারে মিশ্রত হয়ে যায়। কনকা ফ্রিজ এ অ্যাক্টিভ কার্বন ডিয়োডোরাইজার টেকনোলজি থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ডিঅ্যাকটিভ করে দেয়, যার কারণে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ফ্রিজে খাবারের স্বাদ-গন্ধ একই রকম থাকে এবং একটি খাবারের গন্ধ অন্য খাবারে মিশ্রিত হতে দেয় না।
গ) হিউমিডিটি কন্ট্রোলার : কনকা ফ্রিজের সবজি বক্স হিউমিডিটি কন্ট্রোলার নামক একটি টেকনোলজি আছে যার কারণে সবজিগুলোকে সতেজ রাখার জন্য যতটুকু হিউমিডিটি দরকার ততটুকুই প্রবেশ করে। এ কারণে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সবজিগুলো সতেজ থাকে।
ঘ) অ্যান্টিফাঙ্গাল ডোর গ্যাস্কেট : কনকা ফ্রিজে রয়েছে ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড মানের অ্যান্টিফাঙ্গাল ডোর গ্যাস্কেট যার কারণে বাইরের কোনো ফাঙ্গাল ও জীবাণু ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। এতে করে কুলিং লস হয় না।
ঙ) ডিজিটাল ডিসপ্লে টেকনোলজি : কনকা ফ্রিজে রয়েছে ডিজিটাল ডিসপ্লে টেকনোলজি ও ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল সিস্টেম যার মাধ্যমে বাইরে থেকে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
চ) ডিজিটাল ডিসপ্লে ইনভার্টার টেকনোলজি : কনকা ফ্রিজে রয়েছে ডিজিটাল ডিসপ্লে ইনভার্টার টেকনোলজির কারণে ৭১ ভাগ পর্যন্ত ইলেকট্রিসিটি সেভ করে।
ছ) কনকা ডিপ ফ্রিজার অটো টেকনোলজি : কনকা ডিপ ফ্রিজারে রয়েছে অটো কনভারশন টেকনোলজি যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী যে কোনো সময় ডিপ ফ্রিজারকে নরমাল রেফ্রিজারেটরের ন্যায় কনভারশন করে ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া সুপার কোল মোড ব্যবহার করে অধিক বেশি পরিমাণ খাবারকে মাত্র ১৫ মিনিটে আইস করে খাবারের গুণ ও মান সংরক্ষণ করে।
যুগান্তর : আপনাদের কারখানা কোথায়? মোট কতজন কর্মী আছে? মান নিশ্চিত করতে আপনারা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?
নূরুল আফসার : আমাদের কারখানা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবিস্থত। এখন প্রায় সাত হাজার লোকের কর্মসংস্থানকারী একটি বৃহৎ ইলেকট্রনিক্স পণ্যের উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিনিয়ত চায়না বাংলাদেশ যৌথ সহযোগিতায় বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি।
যুগান্তর : আপনাদের নতুন পণ্য কি এসেছে? ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
নূরুল আফসার : আমাদের ৭০টির অধিক মডেলের ফ্রিজ রয়েছে। সম্প্রতি ৮টির মতো নতুন ডিজাইন ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ফ্রিজ বাজারে এসেছে। বিশ্বখ্যাত দুটি ব্র্যান্ডের পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদনের লক্ষ্যে বিশাল বিনিয়োগ ব্যয়ে রাজধানীর পাশে সোনারগাঁয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (টিআইআইএল) নামে ইলিকট্রনিক্স প্ল্যান্ট। পাশাপাশি বিদেশি টেকনোলজি ব্যবহার করে দেশেও হাইকো নামে একটি লোকাল ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করা হয়েছে।
যুগান্তর : আগামী ৫ বছরে কোম্পানিকে কোথায় দেখতে চান?
নূরুল আফসার : ২০২৭ সালের মধ্যে আরও বিশাল বিনিয়োগ করে অন্তত ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ইলেকট্রো মার্ট গ্রুপ কাজ করছে, যা একটি রপ্তানিমুখী ইলেকট্রনিক্স শিল্পপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হবে বলে আশাবাদী।
