আজ পবিত্র হজ
আরাফাতের ময়দান লাব্বাইক ধ্বনিতে হবে মুখর
তানজিল আমির
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজ পবিত্র হজ। আরাফাতের ময়দানে থাকার দিন। সেলাইবিহীন শুভ্র কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারাবিশ্ব থেকে সমবেত মুসলমানরা আজ সেখানে থাকবেন। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার’-এ ধ্বনিতে আজ মুখর থাকবে আরাফাতের ময়দান।
মিনায় মুসল্লিদের জড়ো হওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ৮ জিলহজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও বুধবার রাতেই হাজিরা মিনার তাঁবুতে পৌঁছে যান। হজযাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় সৌদি মুয়াল্লিমরা আগের রাত থেকেই হজযাত্রীদের তাঁবুর শহর মিনায় নেওয়া শুরু করেন। হজযাত্রীরা বুধবার এশার পর থেকে মক্কার নিজ নিজ আবাসন থেকে ইহরাম বেঁধে মিনায় রওয়ানা হন।
বৃহস্পতিবার সারাদিন মিনার তাঁবুতে অবস্থান করেছেন হাজিরা। তাঁবুর এই শহর মুখরিত হয়ে উঠেছিল ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে। সারা দিন ও রাত তারা মিনায় কাটান ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় মশগুল ছিলেন জিকির ও তালবিয়াতে।
নামাজ আদায় করেন জামাতের সঙ্গে। সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিয়ে আত্মশুদ্ধি, মাগফিরাত ও রহমত চাইতে আসা এই মুসলমানরা আজ জড়ো হবেন আরাফাতের ময়দানে, যাকে হজের মূল অনুষ্ঠান বলা হয়।
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর হজে সৌদি আরবের বাইরে কেউ অংশ নিতে পারেননি। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবার বড় পরিসরে হজ পালনের সুযোগ দিচ্ছে সৌদি সরকার। এ বছর বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাখ মুসলিম হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬০ হাজার হজযাত্রী ইতোমধ্যে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
পবিত্র হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। আর্থিকভাবে সামর্থ্য ও শারীরিকভাবে সক্ষম পুরুষ ও নারীর জন্য তা ফরজ। এবার যারা হজে এসেছেন তারা আজ সূর্যোদয়ের পর সমবেত হবেন মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বিদায় হজের স্মৃতিজড়িত আরাফাতের ময়দানে।
তিন দিকে পাহাড়ঘেরা প্রায় চার বর্গমাইল আয়তনের এ বিশাল সমতল মাঠের একপ্রান্তে জাবালে রহমত। অর্থাৎ রহমতের পাহাড়। ১৪শ’ বছরের বেশি সময় আগে এখানেই ইসলামের শেষনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এ পাহাড়টিকে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলে থাকেন। কথিত আছে, হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এই আরাফাতে এসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। শুক্রবার সূর্যোদয়ের পর হজযাত্রীদের আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতেই নিয়ে যান মুয়াল্লিমের দায়িত্বশীলরা। সেখানে আগে পৌঁছে গেলে ফজর এবং জোহর-আসর আদায় করবেন আরাফাতের ময়দানে। সেখানে উপস্থিত না হলে হজ পূর্ণ হয় না। তাই হজে এসে যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আজ আনা হবে এখানে। ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হলো হজ।
এখানে মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেবেন খতিব। এ বছর আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা দেবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম আল-ঈসা। একই সঙ্গে মসজিদে নামিরাতে নামাজও পড়াবেন তিনি। এ বছর হজের আরবি খুতবা বাংলাসহ মোট ১৪টি ভাষায় শোনা যাবে। খুতবার বাংলা অনুবাদক হিসাবে মনোনীত হয়েছেন দুজন। তারা হলেন-মোহাম্মদ শোয়াইব রশীদ ও তার সহকারী খলিলুর রহমান। মোহাম্মদ শোয়াইবের বাড়ি চট্টগ্রামের বাশখালী উপজেলায়। তিনি মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদিসের ওপর পিএইচডি করছেন। তিনি আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের শিক্ষক। এ ছাড়া তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব। খলিলুর রহমান মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে পিএইচডি করেছেন।
সারা দিন আরাফাতে অবস্থানের পর বিকালে মুসল্লিরা পা বাড়াবেন মিনার পথে। প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন তারা। সেখানেই রাতে খোলা আকাশের নিচে থাকবেন। এটি ওয়াজিব। এ সময়েই তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাথর সংগ্রহ করবেন, যা মিনার জামারায় প্রতীকী শয়তানকে উদ্দেশ করে ছোড়া হবে। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর হাজিরা মিনায় নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। সেখানে বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কুরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে (ন্যাড়া) গোসল করবেন।
এরপর পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। এটি হজের আরেকটি ফরজ। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাঈ (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। মিনায় তারা যত দিন থাকবেন তত দিন প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারবেন। সবশেষে কাবা শরিফ বিদায়ি তাওয়াফের (ওয়াজিব) মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিনায় ৫৫০ শয্যার চারটি হাসপাতাল হজযাত্রীদের সেবায় প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া ১০০টি ছোট ৭৫টি বড় অ্যাম্বুলেন্স হাজীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। এবার অসুস্থ মুসল্লিদের সেবায় রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহার হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি।
আজ কাবা শরিফে গিলাফ পরানো হবে : আজ পবিত্র কাবা শরিফে পরানো হবে নতুন গিলাফ। প্রতি বছর (৯ জিলহজ) হজের দিন হাজিরা সব আরাফাতের ময়দানে থাকেন এবং মসজিদে হারামে মুসল্লির সংখ্যাও থাকে কম। হাজিরা আরাফাত থেকে ফিরে এসে কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পান। নতুন গিলাফ পরানোর সময় পুরোনোটি সরিয়ে ফেলা হয়। পুরোনো গিলাফ কেটে মুসলিম দেশের সরকারপ্রধানদের উপহার দেওয়া হয়।
