পবিত্র ঈদুল আজহা
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপিত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে রোববার উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এদিন ঈদগাহ আর মসজিদে মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজে অংশ নিয়েছেন সব শ্রেণি-পেশা আর বয়সের মুসলমান। মোনাজাতে দেশের ও মানুষের কল্যাণে দোয়া করা হয়। করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে মুক্তি কামনা করা হয়। এ সময়ে ত্যাগের মহিমায় সারা দেশে পশু কুরবানি করেন মুসলিমরা। বাসায় বাসায় আয়োজন করা হয় সেমাই, মিষ্টান্নসহ নানা ধরনের খাবারের। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তবে সিলেটসহ বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ঈদের আনন্দ অনেকটাই ছিল ম্লান।
ঈদের দিন সকাল ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এবারের কুরবানির ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। এ সময় তার পরিবারের সদস্য ও বঙ্গভবনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কর্মকর্তা সেখানে নামাজ পড়েন। ঈদের নামাজ পরিচালনা করেন বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা সাইফুল কবির। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে রাষ্ট্রপতি রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঐতিহ্যবাহী ঈদের নামাজে অংশ নেননি। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিদেশি কূটনীতিক বা অতিথিদের উপস্থিতিতে মুখরোচক খাবার পরিবেশনসহ কোনো আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা জানাননি। তবে তিনি দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন।
এদিকে জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতে অংশ নেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও সংসদ-সদস্যরা। এছাড়া সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মুসলিম দেশের ক‚টনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মুসলিরা এ জামাতে অংশ নেন। ঈদগাহে প্রবেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রবেশের মুখে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তীক্ষ্ণ নজরদারি ছিল। ঈদ জামাতে আসা মুসলিদের ৩ জায়গায় তল্লাশি করার পরই ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত এ জামাতে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম, জাতীয় সংসদের স্পিকারের স্বামী বিশিষ্ট ফার্মাসিউটিক্যাল বিশেষজ্ঞ সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেনসহ সংসদ-সদস্য এবং সংসদ সচিবালয়ের সচিব কেএম আব্দুস সালামসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
এছাড়া জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়। দ্বিতীয়টি সকাল ৮টায়, তৃতীয়টি সকাল ৯টায়, চতুর্থটি সকাল ১০টায় এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ ঈদের জামাত হয় বেলা পৌনে ১১টায়। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা জাতীয় মসজিদে ঈদের জামাতে অংশ নেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মসজিদের চারপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মসজিদের প্রবেশ গেটগুলোতে তল্লাশি করে মুসলিদের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়। প্রবেশ গেটগুলোতে বসানো ছিল আর্চওয়ে।
যত স্থানে ঈদুল আজহার নামাজ হয়েছে, সব জায়গাতে মোনাজাতে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। করোনাভাইরাসহ প্রাকৃতিক বালা-মুসিবত থেকে সুরক্ষা চাওয়া হয় আল্লাহর কাছে।
এদিকে ঈদ জামাত শেষে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন পশু কুরবানির তোড়জোড়ে। এবার ঢাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পশু জবাই করার জন্য আলাদা স্থান বেধে দেওয়া হয়নি। বরাবরের মতোই নগরজুড়ে রাস্তা ও অলিগলিতে পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা গেছে। ঈদ উপলক্ষ্যে তিন দিন সরকারি ছুটি ছিল। তবে বন্যা, মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি সংকটের কারণে এবার সব ধরনের আলোকসজ্জায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলোকসজ্জা দেখা যায়নি।
