Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

শ্রীলংকার পরিস্থিতি সব দেশের জন্য সতর্কবার্তা: ড. দেলোয়ার হোসেন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শ্রীলংকার পরিস্থিতি সব দেশের জন্য সতর্কবার্তা: ড. দেলোয়ার হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, শ্রীলংকার পরিস্থিতি সব দেশের জন্য একটা সতর্কবার্তা।

দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক সংকট কোন পর্যায়ে, কোনোভাবেই যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষ যদি অদূরদর্শিতার পরিচয় দেয় তাহলে সংকট বাড়বে। বিরোধী দল বা সরকারি দল সবাইকে এক ধরনের দূরদর্শিতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে বিষয়গুলোকে ঠিক করতে হবে।

কিন্তু শ্রীলংকার পরিস্থিতির জন্য দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের আতঙ্কিত বা চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর এ ধরনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অতীতেও ছিল এবং নিকট-অতীতেও আমরা পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপসহ অনেক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে দেখেছি।

তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতেই বিভিন্ন দেশ কোনো না কোনো পর্যায়ের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অতীতেও শ্রীলংকা বা পাকিস্তানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার প্রত্যেকটি রাষ্ট্র তার নিজস্ব যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আছে, রাজনৈতিক যে ইতিহাস আছে তার দ্বারা পরিচালিত হয়।

এখানে শ্রীলংকার জন্য বা অন্য কোনো দেশের জন্য আরেকটা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হবে তা নয়।

অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, শ্রীলংকার পরিস্থিতি তাদের ক্ষেত্রে একটি ইউনিক বাস্তবতা। পাকিস্তানের পরিস্থিতি তাদের জন্য ইউনিক। বাংলাদেশের পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য ইউনিক। কিছুদিন আগে মালদ্বীপে রাজনৈতিক অচল অবস্থা তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে তারা। নেপালেও এ ধরনের রাজনৈতিক সংকট দেখেছি।

দক্ষিণ এশিয়ার আফগানিস্তান থেকে শুরু করে মালদ্বীপ পর্যন্ত প্রত্যেকটি দেশ তার নিজস্ব বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবিত। আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যরা ২০ বছর ছিল, তার জন্য অন্য দেশে তো মার্কিন সৈন্য ঢুকে যায়নি। আফগানিস্তানে যে ধরনের হানাহানি বা সন্ত্রাসবাদ সেটি অন্য দেশে সেভাবে দেখা যায়নি।

শ্রীলংকার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশটিতে রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চলছে। যদিও আমরা জানি সেখানে এক ধরনের রাজনৈতিক শূন্যতাও তৈরি হয়েছে। যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি দেশ ছেড়েছেন। আবার একজন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টও আছেন।

সেখানে পরস্পরের সম্পর্ক ও সহযোগিতার মাধ্যমে যে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি করা সেটি এখনো দেখতে পারছি না। তবে সবাই বলছে, একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এই অর্থনৈতিক সংকটকে মোকাবিলা করতে হবে।

অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, শ্রীলংকায় এখন জনগণের যে অংশ বিক্ষোভ-বিদ্রোহ করছে তাদের মধ্যে কিন্তু ইতোমধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তারা বলছেন, প্রেসিডেন্টের বাসভবন ছেড়ে দেবেন। এখন রাজাপাকসের দলের পার্লামেন্টে মেজরিটি আছে। আবার বিরোধী দল তাদেরও একটা রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার বা ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

আসলে ক্ষমতার লড়াইও আমরা দেখতে পাচ্ছি। এখন এই ক্ষমতার লড়াইটা জনগণের কষ্টকে বা অর্থনৈতিক সংকটকে পুঁজি করে দেখতে পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। আবার সেই সংকটকে পুঁজি করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল দেশের ভেতরে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবে। সে চেষ্টাটি এখন দৃশ্যমান, যা আগেও ছিল।

তিনি বলেন, যে জিনিসটি এই মুহূর্তে শ্রীলংকার জন্য প্রয়োজন তা হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশটিকে উদ্ধার করা। এবং সে উদ্ধার করার যে কাজটি তা শ্রীলংকার ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। সেটির জন্য আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী এবং শ্রীলংকার বন্ধু রাষ্ট্র যারা তাদের সহায়তা করতে পারবে তাদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এই সংকটকে কোনো কূটনৈতিক বা কোনো ভূরাজনৈতিক সুবিধার সুযোগ হিসেবে না দেখে তাদের শ্রীলংকার জনগণের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

তিনি আরও বলেন, শ্রীলংকার জনগণের মধ্যে যে অসহিষ্ণুতা, আক্রমণাত্মক মনোভাব এবং সমঝেতায় না পৌঁছানোর যে ধরনের লক্ষণ সেটি এই সংকটকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমার মনে হয়, সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোকে সংকটের সমাধান করতে হবে। সব পক্ষের সহনশীলতা এবং তাদের অপেক্ষা করার যে মনোভাব সেটা খুব জরুরি। কারণ রাতারাতি জ্বালানি সমস্যার সমাধান হবে না, বিশাল যে বাণিজ্য ঘাটতি তা পূরণ হবে না, রিজার্ভও রাতারাতি পূরণ হবে না। শ্রীলংকার জনগণকে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়েই সামনে যেতে হবে।

সতর্কবার্তা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম