Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পরিকল্পিত হত্যা দাবি স্বজনদের

গাছায় প্রাইভেট কারে শিক্ষক দম্পতির লাশ

Icon

গাজীপুর ও গাছা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গাছায় প্রাইভেট কারে শিক্ষক দম্পতির লাশ

গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল প্রাইভেট কারটি। ভেতরে ড্রাইভিং সিটে ছিলেন শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান। পাশের সিটে তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জলি। জিয়াউরের হাতও ছিল গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে। তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, গয়না, টাকা-পয়সা সবই ছিল। শুধু ছিল না তাদের দুজনের প্রাণ। বৃহস্পতিবার ভোরে এভাবেই তাদের দেখতে পান স্বজনরা।

জিয়াউর রহমান টঙ্গীর শহিদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার স্ত্রী জলি ছিলেন আমজাদ আলী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তারা পরিবার নিয়ে গাছা থানার কামারজুরি এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকতেন। স্বজনদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে সড়কের পাশে পার্কিং করা প্রাইভেট কারে শিক্ষক দম্পতির লাশ পাওয়া গেছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী গাছা থানার এসআই নাদিরুজ্জামান বলেন, তাদের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষিকা জলির নাক দিয়ে ফেনা বের হতে দেখা গেছে।

জিয়াউরের ভগ্নিপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ জানান, ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তারা দুজন স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন। বুধবার স্কুল শেষে সহকর্মী ও মামাতো ভাই কামরুজ্জামানকে গাড়িতে নিয়ে জলির স্কুলে যান জিয়াউর। সেখান থেকে জলিকে গাড়িতে তোলেন। পথে কামরুজ্জামানকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তারা। ওই সময় শিক্ষক দম্পতির ছেলে মিরাজের সঙ্গে শেষবার তাদের কথা হয়েছিল। দম্পতির ছেলে একেএম তৌসিফুর রহমান মিরাজ বালেন, বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বাবার মোবাইলে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে মাকে ফোন দিই। মা জানান, তারা বাসার পথে আছেন। এ সময় মায়ের কথায় ক্লান্তির ভাব বুঝতে পারি। কিন্তু তারা বাসায় না ফেরায় রাতভর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করি। পরে গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করি।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে গাছা থানার দক্ষিণ খানকুর বগারটেক হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের ওপর তাদের প্রাইভেট কার দেখতে পেয়ে কাছে যান। এ সময় চালকের আসনে বাবা ও পাশেই মাকে নিস্তেজ অবস্থায় পেয়ে তাদের প্রথমে বোর্ডবাজার তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর তাদের লাশ গাছা থানায় নেওয়া হয়।

মামাতো ভাই কামরুজ্জামান বলেন, বুধবার বিকাল সাড়ে ৬টার দিকে প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান স্কুল থেকে বের হন। তিনি বাসায় যাবেন এবং পথে আমাকে নামিয়ে দেবেন জানিয়ে তার গাড়িতে উঠতে বলেন। পরে তার স্ত্রীকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসার উদ্দেশে রওয়ানা দেন তিনি। তিনি নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। পথে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে টঙ্গী বিসিকের সাহারা মার্কেট এলাকায় আমাকে নামিয়ে দিয়ে তারা চলে যান।

নিহত জিয়াউর রহমানের বড় ভাই মো. রিপন বলেন, তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন কোনো কিছুই খোয়া যায়নি। তাই বোঝাই যাচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের প্রকাশ্য কোনো শত্রু নেই। কারও সঙ্গে তার কোনো বিরোধও ছিল না। রিপনের স্ত্রী সাজেদা বেগম জানান, জিয়াউরের প্রথম স্ত্রী প্রায় আট বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এরপর তিনি শিক্ষিকা জলিকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই। জিয়াউরের আগের সংসারের একমাত্র ছেলে মিরাজ সাভার মির্জানগরে গণস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন জানান, লাশ উদ্ধারের সময় পাশে একটি খালি টিফিন বক্স পাওয়া গেছে। বাটিতে কী ছিল, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

গাছা থানার ওসি নন্দলাল চৌধুরী বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের কাছে ঘটনাটি রহস্যঘেরা মনে হচ্ছে। বিষক্রিয়া থেকে তাদের মৃত্যু কিনা কিংবা পূর্বশত্রুতাবশত হত্যাকাণ্ড কিনা-এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বলেন, ঘটনাটি তদন্তে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি আমরা। মামলাও প্রক্রিয়াধীন আছে।

স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব টঙ্গী শহিদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ও পরে গাছা থানার কামারজুরি এলাকায় শিক্ষক দম্পতির জানাজা হয়। পরে তাদের লাশ ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দড়ি কাঠাল গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম