গুলি করে হত্যা আর সহ্য করা হবে না: মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গুলি করে হত্যা আর সহ্য করা হবে না বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় গুলি করবেন, কথায় কথায় জেল দেবেন। কথায় কথায় আগুন জ্বালিয়ে দেবেন-এ দেশের মানুষ আর এসব সহ্য করবে না। দুই শাওন, রহিম বা নূরে আলমের মৃত্যুতে মানুষের যে দাবি ও আন্দোলন শুরু হয়েছে তা দমন ও বন্ধ করা সম্ভব হবে না।’ শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। মুন্সীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওন হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করে যুবদল। সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আমি আহ্বান জানাতে চাই-এ দেশকে রক্ষা করতে হলে এ সরকারকে সরাতে হবে। আমরা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর কথা বলছি না। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করি। রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করি। একটা দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি করি। যেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে ও পদত্যাগ করতে বাধ্য করি। সরকারকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার কথা এখনো সময় আছে-পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতা দিন এবং সংসদ বিলুপ্ত করুন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন শুরু হওয়ার পর চারজন সন্তানের রক্ত ঝরেছে। হত্যা করে, ভয় দেখিয়ে, গুম করে, বাড়ি-ঘর ও মিল-কারখানা পুড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। মুন্সীগঞ্জে শুধু শাওনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। বিএনপি নেতার কারখানা জ্বালিয়েও দিয়েছে, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। গোটা মুন্সীগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত শাওনের বাবা সোহরাব আলী ভূঁইয়া সমাবেশে বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার ছেলে মিছিলে যাওয়ায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর বিচার চাই। যারা আমার ছেলেকে গুলি করে মেরেছে তাদের বিচার করবেন। তিনি বলেন, আমার মৃত ছেলের নামেও মামলা করা হয়েছে। এটা কীভাবে হয়? আমরা কোন দেশে বাস করি। তিনি বলেন, একজন আমাকে হুমকি দিচ্ছে। আমি ভয়ে আছি। আমার নিরাপত্তা কে দেবে? প্রতিনিয়ত পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি সোহরাব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ভোলা থেকে মুন্সীগঞ্জে চারজন শহিদ হয়েছেন। সবাই একজন বাবার আকুল আর্তনাত শুনেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু কর্মীকে গুম করা হয়েছে। বহু কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, একজন বাবা জনতার কাছে তার সন্তানের হত্যার বিচার চাইলেন। এ সরকারের কাছে তিনি বিচার চাননি। কারণ এ সরকার বিচারবিমুখ। এ সরকার চোর ও লুটেরার সরকার। এ সরকারের কাছে বিচার চেয়ে লাভ কোনো নেই-এটা শাওনের বাবা ঠিকই বুঝেছে। এখন আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে।
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, সাইফুল আলম নিরব, যুবদলের মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মওলা শাহিন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরাফত আলী সপু, মীর আলী নেওয়াজ, মহানগরের আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।
সরকারের ‘অন্যায় আদেশ’ পালন করতে গিয়েই র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা : শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার সহস াধিক মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে, ৬০০ মানুষ গুম হয়েছেন। শত শত মানুষকে থানায় নিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। অপরাধ দমন করে র্যাব দেশে সুনাম কুড়িয়েছিল কিন্তু বর্তমান সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে তারা নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছে। র্যাবের সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই; কারণ তারা নির্দেশদাতা। তাদের ওপরই সবার আগে নিষেধাজ্ঞা আসা প্রয়োজন। যদিও জনগণ ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছে। মানুষ বলে দিয়েছে যে তোমাদের আর দরকার নেই।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির উদ্যোগে পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠান করা হয়। বিজয়ী প্রতিযোগীদের মধ্যে স্মারক ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না’। কিন্তু তার (প্রধানমন্ত্রী) মুখে এটা মানায় না। কারণ এ দেশে এ হত্যা-গুমের সঙ্গে তারা জড়িত। এ সময় মুন্সীগঞ্জে যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওন নিহত হওয়া প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, বাবা-মা, স্ত্রী ও আট মাসের শিশুর জীবনধারণে অটোরিকশা চালাতেন শাওন। সেই শাওনকে গুলি করে মাথার খুলি পর্যন্ত উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দেশে গণতন্ত্র হরণকারীরা যখন গণতন্ত্রের কথা বলেন, তখন লজ্জায় ধিক্কার ছাড়া কিছু আসে না।
রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সদস্য সচিব আবদুস সালাম, রচনা প্রতিযোগিতায় শিশু শাখার বিজয়ী সাজিদ জাহিদ প্রমুখ।
শাওনের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম : মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলার মুক্তারপুরের যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওনের লাশ শুক্রবার রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে মীরকাদিম পৌরসভার মুরমা গ্রামে নিয়ে আসা হয়। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবারের সদস্যসহ শত শত এলাকাবাসীর কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শাওনকে হারিয়ে তার বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রাত ১০টার দিকে বাড়ির পাশে মুরমা জামে মসজিদে জানাজা শেষে মুরমা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে মুরমায় শাওনের বাড়িতে আসেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে, দেশের পক্ষে শাওনের যে আত্মদান তা নিঃসন্দেহে দেশ ও দল ভুলবে না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা মনে করি এ দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, সুশাসন ফিরে আসবে। তখন প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আহম্মেদ, মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমিরুল ইসলাম জসিম প্রমুখ।
