Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিশিষ্টজনদের অভিনন্দন

শপথ নিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন

Icon

বাসস

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শপথ নিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন

বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ মো. সাহাবুদ্দিন। আইন পেশা, বিচারালয় ও দুদকে দায়িত্ব পালনের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের পর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন তিনি। সোমবার বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে তিনি শপথ নেন। রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
শপথ অনুষ্ঠানের পর নয়া রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং বিদায়ি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অফিসের দায়িত্ব পরিবর্তনের অংশ হিসাবে নিজ নিজ আসন বদল করেন। পরে আবদুল হামিদকে মহাসাড়ম্বরে, পুষ্পবৃষ্টিতে বিদায় জানানো হয়। দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে আর কোনো রাষ্ট্রপতির জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রাচারে এমন বিদায় অনুষ্ঠান দেখেনি বঙ্গভবন। বিদায়ি অনুষ্ঠানের আগে আবদুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, রাজনীতিবিদদেরকে দেশের মানুষকে ভালোবেসে রাজনীতি করা উচিত। তাহলেই রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে। তিনি আর রাজনীতিতে জড়াবেন না বলেও জানান।
রাষ্ট্রীয় এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং শতাধিক বিশিষ্ট অতিথি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
এর আগে কালো মুজিব কোট ও সাদা পাঞ্জাবি পরে নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও স্পিকারকে নিয়ে সকাল ১০টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রবেশ করেন। সেসময় একটি সামরিক ব্যান্ড আনুষ্ঠানিক সংগীত পরিবেশন করে। পরে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শপথ নথিতে স্বাক্ষর করেন। রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণের পর অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আজ নতুন রাষ্ট্রপতিকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ও ছেলে আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের সদস্য এবং বিদায়ি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পরিবারের সদস্য, স্ত্রী রাশিদা খানম ও ছেলে ইঞ্জিনিয়ার রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এমপিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ডেপুটি স্পিকার, সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা, জাতীয় সংসদের হুইপ, সংসদ-সদস্য, ক‚টনৈতিক মিশনের প্রধান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, প্রতিমন্ত্রী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিমকোর্টের বিচারক, বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল বা কমিশন বা ইনস্টিটিউটের প্রধান, জাতীয় রাজনৈতিক নেতা, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), বিভিন্ন দেশের ক‚টনীতিক, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার সম্পাদকসহ সিনিয়র সাংবাদিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ প্রায় ১১০০ জনেরও বেশি আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ করেন।
এদিকে শপথ নেওয়ার পর নতুন রাষ্ট্রপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দেশের বিশিষ্টজনরা। প্রথমে নতুন রাষ্ট্রপতিকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। এরপর একে একে শুভেচ্ছা জানান বিশিষ্টজন ও আওয়ামী লীগ নেতারা। মো. সাহাবুদ্দিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি-২ খন্দকার দেলোয়ার জালালীর সই করা এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি রাষ্ট্রপতির সাফল্য, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
এর আগে ৭৩ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্র“য়ারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংকপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শরফুদ্দিন আনছারী, মা খায়রুন্নেসা। তিনি ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা বাকশালের যুগ্মসম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে তিন বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।
মো. সাহাবুদ্দিন দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতাও করেছেন। তার অনেক কলাম বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। কর্মজীবনে তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন পরপর দুবার বিসিএস (বিচার) অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। দুদক কমিশনার হিসাবে তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে ওঠা তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বঙ্গভবনের বাসিন্দা রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন : বঙ্গভবনের বাসিন্দা হয়েছেন সদ্য শপথ নেওয়া রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সোমবার তিনি অফিস করেন এবং কয়েকটি ফাইলে স্বাক্ষরও করেন। বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ গ্রহণের পর তিনি তার গুলশানের বাসভবনে যান। এরপর রাত ৮টা ৫০ মিনিটে সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানাকে নিয়ে তিনি গুলশানের বাসা থেকে মোটরগাড়ি শোভাযাত্রা সহকারে বঙ্গভবনে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে ছেলে আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও আসেন। পুলিশের সুসজ্জিত অশ্বারোহী দল রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানিয়ে বঙ্গভবনের মূল ফটকে নিয়ে আসে। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়–য়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহউদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) ওয়াহিদুল ইসলাম খানসহ উচ্চতম সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় পিজিআর গার্ড অনার দেবে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে তিনি পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সেখান থেকে মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে তিনি ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর দুপুরে তিনি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।  
পাবনায় আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ : যুগান্তরের পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনার কৃতী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়ায় তার নিজ জেলায় আনন্দ মিছিল, দোয়া মাহফিল ও মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। সোমবার পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এবং রাষ্ট্রপতির বাড়িসংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন বিনোদন পার্কে বড় পর্দায় রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠান দেখানো হয়। পরে রাষ্ট্রপতির দীর্ঘায়ু ও সফলতা কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে সাধারণ মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন নেতাকর্মীরা। পরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীরা শহরে আনন্দ মিছিল বের করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, আওয়ামী লীগ নেতা ও নাট্যাভিনেতা আবদুল হান্নান শেলী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মামুন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ প্রমুখ। এছাড়া সাহাবুদ্দিন বিনোদন পার্কের অনুষ্ঠানে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিক, চাঁপা বিবি মসজিদ কমিটির মোতওয়ালি­ হারুন উর রশিদসহ রাষ্ট্রপতির প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন। পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শহিদ সরকারি বুলবুল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও সাহাবুদ্দিনের সহপাঠী প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেন, জীবনে এর চেয়ে খুশির সংবাদ আমার কাছে আর দ্বিতীয়টি নেই। আজ পাবনাবাসী গর্বিত, আনন্দিত। তিনি বলেন, শুধু পাবনা নয়, সমগ্র উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য আজ আনন্দের বিষয়।
নতুন রাষ্ট্রপতিকে চীনের প্রেসিডেন্টের অভিনন্দন : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সোমবার নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দনপত্র পাঠান তিনি। চিঠিতে চীনের গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার ও তার জনগণের পক্ষ থেকে সাহাবুদ্দিনকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান শি।

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম