Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল

Icon

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই বর্ষা ঋতুকে গানে গানে অভিবাদন জানিয়েছিলেন। এক পশলা ঝড়-বৃষ্টি এবার হয়েছিল কয়েকদিন আগে। কিন্তু ঋতুচক্রের খেলায় বর্ষারানি হাজির হলো। আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ। বাদল দিন আবার তার নূপুরের শব্দ শোনাল। কদম, কেতকী ধোয়া বৃষ্টিস্নাত দিন বাঙালির জীবনের হয়তো নিয়ে আসবে নতুন কোনো বারতা। বর্ষা মানেই আবেগ, অনুভূতির জোয়ার। এ জোয়ারে ভাসেননি এমন কবি-সাহিত্যিক পাওয়া যায় না। শুধু যে কবি-সাহিত্যিক, তা নয়-সাধারণ মানুষও। কালীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ বা নির্মলেন্দু গুণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ-কেউ বর্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিনে বর্ষা এক বিপুল বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত।

আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। আর বর্ষাকাল মানেই মেঘ, বৃষ্টি, প্রেম, নতুন প্রাণ, জেগে ওঠার গান। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ তাই তো বলেছেন, ‘এই জল ভালো লাগে;-বৃষ্টির রূপালি জল কত দিন এসে/ধুয়েছে আমার দেহ-বুলায়ে দিয়েছে চুল-চোখের উপরে/তার শান্ত স্নিগ্ধ হাত রেখে কত খেলিয়াছে,-আবেগের ভরে।’ বর্ষা আমাদের মনকে স্নিগ্ধ করে তোলে। পুরোনো জঞ্জাল ধুয়েমুছে আমরাও জেগে উঠি প্রাণচাঞ্চল্যে। বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায়, তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে-শ্যামলে। বর্ষার পানিতে নদীনালা, খালবিল ভরে ওঠে। সেখানে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। তাই বর্ষা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এক পশলা বৃষ্টি যে নতুন মাত্রা নিয়ে আসে জীবনে, তা অন্য কিছুতেই পাওয়া যায় না। বর্ষায় বাংলার নদনদী পূর্ণযৌবনা হয়ে ওঠে। নদীর ফেঁপে ওঠা জোয়ারের পানি প্রচুর পলি জমায় মাটিতে, যা নিয়ে আসে শস্যেও প্রাচুর্যের কবর। এ সময় বিলে-ঝিলে ফোটে শাপলা-শালুক। হিজল আর কেয়াফুলের অরূপ দৃশ্য মোহিত করে মনকে। বর্ষাকাল গ্রামের মানুষকে অনেক বেশি ঘরমুখো করে তোলে। রমণীরা ঘরে বসে নকশি কাঁথায় ফুল তোলে। অনেকটা আলস্যে কেটে যায় দিন। বৃষ্টি বেশি হলে গরিব মানুষের হাতে কোনো কাজ থাকে না। বর্ষায় ফোটে কদম ফুল, যা বর্ষার রূপকে বাড়িয়ে দেয়। আরও ফোটে কেতকী। শহরের একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনে বর্ষা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। বৃষ্টি শহরের ধুলোবালিকে বশ করে। তবে বর্ষায় শহরের রাস্তাঘাট অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়, যা মানুষের ভোগান্তি বাড়ায়। অতি বর্ষণে দেখা দেয় নদীভাঙন ও বন্যা। বাংলার কৃষি ও অর্থনীতি বৃষ্টিনির্ভর। যথাযথ বৃষ্টিপাত ফসল ফলাতে সহায়তা করে। অন্যদিকে অনাবৃষ্টি ও খরায় কৃষি ভেঙে পড়ে। তাই বর্ষাকাল আমাদের জীবনে সামগ্রিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বর্ষা উৎসব : বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষা উৎসব-১৪৩০ তথা আষাঢ়স্য প্রথম দিবসের আয়োজন করা হয়েছে গেণ্ডারিয়া থানাসংলগ্ন মিল ব্যারাকের বুড়িগঙ্গা নদীর উপর নির্মিত জেটিতে। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠানের সূচনা হবে যন্ত্রসংগীত শিল্পী হাসান আলীর বাঁশি বাদনের মধ্যদিয়ে। বর্ষা কথন পর্বে প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জমান।

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম