অশ্রুঝরা আগস্ট
বাংলাদেশ-বাঙালি বঙ্গবন্ধু অবিচ্ছেদ্য সত্তা ও চেতনা
হারুন হাবীব
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ যতদিন বেঁচে থাকবে; বাংলা, বাঙালি এবং বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা যতদিন থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকবেন। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু-এ শব্দগুলো সম্পূর্ণভাবে একে অপরের পরিপূরক। এর একটি বড় কারণ আমি মনে করি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পাঁচ দশকের বেশি সময় গেছে, আজ পর্যন্ত আমি যা বুঝতে পারি-রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের যে অসাম্প্রদায়িক ভিত্তি, তার প্রতিপক্ষরা আজও পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধকে, বাংলাদেশকে, তার অসাম্প্রদায়িক ভিত্তিকে এবং বঙ্গবন্ধুকে মেনে নিতে পারেনি। তারা আজও সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধ শক্তি রূপে।
১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে, তাকে শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার অভিপ্রায়ে পনেরোই আগস্টের ঘাতকরা টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত পল্লিতে সমাহিত করেছিল-ঘাতকদের হয়তো এমনটি মনে হয়েছিল যে ঢাকা থেকে নিভৃত পল্লি টুঙ্গিপাড়ায় তাকে সমাহিত করার ফলে এদেশের মানুষ তার কথা ভুলে যাবে, বিস্মৃত হবে মানুষ। কিন্তু ইতিহাস তার উলটো সাক্ষ্য দিয়েছে। দিয়েছে এ কারণে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি, বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। কাজেই তাকে ইচ্ছা করলেই বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে হারিয়ে দেওয়া যাবে-তা ঠিক নয় এবং আমি মনে করি, ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ক্রমান্বয়ে তিনি টুঙ্গিপাড়ার মাটি থেকে আবারও উঠে এসেছেন এবং এই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দান করছেন। বিশেষ করে, যে চেতনার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গড়ে উঠেছিল, সেই চেতনাকে লালন করছেন।
আমি মনে করি, যতদিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধ শক্তি থাকবে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধ শক্তি থাকবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরুদ্ধ শক্তি থাকবে, ততদিন সেই টুঙ্গিপাড়ার সমাধি থেকে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের মতোই সর্বাধিনায়ক হিসাবে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্ব দেবেন, পথ দেখাবেন। তবে এখানে আমার একটি পর্যবেক্ষণের আক্ষেপ উল্লেখ করতে চাই, তা হচ্ছে-আমরা কি সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হতে পেরেছি? কেবল মুখে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বললেই কি বঙ্গবন্ধরু সৈনিক হওয়া যায়? আমার মনে হয় না। আমার খারাপ লাগে, প্রায়ই খারাপ লাগে যখন দেখি-‘জয় বাংলা’ কেবল স্লোগানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ যেন নিষ্প্রাণ স্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছে-আত্মার বিষয় হয়ে আদর্শের উচ্চারণ হয়ে দাঁড়ায়নি।
আমি মনে করি, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা আনতে হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে, এ পর্যন্ত এই দেশের যে অগ্রগতি, উন্নয়ন হয়েছে সেগুলোকে রক্ষা করতে হলে এদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক সৈনিক দরকার শুধু স্লোগানের সৈনিক নয়।
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শের মানুষ হিসাবে বঙ্গবন্ধুর আট চল্লিশতম শাহাদতবার্ষিকীতে তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
অনুলিখন : শুচি সৈয়দ
