বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করার চেষ্টা
পান ব্যবসায়ী সেজে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দা
আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সতর্ক করতে পান ব্যবসায়ী সেজে ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন ভারতীয় এক গোয়েন্দা। ১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে অবহিত করেন। বঙ্গবন্ধুকে কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারীর নাম জানান ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং)-এর ওই কর্মকর্তা। কিন্তু দেশের মানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা ও বিশ্বাসের কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতীয় ওই গোয়েন্দার তথ্যকে গুরুত্ব দেননি। ফলে বঙ্গবন্ধুর প্রাণরক্ষায় বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় ভারতীয় এই চেষ্টা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় মার্কিন চিকিৎসক ভিগো অলসেনের ‘ডাক্তার’ বইয়ে। এই মিশনারি চিকিৎসক ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের চকোরিয়ায় ‘মালুমঘাট মোমোরিয়াল ক্রিশ্চিয়ান হসপিটাল’ প্রতিষ্ঠা করে সেই থেকে ৩৩ বছর বাংলাদেশে অবস্থান করেন। ১৯৯০ সালে ডাক্তার-টু নামে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে তার লিখিত এ বই প্রকাশিত হয়। ভিগো অলসেন এ বইয়ে লিখেছেন, ‘১৯৭৫ সালের গোড়ায় ‘র’ (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) ইঙ্গিত পায় যে বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের একটা চেষ্টা হতে পারে। তারা এটাও লক্ষ করে যে, অন্য কতিপয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ‘র’ তাদের সন্দেহ সম্পর্কে শেখ মুজিবকে অবহিত করেছিল। কিন্তু তিনি (বঙ্গবন্ধু) তাতে কর্ণপাত করেননি।’
ভিগো অলসেন আরও লিখেছেন, ১৯৭৫ সালের মধ্য জুনে ‘র’ মেজর ফারুক ও মেজর রশিদের নাম জানতে পেরেছিল। এদের মধ্যে কেউ একজন কাগজের এক টুকরোয় কিছু একটা লিখেছিলেন বা আঁকিবুঁকি করে থাকবেন এবং নিশ্চিন্তে সেটি ঝুড়িতে নিক্ষেপ করেন। ‘র’-এর একজন এজেন্ট চাতুর্যের সঙ্গে সেই কাগজের টুকরোটি কুড়িয়ে নেন এবং ভারতে তাদের সংস্থার সদর দপ্তরে সেটি পাঠিয়ে দেন। সেই লেখা বা চিত্র ‘র’-এর উচ্চপর্যায়কে নিশ্চিত করে, বাংলাদেশে একটি অভ্যুত্থান ঘটতে চলেছে।
প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের লিখিত গবেষণাধর্মী বই ‘মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড’তে হত্যা ষড়যন্ত্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর প্রচেষ্টা সম্পর্কিত ভিগো অলসেন ছাড়াও আরও কয়েকটি বইয়ের তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে ভারতীয় ইংরেজি সাময়িকী ‘সানডে’র ২৩-২৯ এপ্রিল ১৯৮৯ সংখ্যায় এক নিবন্ধে সাবেক ‘র’ প্রধান আরএন কাও (রমেশ্বর নাথ কাও) লেখেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণনাশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সদস্যের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমরা আগাম তথ্য পেয়েছিলাম। আমি বিষয়টি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কথা বলি। তাকে আমরা বলি, এ সংক্রান্ত তথ্য অত্যন্ত সূক্ষ্ম সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি। এসব সূত্রের পরিচয় যে কোনো মূল্যে গোপন রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে আমি ঢাকা সফর করেছিলাম।’
ওই নিবন্ধে আর এন কাও আরও লেখেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আমার শেষ বৈঠকের একপর্যায়ে তাকে বঙ্গভবনের বাগানে একান্তে কিছু সময় দেওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলেন, তারা আমার নিজের সন্তান, তারা আমার ক্ষতি করবে না। আমি (আর এন কাও) তার (বঙ্গবন্ধু) সঙ্গে তর্কে যাইনি। শুধু এটুকু বলেছিলাম, এসব তথ্য নির্ভরযোগ্য এবং ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমরা যা জানতে পেরেছি, তা আমরা তাকে অবহিত করব। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের মার্চে আমি আমাদের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম এবং ওই কর্মকর্তা তাকে (বঙ্গবন্ধুকে) অবহিত করেছিলেন যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদাতিক ও অশ্বারোহী ইউনিট তার প্রাণনাশের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত শেখ মুজিব এসব সতর্কতা অগ্রাহ্য করেছিলেন।’
ভারতীয় লেখক ভাশ্যাম কাস্তরি তার ‘ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেস : অ্যানালাইসিস, অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ফাংশনস’ বইয়েও বঙ্গবন্ধুর প্রাণরক্ষায় ভারতীয় প্রচেষ্টা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। ১৯৯৫ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। এ বইয়ে ভারতীয় এই লেখক উল্লেখ করেন, ‘র’ ১৯৭৪ সালে মুজিবকে সতর্ক করেছিল।
