খালেদা জিয়ার জন্য এখন একমাত্র পথ রাষ্ট্রপতির ক্ষমা: আইনমন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে আইনে আর কোনো সুযোগ নেই। আইনের বিষয়টি এখন অতীত এবং পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এখন একমাত্র পথ হচ্ছে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। তিনি যদি দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চান, সেটা তার (খালেদা জিয়া) বিষয়, আমার নয়।
বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী এ এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আইন সচিব গোলাম সারোয়ার উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনটি করা হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। গত মঙ্গলবার মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, আইনমন্ত্রী একসময় বলেছিলেন দণ্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকতে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। অথচ তার কিছুদিন পর খালেদা জিয়া বাসায় এসেছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলামের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী বলেন, তার এই বক্তব্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কোথাও এমন কথা আমি কখনোই বলিনি। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমার দেওয়া সব বক্তব্যের রেকর্ড সংরক্ষিত। আমি চেক করে বলছি, আমি এ ধরনের কোনো বক্তব্য দিইনি।
আইনমন্ত্রী এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আইনি কোনো সুযোগ আছে কি না? জবাবে আইনমন্ত্রী তার আগের কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতা সরকার একবারই প্রয়োগ করতে পারে। সুতরাং এখন আর আইনগত কোনো সুযোগ অবশিষ্ট নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফেলেছেন। পুনরায় এ ক্ষমতা প্রয়োগের আর সুযোগ নেই।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় খালেদা জিয়া শর্তযুক্তভাবে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি আর কত মহানুভবতা দেখাতে পারেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা। আমরা কেউ খালেদা জিয়াকে ভয় পাই না।
হত্যা মামলার আসামি জোশেফকে সরকার মুক্তি দিয়েছে অথচ খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে অন্য রকম সিদ্ধান্ত হচ্ছে কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, জোশেফ কিন্তু কোনো আদালতে খালাস পায়নি। সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি তার সাজা মওকুফ করেছেন। জোশেফ তার কাছে মাফ চেয়েছিল।
রাষ্ট্রপতির কাছে তারা ক্ষমা চাইতে যাবে কি না সে পরামর্শ আমি দিতে চাই না। তবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার সবার জন্য উন্মুক্ত। খালেদা জিয়া ইচ্ছা করলে ক্ষমা চেয়ে সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আ স ম রবকে মুক্তি দেওয়া হয় সামরিক শাসন চলাকালে। তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ক্ষমতাবলে মুক্তি দেওয়া হয়নি। আর হাজী সেলিমের দণ্ডাদেশ বহাল থাকার পর তিনি আপিল করেন। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশে বলা ছিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই হাজী সেলিম বিদেশে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসেন।
আনিসুল হক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার ব্যাপারে আইনে কোথাও বলা নেই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তাকে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছে। শর্ত যদি দেওয়া হয় সেটা মানতে হবে। তিনি বলেন, এটি আইনি বিষয়। এটা কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। সরকার জেনেশুনেই তার দণ্ডের মেয়াদ শর্তযুক্তভাবেই স্থগিত করে মুক্তি দিয়েছে।
বেগম জিয়ার মুক্তির ক্ষেত্রে দেশে চিকিৎসা নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া যৌক্তিক কি না-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা মনে করেছি যৌক্তিক। কারণ তখন তার যে অসুস্থতা ছিল, যতটুকু আমাদের জানানো হয়েছিল তাতে আমরা মনে করেছি যৌক্তিক। তা প্রমাণিত হয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তার চিকিৎসা সফলভাবে দেশে হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৮ সালে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সময় কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। তাকে অনুমতি নিতে হয়নি। কারণ তিনি তখন কোনো মামলায় দণ্ডিত হননি। তিনি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সবকটি মামলায় নিঃশর্ত জামিনে ছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে কোনো নির্বাহী আদেশের প্রয়োজন ছিল না।
