চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ডিবির হাতে গ্রেফতার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিতর্কিত সেই অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার বিকালে তাকে সাভার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে যুগান্তরকে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, গ্রেফতারের পর সারওয়ার্দীকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়ে আরেফি নামের এক ব্যক্তিকে বিএনপির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি কেন আরেফিকে বিএনপি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এ ঘটনার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা-তা সারওয়ার্দীর কাছ থেকে জানার চেষ্টা চলছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরই তাকে গ্রেফতারে অভিযানে নামে ডিবি। গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অন্যের রূপ ধারণ করে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে করা পল্টন থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।
এদিকে লে. জেনারেল (অব.) হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেফতারের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, একজন মানুষ যখন অপরাধ করে তখন তার পরিচয় কী, সেটি বিবেচ্য নয়। আমাদের কাছে বিবেচ্য হলো তিনি একজন অপরাধী। তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া পুলিশের কর্তব্য। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর পল্টনে কাবাডি স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর নয়াপল্টনের দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজির হন মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফীর (মিয়ান আরেফি) নামের এক ব্যক্তি। সেখানে নিজেকে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ মার্কিন নাগরিক। এ পরিচয়ে তিনি বিএনপি পার্টি অফিসে সাংবাদিকের ব্রিফ করেন। সারওয়ার্দীই তাকে বিএনপি অফিসে নিয়ে যান বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই নামে জো বাইডেনের কোনো উপদেষ্টা নেই। বিএনপির পক্ষ থেকেও বলা হয়, তারা অরেফিকে চেনেন না। পরদিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার উদ্দেশে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি। পরে আরেফি এবং সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়।
এর আগে ৩০ অক্টোবর রাতে মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের ডিবি প্রধান হারুন বলেন, আরেফি আমাদের জানিয়েছেন যে, বিএনপির পার্টি অফিসে হাসান সারওয়ার্দী (অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী), বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট বেলাল ও ইশরাক হোসেন তাকে (আরেফি) বাইডেনের উপদেষ্টা হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। আসলে এটি সত্য নয়। তারা (বিএনপি) মিথ্যাভাবে আরেফিকে উপস্থাপন করেছেন। তারা বাসা থেকে পার্টি অফিসে নিয়ে আসার সময় শিখিয়েছেন যে, আপনি (আরেফি) বলবেন, র্যাবকে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে সহায়তা করেছি। এখন পুলিশ, আনসার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকেও এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এই কথাগুলো বললে দেখবেন বাংলাদেশের পুলিশ অফিসাররা ডিমোরালাইজড হবে এবং বাংলাদেশের মানুষও ডিমোরালাইজড হবে।
মিয়ান আরেফি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে থাকেন। তিনি একজন বাংলাদেশি আমেরিকান। জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায়। তিনি মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশে আসেন।
এদিকে গ্রেফতারের আগে আরেফির বিষয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া মিয়ান আরেফি কোনো গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা নির্দেশিত ছিলেন। মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘ওই ব্যক্তি (মিয়ান আরেফি) কোনো গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা তাড়িত হয়ে বা নির্দেশিত হয়ে এমনটি করেছেন বা করে থাকতে পারেন বলে আমার মনে হয়। এখন ঐক্যের সময়। জাতিকে ধৈর্যের সঙ্গে এ ঘটনা মোকাবিলা করতে হবে। কোনো মিয়ান আরেফি কিংবা কারও অপব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। গণতন্ত্রের জন্য ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য।’
ওই দিনের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর গণতন্ত্রের জন্য জনগণের আন্দোলন দেখার জন্য আমি নয়াপল্টনে যাই। দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের পর গণতন্ত্রকামী মানুষ পুলিশের গুলি, টিয়ার গ্যাস ও নির্যাতনের শিকার হন। অনেক লোক আহত হন। শুনেছি পুলিশও নিহত হয়েছে। আমি দুর্বিষহ ঘটনার পরিস্থিতি দেখার মনস্থির করি এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই বেলা ৩টার দিকে। কথিত মিয়ান আরেফি সেপ্টেম্বরে বিদেশে অবস্থানরত আমার বন্ধুদের কাছ থেকে আমার নম্বর সংগ্রহ করে ২৭ তারিখে ঢাকায় আসার কথা জানান। ২৮ অক্টোবর তিনি আমাকে জানান, তিনি আহতদের দেখতে নয়াপল্টনে যেতে চান। আমি যেন তাকে সহায়তা করি।’
অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ান আরেফি বিএনপি অফিসে ইশরাকের (বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন) সঙ্গে পরিচিত হয়ে আহতদের দেখার পরে হলরুমে বসেন। সেখানে আমাকেও কিছু লোক বসতে বলেন। সেখানে তিনি গণমাধ্যমের কাছে সমবেদনা জানিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন। হঠাৎ ব্যাগ থেকে কিছু লেখা কাগজ তিনি (মিয়ান আরেফি) বের করেন। এরপর মার্কিন সরকারের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সমস্যা নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। এমনকি মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞাসহ স্পর্শকাতর কিছু বিষয়ে কথা বলা শুরু করেন। মার্কিন সরকার ও আন্দোলনরত বাংলাদেশিদের জন্য যেটি অত্যন্ত বিব্রতকর। এজন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি দ্রুত তার বক্তব্য শেষ করেন এবং আমি সেখান থেকে বের হয়ে আসি।’
চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী আরও বলেন, ‘আসার পথে নিচতলায় রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে তার (মিয়ান আরেফি) কথা হয় এবং প্রায় ৩০ সেকেন্ড কথা বলেন। এরপর আমি আমার বাসায় চলে আসি। ওই রাতে তিনি (মিয়ান আরেফি) আমাকে ফোন করলে আমি দ্রুত বিষয়গুলো মার্কিন দূতাবাসে জানিয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করার অনুরোধ করি। ওই রাত থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত তিনি তার ফোন বন্ধ রাখেন। সন্ধ্যায় অনলাইন পত্রিকায় জানতে পারি তিনি বিমানবন্দরে আটক হয়েছেন। পরে ডিবি অফিসে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা ও নিজেকে বাঁচানোর অপপ্রয়াস। তাকে কেউ জোর করে বক্তব্য দিতে বলেনি। স্বেচ্ছায় নিজের পরিচয় ও বক্তব্য দিয়েছেন।’
