Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

শ্রমিক বিক্ষোভ দমনে বহিরাগতরা 

মিরপুরে সড়ক অবরোধ সংঘর্ষ ভাঙচুর গুলি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন ও মিরপুর প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মিরপুরে সড়ক অবরোধ সংঘর্ষ ভাঙচুর গুলি

রাজধানীর মিরপুরে গার্মেন্ট শ্রমিক ও বহিরাগতদের মধ্যে মঙ্গলবার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সকাল সাড়ে নয়টায় মিরপুর সাড়ে এগারোয় (পূরবী সিনেমা হল) সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে কয়েকশ শ্রমিক। অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশ এবং বহিরাগতদের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় ১৫টি বাস, ২টি মার্কেট, একটি ব্যাংকের শাখা ও ২টি পোশাক কারখানা ভাঙচুর করে শ্রমিকরা। 

সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। তাদের স্থানীয় দুটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একদিকে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির আতঙ্ক, অন্যদিকে পোশাক শ্রমিকদের ভাঙচুর ও সংঘর্ষের খবরে গোটা মিরপুর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় মিরপুর-১১ নম্বরের মেট্রোরেল স্টেশন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো মানুষ।

গার্মেন্ট কারখানা ইপিলিয়ন, ডেকো, কনকর্ড ও অ্যাপোলো নিটওয়্যারের শ্রমিকরা জানান, সকাল ৯টায় তারা কারখানায় কাজে যান। কিছু সময় পর বহিরাগতরা তাদের (শ্রমিক) কারখানা থেকে বের না হওয়ার হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। 

এ ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। তারা রাস্তায় বের হয়ে এর প্রতিবাদ জানায়। এ সময় বহিরাগত লোকজন ও পুলিশ মিলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ওপর হামলা করে। বহিরাগতরা শ্রমিকদের লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়ে। এতে অর্ধশতাধিক গার্মেন্ট শ্রমিক আহত হয়। এর মধ্যে ১০-১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

মিরপুরের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পোশাক শ্রমিক জরিনা বেগম বলেন, ‘আমরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করি। পাঁচ বছরে আমাদের বেতন বাড়েনি। এখন বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছি। এর মধ্যে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পির লোকজন এসে আমাদের ওপর হামলা করে।’

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে তিনজন শ্রমিক মারা গেছে-এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে গার্মেন্ট শ্রমিকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা গার্মেন্ট কারখানা ও রাস্তার যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে স্থানীয় সংসদ-সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা ঘটনাস্থলে যান। তিনি শ্রমিকদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের ওপর হামলার যথাযথ বিচার হবে।’ 

পরে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, আমি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কয়েকজন আহত হয়েছে। কেউ মারা যায়নি। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়েছি। এ ব্যাপারে গার্মেন্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি।’ 

গার্মেন্ট শ্রমিক কাজল বলেন, ‘সকালে কারখানায় ঢোকার সময় অপরিচিত লোকজন আমাদের থ্রেট দেয়। এর কিছুক্ষণ পর শ্রমিকরা রাস্তায় বের হলে অচেনা লোকজন শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। হামলার সময় ভিড়ের মধ্যে গুলিও করা হয়। নারী শ্রমিককে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়। অনেকের মাথা ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। হাত-পা ভেঙেছে কারও কারও।’ 

গার্মেন্টকর্মী হনুফা ও রেশমা জানান, শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনায় গার্মেন্ট মালিকদের ইন্ধন রয়েছে। বহিরাগতরা তাদের লোক। মালিকরা ক্যাডার বাহিনী দিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। 

সরেজমিন দেখা যায়, বিকাল ৪টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে পূরবী সিনেমা হল থেকে মিরপুর ১২ নম্বরের মূল সড়কের আশপাশের কয়েকটি অফিস, গার্মেন্ট, বাসাবাড়ি ভাঙচুর করে। যারা ভিডিও ধারণ বা ছবি তোলার চেষ্টা করেছেন তাদের ওপর চড়াও হয় শ্রমিকরা। 

শ্রমিকদের সঙ্গে ১০-১২ বছর বয়সি ৫০-৬০ জন কিশোরকেও হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে। পরে আস্তে আস্তে শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সড়ে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর খবর ছড়িয়ে পড়ে-জ্যোৎস্না নামে এক শ্রমিক মারা গেছে। এ খবরে শ্রমিকরা সন্ধ্যার দিকে ফের রাস্তায় নামে। তবে শ্রমিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সন্ধ্যা সাতটার দিকে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী তাদের বেতন ২৩ হাজার টাকা হবে। এজন্য চলতি মাসে তাদের গ্রেড ঠিক করার কথা। কিন্তু মালিকপক্ষ গ্রেড পরিবর্তন ও বেতন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তারা (মালিক পক্ষ) আগের বেতন বহাল রেখেই গার্মেন্ট চালাতে চান। 

স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কালশী ২২ তলায় একটি গার্মেন্টের শ্রমিক রেশমাসহ কয়েকজন জানান, বর্তমানে তারা ৮ হাজার টাকা বেতন পান। নতুন মজুরি অনুযায়ী তাদের বেতন ২৩ হাজার টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু মালিক পক্ষ বেতন বাড়িয়ে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা দিতে চান। এজন্য তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। 
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন বলেন, মিরপুরে শ্রমিকদের আন্দোলনে গুজব ছড়ানো হয়েছে। বড় কিছু হয়নি। আর কেউ মারাও যায়নি। 

পল্লবী থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, শ্রমিক মারা যাওয়ার খবরটি গুজব। পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য কেউ এটি ছড়িয়েছে। ৬-৭ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। বিকাল চারটার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
 
নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ ৬ দফা দাবি : গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত গার্মেন্টস শ্রমিক রাসেল হাওলাদারের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণসহ ৬ দফা দাবি জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ১৮টি রেজিস্ট্রার্ড শ্রমিক ফেডারেশনের সমন্বয়ে গঠিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি) সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায়। 

দাবিগুলো হলো-শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখাসহ কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখা; পুলিশের গুলিতে নিহত গার্মেন্ট শ্রমিক রাসেল হাওলাদারের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। শ্রমিকদের ওপর প্রশাসনের ধমন-পীড়ন, মামলা-হামলাসহ সব প্রকার নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ। গ্রেফতার শ্রমিক নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন আইবিসির সভাপতি আমিরুল হক আমিন। উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি বাবুল আকতার, কেন্দ্রীয় নেতা জেডএম কামরুল আনাম, সালাউদ্দিন স্বপন, তৌহিদুর রহমান, রুহুল আমিন প্রমুখ।
 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম