জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধনে সেলিমা রহমান
ছেলেকে না পেলে বাবা-মা ভাই বোনকে নিয়ে যায়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে প্রায় দেড় মাস হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। রোববার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মানববন্ধন করে দলটি। মামলা-হামলা আর গ্রেফতার আতঙ্কের মধ্যে ৪৩ দিন পর প্রকাশ্যে আসেন নেতাকর্মীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে করেন বিশাল শোডাউন।
মানববন্ধন রূপ নেয় সমাবেশে। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাসহ হাজারো জনতার ঢল নামবে। গুম, খুন ও নির্যাতন এবং মামলার শিকার দলীয় নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরাও মানববন্ধনে অংশ নেন। তারা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন সরকার ১৫ বছর ধরে বিরোধী মতকে দমন করে আসছে।
যারা প্রতিবাদ করেছেন, তারাই গুম, খুন, মামলা, হামলার শিকার হয়েছেন। নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। স্বজনদের তুলে নিয়ে গুম ও গ্রেফতার করছে। দেশের কোথাও কোনো মানবাধিকার নেই। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বিএনপি নেতাকর্মীরা। গুম, খুন হওয়া নেতাদের সন্তানরা তাদের বাবাকে বছরের পর বছর খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাদের কান্না ও আর্তনাদেও আওয়ামী লীগ সরকারের মন গলছে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘১৫ বছর ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে। ২৮ অক্টোবর প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের না পেয়ে স্বজনদের ধরে নিচ্ছে। বাবাকে না পেলে ছেলে, ছেলেকে না পেলে বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রীকে নিচ্ছে। মুক্তিপণ দাবি করছে। এমন নিপীড়ন বিশ্বের আর কোথাও নেই।’
তিনি বলেন, “শনিবার মানববন্ধন করেছে ‘মায়ের ডাক’। সেখানে একজন নারী বলল, তার বিরুদ্ধে দুটি খুনের মামলা দেওয়া হয়েছে। সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই হলো দেশের অবস্থা, এই হলো মানবাধিকার পরিস্থিতি। বিএনপির নেতাকর্মীরা পরিবারের সঙ্গে থাকতে না পেরে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কথা চিন্তা করে আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। দেখবেন অতি শিগগিরই জনগণ এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটবে।”
‘মানবাধিকার লঙ্ঘনে’ বাংলাদেশ এখন বিশ্বে প্রথম দাবি করে বেগম সেলিমা রহমান বলেন, সর্বগ্রাসী ‘দানব’ বাংলাদেশ পরিচালনা করছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। তারা (ক্ষমতাসীনরা) লাঠিয়াল বাহিনী, হেলমেট বাহিনী তৈরি করে জনগণের ওপর অত্যাচার করছে। জামিন পাওয়ার ‘ন্যায্য অধিকার’ থেকে দলীয় নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন। বিচারকরা একজনের নির্দেশে চলছেন। যিনি শাসন করছেন, তিনিই সব নির্দেশ করছেন।
বরিশালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমাদের লাঠিপেটা করেছে প্রশাসন। আমরা প্রশাসনকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলতে চাই, আপনারা বিবেক দিয়ে কাজ করুন।
সেলিমা রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে, মিছিলে মিছিলে সারা বাংলাদেশ মুখর। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলকে সংগঠিত করে নতুনভাবে দাঁড় করিয়েছেন। তার আহ্বান, আপনারা যে যেখান থেকে পারেন সরকারকে ‘না’ বলুন।
বিএনপি নেত্রী বলেন, সরকারের কোনো কিছুতে অংশগ্রহণ করবেন না। এমনকি দোকান শ্রমিক যারা আছেন, সবাই দোকানপাট বন্ধ করে দিন। বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করে দিন। বিয়ে-শাদির পার্টিগুলো ছোট করে দিন।
জনগণকে রাজপথে নামার ডাক দিয়ে সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমি বলব, মনে সাহস রাখুন। আমরা রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব। মিছিলে মিছিলে সারা বাংলাদেশ ভরে দেব। তবু এই সরকারের নির্বাচন আমরা মানব না, মানব না। আজকে ডান-বাম সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। অতি শিঘ্রই বাংলাদেশের জনগণ বর্তমান আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাবে।’
নেতারা বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করেছে। তখন থেকেই বিরোধী দলের ওপর দমন-নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। গ্রেফতার আতঙ্কের মধ্যেই হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তবে ৪৩ দিন পর বেশ কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করেছেন। আগামী দিনগুলোয় কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি আরও বাড়বে।
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত মানববন্ধনে অংশ নিতে সকাল ৯টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অংশ নেন গুম, খুন, নির্যাতন ও মামলার শিকার দলীয় নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা। কারও কোলে শিশু, কারও হাতে স্বজনের ছবি, প্ল্যাকার্ড। প্রিয়জনের জন্য আকুতি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে জড়ো হন বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। রাজধানীর প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ ও পল্টন মোড়ে নামে জনতার ঢল। স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো এলাকা। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে মানববন্ধন শুরু হয়। বক্তব্য দেন গুম, খুন, নির্যাতনের শিকার নেতাদের পরিবারের সদস্যরা। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কর্মসূচি শেষ করেন তারা। মানববন্ধন উপলক্ষ্যে পল্টন মোড় ও কদম ফোয়ারায় পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। পাশেই রাখা হয়েছে জলকামান ও এপিসি।
বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টো জয়নুল আবদিন ফারুক, তাহসিনা রুশদীর লুনা, দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির সহ-জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, রেহানা আখতার রানু, মীর নেওয়াজ আলী, তাইফুল ইসলাম টিপু, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বক্তব্য দেন। এছাড়া মামলা মাথায় নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন বিএনপি নেতারা।
