জনসমুদ্র থেকে ভোটের প্রচার শুরু আ.লীগের
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পুণ্যভূমি সিলেটে দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার শুরু করলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রচারের প্রথম দিন বুধবার শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষ্যে পুরো সিলেটবাসীর মধ্যে অন্যরকম উন্মাদনা সৃষ্টি হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আনুষ্ঠানিক প্রচারের শুরুর আগে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন শেখ হাসিনা। পরে সরকারি প্রটোকল ছাড়াই ব্যক্তিগত গাড়িতে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সিলেটের জনসভা মঞ্চে ওঠেন আওয়ামী লীগপ্রধান। তার আগেই লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে পুরো মাঠ উপচিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয়। সভা মঞ্চে উঠে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জাতীয় পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এরপর আঞ্চলিক ভাষায় গান গেয়ে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানায় সিলেটবাসী। সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল নির্বাচনি জনসভায় শেখ হাসিনা দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চান। এ সময় উপস্থিত লাখ লাখ মানুষ দুহাত তুলে এবং কণ্ঠে গগনবিদারী স্লোগান দিয়ে তাদের সমর্থনের কথা জানান।
নৌকা স্লোগানে মুখর : সিলেটের ১৯টি আসন থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভাস্থলে। সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নৌকা নৌকা স্লোগানে মাঠে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন আসনের এমপি প্রার্থীদের সমর্থকরা। আওয়ামী যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশ শুরুর আগে মিছিল নিয়ে নগরীতে মিছিল করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। হাতে লাল-সবুজ পতাকার সঙ্গে রঙিন পোশাক উৎসবের আমেজ তৈরি করে গোটা এলাকায়।
দুপুর ১টার সময় কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জনসভা শুরু হয়। মাঠে স্থান না পেয়ে আশপাশে অবস্থান নিয়ে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনেন হাজার হাজার মানুষ।
জনসভায় সাত স্বতন্ত্র প্রার্থী : জনসভায় সাতজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে যোগ দেন। জনসভা মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও তারা বক্তৃতার সুযোগ পাননি। তাদের মধ্য থেকে হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন মিছিল নিয়ে যোগ দেন। ব্যারিস্টার সুমন ছাড়া অন্য যারা জনসভায় যোগ দেন তারা হলেন-সুনামগঞ্জ-১ আসনে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয়াসেন গুপ্তা এমপি, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে শামীম আহমদ চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ আসনে কেয়া চৌধুরী ও গাজী মো. সাহেদ, হবিগঞ্জ-২ আসনে আব্দুল মজিদ খান এমপি।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরাও ছিলেন মাঠে। জনসভা শেষে তারা কেউ ট্রাক, কেউ ঈগল প্রতীকের স্লোগান দিয়ে মাঠ ছাড়েন। জনসভায় বক্তৃতাকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে বিবাদে না জড়ানোর পরামর্শ দেন।
চারটি স্পেশাল ট্রেন দিয়েছিল রেলওয়ে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট আগমন ও যাত্রীজটের কথা মাথায় রেখে রেলওয়ে চারটি স্পেশাল ট্রেন চালু করেছিল। ফলে ট্রেনে হাজার হাজার নেতাকর্মী অনেক দূরের জনপদ থেকেও জনসভায় অংশ নিতে সক্ষম হন। রেলওয়ে জানায়, স্পেশাল ছিল শায়েস্তাগঞ্জ-সিলেট-শায়েস্তাগঞ্জ রুটে ২ জোড়া, মনতলা-সিলেট-মনতলা এবং সিলেট-বরমচাল-কুলাউড়া-সিলেট রুটে এক জোড়া করে মোট ৪ জোড়া। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যাত্রী বৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা নেয় রেলওয়ে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিশেষ ট্রেনের কারণে প্রত্যন্ত এলাকার লোকজনও প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পেরেছেন। এজন্য রেলওয়েকে ধন্যবাদ।
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শুনলেন যে দুটি গান : সিলেটের জনপ্রিয় দুটি আঞ্চলিক গান মুগ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে। গান দুটি হলো-প্রখ্যাত গীতিকার সুরকার শ্রীমঙ্গলের এ কে আনামের ‘সুরমা নদীর তীরে আমার ঠিকানারে-বাবা শাহজালালের দেশ সিলট ভূমিরে।’ গানটি পরিবেশন করেন সিলেটের আঞ্চলিক গানের প্রখ্যাত শিল্পী জামাল উদ্দিন হাসান বান্না ও তার দল। অপর গানটি হচ্ছে বাউল শাহ আব্দুল করিমের ‘কোন মেস্তরী নাও বানাইলো কেমন দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করে ময়ূর পঙ্খী নায়’ গানটি। স্বাধীনতা সংগ্রামী শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাসের নেতৃত্বে পরিবেশন করেন সিলেটের একদল শিল্পী।
কামরানবিহীন মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী : শেখ হাসিনা সিলেট সফরে এলেই কামরান নিজেই মঞ্চে জনপ্রিয় গানগুলো গাইতেন এবং মঞ্চ ও দর্শকসারির লাখো মানুষ তার সঙ্গে কণ্ঠ মেলাতেন। ২০২০ সালের ১৫ জুন করোনা কেড়ে নেয় সিলেটের জনপ্রিয় জননেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। ফলে এবার প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে সিলেটের শীর্ষ সারির সব নেতা থাকলেও ছিলেন না শুধু সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
