Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি

যেন হ্যামিলনের বাঁশির সুরে উত্তাল জনসমুদ্র

Icon

বরিশাল ব্যুরো

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যেন হ্যামিলনের বাঁশির সুরে উত্তাল জনসমুদ্র

রাজপথের বাইরে থাকা আওয়ামী লীগের নীরব সমর্থকদের শক্তি দেখল বরিশাল। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুক্রবারের জনসভায় উপস্থিত জনতা বুঝিয়ে দিল নীরবে-নিভৃতে কতটা শক্তিশালী স্বাধীনতার প্রতীক ‘নৌকা’। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আয়োজিত এই জনসভায় শেখ হাসিনা যেন ছিলেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। যার কথা শুনতে আসা জনতার ঢল বিশাল মাঠ ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় নগরের অলিগলিতে। সমুদ্রের ঢেউর মতো আসা এই লাখো মানুষ দেখে হতবাক দলের নেতারাও। চাওয়ার তুলনায় এটা অনেক বড় পাওয়া বলে মন্তব্য তাদের। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম সক্রিয়ভাবে রাজনীতি না করলেও ভোট দেন নৌকায়। গতকাল শেখ হাসিনার জনসভায় আসার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘নেতা লাগবে ক্যান, শেখ মুজিবের মেয়ের কথা শুনতে এসেছি। পকেটের পয়সায় বাস ভাড়া দিয়ে। আমেরিকা নাকি আমাদের শাসন করতে চায়। এখন তো আর ঘরে থাকার সময় নেই। নিজেরা নিজেদের শাসন করব আমরা। তার প্রমাণ দিতেই এসেছি জনসভায়।’ বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব আজাহার আলী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে নাকি অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দুঃসময়ে নৌকার পাশে না থাকলে আর কখন থাকব?’

৫ বছরেরও বেশি সময় পর বরিশালে আসা শেখ হাসিনার জনসভায় এ রকম বহু মঞ্জুরুল আর আজহারের দেখা মেলে গতকাল। আওয়ামী লীগে কোনো পদ-পদবি বা দলের সক্রিয় কর্মী না হয়েও এরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু উদ্যানের জনসভায়। কীর্তনখোলা নদীর পূর্ব পারের বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, ‘এহন তো দেহাইন্যার সোমায় যে আওয়ামী লীগ কী, দ্যাশে নৌকার কী পরিমাণ লোক আছে। হেইডা দেহাইতেই মিটিংয়ে আইছি।’

বরিশালে আসার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে সড়কপথে রওয়ানা হন সকাল সোয়া ৯টায়। এদিকে সকাল ৭টা থেকেই তার জনসভাস্থলে আসতে শুরু করে মানুষ। নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জড়ো হতে থাকে সবাই। একপর্যায়ে পুরো নগর পরিণত হয় মিছিলের নগরে। সবার গন্তব্য যেন একটাই, বঙ্গবন্ধু উদ্যান। কেবল বরিশাল নগরই নয়, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা আর ৪২ উপজেলা থেকেও জনতার ঢল আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে। ভোলা জেলা থেকে দুটি ডবল ডেকার লঞ্চ বোঝাই করে নদীপথে জনসভায় আসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

ভোলা-৪ আসনের সংসদ-সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, ‘লঞ্চ ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছে কর্মী-সমর্থকরা। অনেকে বৃহস্পতিবার এসে অবস্থান করেছে বরিশালে।’ নৌপথে সবচেয়ে বেশি নৌযান বোঝাই করে নেতাকর্মীরা আসে বরিশাল-৪ আসনের এমপি পঙ্কজ দেবনাথের এলাকা থেকে। অনেকগুলো লঞ্চ বোঝাই করে দলের নেতাকর্মীদের জনসভাস্থলে আনেন পঙ্কজ। পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি মুহিববুর রহমান বলেন, ‘জননেত্রী আমার এলাকায় পায়রাবন্দর, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছেন। কুয়াকাটার উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কারণে আমার এলাকা থেকে সর্বস্তরের বিপুলসংখ্যক মানুষ নিজেদের উদ্যোগেই এসেছে জনসভায়।’

গর্বের পদ্মা সেতু হয়ে সড়কপথে ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে দুপুর ১টা নাগাদ বরিশালে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নগরে প্রবেশ করে প্রথমে সার্কিট হাউজে যান তিনি। নামাজ আদায়, দুপুরের খাওয়া এবং খানিকক্ষণ বিশ্রামের পর বিকাল পৌনে ৪টা নাগাদ গিয়ে পৌঁছান জনসভাস্থলে। ততক্ষণে জনতার ঢল মাঠ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে জনসভাস্থলের চারপাশের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত। উত্তরে ভাটার খাল-সার্কিট হাউজ, দক্ষিণে ভিআইপি কলোনি পর্যন্ত পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য। জনসভা বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য বলরাম পোদ্দার বলেন, ‘জননেত্রীর জনসভায় লোক সমাগমের উদ্যোগ আর চেষ্টা দুটোই ছিল আমাদের। কিন্তু আজকের জনসমুদ্র দেখে যেটা বুঝেছি যে কেবল আমাদের আহ্বান-উদ্যোগ নয়, হাজার হাজার মানুষ জনসভাস্থলে এসেছে কেবল প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের ভালোবাসার কারণে। বিষয়টি সত্যিকার অর্থেই অভিভূত করেছে আমাদের।’ জনসভা মাঠে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীরা আসেন নানা বর্ণের রঙিন সাজে। বরিশাল সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম এমপির সমর্থকরা মাঠে আসেন কমলা রংয়ের গেঞ্জি আর ক্যাপ পরে। সাবেক মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সমর্থকদের মাথায় থাকা ক্যাপের রং ছিল হলুদ। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে দল বেঁধে রংবেরঙের টুপি আর গেঞ্জি পরে জনসভায় যোগ দেয় কর্মী-সমর্থকরা। একপর্যায়ে পুরো মাঠ ভরে যায় বর্ণিল রংয়ের নানা সাজে।

৫ বছর পর বরিশালে আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যেমন এই অঞ্চলের মানুষের ছিল অনেক দাবি, তেমনি আওয়ামী লীগ সভাপতিও বরিশালের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেন গতকালের জনসভায়। উপস্থিত জনতাকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেস সড়ক হয়েছে। ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৬ লেন সড়ক নির্মাণের কাজও চলছে। এডিবির সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব শিগগিরই এই ৬ লেন সড়কের কাজ মাঠ পর্যায়ে শুরু হবে। বরিশালে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করব আমরা।’ বরিশালকে এক সময়ের শস্যভান্ডার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুরোনো সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে এই অঞ্চলে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ভোলার গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে বরিশালে এনে এখানকার শিল্প-কলকারখানায় সরবরাহ করা হবে। এখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কাজ করছি আমরা। এছাড়া কুয়াকাটায় তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের মাধ্যমে এই অঞ্চলকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরও উন্নত করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এসব ঘোষণার সময় মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে উল্লাস করে উপস্থিত জনতা। প্রধানমন্ত্রীর সফর বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা ছিল প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্মরণীয় করে রাখার পাশাপাশি এখানে স্মরণাতীতকালের বৃহত্তম একটি গণজমায়েত করা। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে আমাদের সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে আমরা বরণ করেছি আমাদের দলীয় সভাপতি জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।’ জনসভার কর্মসূচি শেষে বঙ্গবন্ধু উদ্যান থেকেই সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওয়ানা হন প্রধানমন্ত্রী। আজ শনিবার সেখানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভায় তার বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম