ফরিদপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
নৌকা মার্কাই দিতে পারবে সমাধান
নৌকা ক্ষমতায় থাকলে মানুষ খেয়েপরে শান্তিতে থাকতে পারে * প্রত্যেক মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করাই আমাদের লক্ষ্য
জাহিদ রিপন, ফরিদপুর
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নূহ নবির নৌকা এক দুর্যোগের সময়ে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। সেভাবে নৌকা ক্ষমতায় এলে মানুষের উন্নয়ন হয়, মানুষের ভাগ্যের উন্নতি হয়। নৌকা ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ খেয়েপরে শান্তিতে থাকতে পারে। অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয় না।
তিনি বলেন, আমাদের আরও কাজ বাকি। এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, কে ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে গড়ে উঠবে? এ সময় উপস্থিত সবাই ‘নৌকা’, ‘নৌকা’ বলে চারপাশ প্রকম্পিত করে তোলে। শেখ হাসিনা বলেন, শুধু নৌকা মার্কা ভোট পেলেই আমি সরকারে আসতে পারব। আর উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে গড়তে পারব। নৌকা মার্কাই দিতে পারবে এর সমাধান।
মঙ্গলবার ফরিদপুর শহরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর সার্কিট হাউজ থেকে দুপুর ৩টা ১২ মিনিটে রাজেন্দ্র কলেজ মাঠের জনসভা মঞ্চে পৌঁছান। তিনি বেলা ৩টা ৪২ মিনিটে জনসভায় বক্তব্য রাখেন এবং বক্তব্য শেষ করেন বেলা ৪টা ২৪ মিনিটে। জনসভায় খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তারপর তারা দেশে দুঃশাসন কায়েম করেছিল। ২০০৮ সালে তারা (বিএনপি) মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। জনতার ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এবার ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। তাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে তার সময়কার নানা উন্নয়নের ফিরিস্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা সরকারে এসে মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন দিতে পেরেছি। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দিতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবায় বিপ্লব ঘটেছে। শিশুদের শিক্ষার জন্য কম্পিউটার দিতে পেরেছি। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সেবার কারণে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করতে পেরেছি। এখন তারা ঘরে বসে উদপাযন করতে পারছে। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে।
যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্যমন্দা চলছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বাড়লেও এর মধ্যে আমরা কাজ করছি। তাই কোনো জমি পতিত (অনাবাদি) রাখা যাবে না। শাকসবজি, ফলমূল, পুকুরে মাছ, হাঁস-মুরগি পালন করতে হবে। আমি গণভবনে নানা শাকসবজি চাষাবাদ করেছি। আপনারা কোনো জমি অনাবাদি রাখবেন না।
পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। তারা দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। চ্যালেঞ্জ করে আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছি। আমরা কারও কাছে মাথা নত করিনি। তাই আজ ঢাকা থেকে মাত্র সোয়া দুই ঘণ্টায় পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরে এসে জনসভায় যোগ দিতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সালে বলেছিলাম, মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। আমরা ভূমিহীন মানুষের মাঝে দুই কাঠা জমিসহ ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এছাড়া ঢাকাতে ভূমিহীন বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ হচ্ছে। এছাড়া বয়স্ক ভাতা চালু করেছি। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ২৬ লাখ মানুষ ৩ মাস পরপর ভাতা পাচ্ছে। এছাড়া ২৯ লাখ ১০ হাজার প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে যারা লেখাপড়া করে তাদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় ৫ কোটি নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে চাল, ডাল, তেল, আটাসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনা পয়সায় বছরের শুরুতে শিশুদের হাতে বই তুলে দিতে পেরেছি। এতে তিন কোটি ৯৪ লাখ শিক্ষার্থী পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি তাদের কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কম্পিউটার শিক্ষায় হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হবে। এতে ৮৪ লাখ মা-বোনসহ শিক্ষার্থীরা সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সুবিধা পাবে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের উন্নয়নে আমরা কাজ করতে চাই। তাই মানুষের কষ্ট লাঘবে টিআর, জিআর, কাবিখা, কাবিটা চালু করেছি। প্রত্যেক মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করা আমাদের লক্ষ্য।
জনসভায় শেখ হাসিনা ফরিদপুরে চারটি আসনসহ রাজবাড়ী, মাগুরা আসনের নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় তিনি ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-২ আসনে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী পুত্র শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী, ফরিদপুর-৩ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকার প্রার্থী শামীম হক, ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্লাহ, মাগুরা-১ আসনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নৌকার প্রার্থী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেন।
এছাড়া তিনি রাজবাড়ী-১ ও রাজবাড়ী-২ আসনের নৌকার প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, টাকা দিয়ে ফরিদপুরের জনগণকে কেউ কিনতে পারে নাই, পারবে না। এই মাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মাটি। এ মাটি খাঁটি মাটি। সেক্ষেত্রে একমাত্র নৌকা মার্কাই দেবে আপনাদের সমাধান।
প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এক পর্যায়ে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে দেখিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একটা রত্ন আছে, এই রত্নটা ক্রিকেট রত্ন। মাগুরা-১ আসনে এবার আমরা নমিনেশন দিয়েছি-সাকিব আল হাসানকে । সে বলছে, বক্তৃতা দিতে পারে না। তিনি বলেন, আমি বলেছি, বক্তৃতা দেওয়ার দরকার নেই। তুমি খালি বলবা যে, তুমি ছক্কা মারতে পারো, আর বল করে উইকেট ফেলে দিতে পারো; তাহলেই হবে। এবারের ইলেকশনে ছক্কা মেরে দিয়ো।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতির ফরিদপুর সফরকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ ছিল। জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আসতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। নানা রঙের শাড়ি, রঙিন ক্যাপ-পোশাক পরে বাঁশি-বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মাঠে আসেন দলীয় সমর্থকরা। সঙ্গে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড। দুপুর ১টা ৮ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াত, গীতা ও বাইবেল পাঠের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়।
ফরিদপুর জেলা আ.লীগের সভাপতি শামীম হক সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ। বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মাগুরা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, ফরিদপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী, পৌর মেয়র অমিতাব বোস, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন, কেএম আবুল খসরু, কেএম সেলিম, নিয়াজ জামান সজিব প্রমুখ।
