Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

টানা চতুর্থবার স্পিকার হলেন ড. শিরীন শারমিন

ডেপুটি শামসুল হক টুকু

Icon

সংসদ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

টানা চতুর্থবার স্পিকার হলেন ড. শিরীন শারমিন

টানা চতুর্থবারের মতো জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হলেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। মঙ্গলবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে তাকে স্পিকার হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। এর আগে বিকাল ৩টায় একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ সরকারি, বিরোধী দল এবং স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অধিবেশনের শুরুতে ডেপুটি স্পিকার সবাইকে স্বাগত জানান। এরপর নতুন স্পিকার নির্বাচন করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্পিকার হিসাবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেন। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সম্পাদক ও চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। স্পিকার হিসাবে অন্য কোনো মনোনয়ন ছিল না। পরে কণ্ঠভোটে নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ডেপুটি স্পিকার এ সময় সর্বসম্মতিক্রমে ও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা করেন।

এরপর ২০ মিনিটের জন্য সংসদ অধিবেশন মুলতবি করা হয়। এ সময় সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে নতুন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বিরতির পর অধিবেশনের সভাপতির আসনে বসেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকার নির্বাচিত করায় তিনি সংসদ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এ সময় তাকে অভিন্দন জানিয়ে বক্তব্য দেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং একই দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। জিএম কাদের তার বক্তব্যে সংসদকে কার্যকর করতে স্পিকারের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, পুরো সংসদ সরকারি দলের। এখানে বিরোধীদলের সদস্যরা খুবই সামান্য। তাই বর্তমান সংসদ জাতির প্রতিনিধিত্ব সঠিকভাবে করতে পারবে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, আমরা আশা করব স্পিকার আমাদেরকে বেশি করে সরকারবিরোধী মতামত তুলে ধরার সুযোগ দেবেন।

পরে ডেপুটি স্পিকার হিসাবে অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুকে নির্বাচিত করা হয়। এরপর সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে নতুন ডেপুটি স্পিকারকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাাবনা-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট শামসুল হক (টুকু)।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ডেপুটি স্পিকার হিসাবে শামসুল হক টুকুর নাম প্রস্তাব করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সংসদ-সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম। সমর্থন করেন পাবনা-৩ এর সংসদ-সদস্য মকবুল হোসেন। ডেপুটি স্পিকার হিসাবে শুধু শামসুল হক টুকুর নাম প্রস্তাব আসে। আর কোনো নাম না থাকার পরেও কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী প্রস্তাবটি ভোটে দেওয়া হয় এবং সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে কণ্ঠভোটে তা পাশ হয়। ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট শামসুল হক টুকু প্রথম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হন। সে সময় একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে ডেপুটি স্পিকারের পদটি শূন্য হয়েছিল।

এরপর পাঁচ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মনোনিত করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অবর্তমানে তারা অধিবেশন পরিচালনা করবেন। এরপর নতুন সংসদের এবং বছরের প্রথম অধিবেশন হওয়ায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে সংসদে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তাকে আবারও স্পিকার নির্বাচনের বিষয়ে গত ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। পেশায় আইনজীবী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর জন্ম ১৯৬৬ সালে ৬ অক্টোবর ঢাকায়। তার বাবা সাবেক সচিব রফিকউলাহ চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব, মা অধ্যাপক নাইয়ার সুলতানা বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য ছিলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এলএলবি (অনার্স) এবং ১৯৯০ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের এসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে ‘দ্য রাইট টু লাইফ’ অর্থাৎ, মানুষের জীবনের অধিকার, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক আইন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী হিসাবে জনস্বার্থ, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক বিভিন্ন মামলা পরিচালনা করেছেন। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন মামলার প্যানেল আইনজীবী ছিলেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তৎকালীন স্পিকার অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকার নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর থেকে টানা এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম