জাবিতে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ গঠন
দ্রুত বিচার দাবিতে মানববন্ধন
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের বিচার দাবিতে সোমবার বুয়েট শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন -যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ঘটে যাওয়া অতীত ও বর্তমানের সব নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’ গঠন করা হয়েছে।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদের নতুন ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে মঞ্চ গঠন করা হয়। এর আগে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থীদের করা মানববন্ধনে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার দাবি করা হয়। এদিকে ভুক্তভোগী নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের সংগঠকরা জানান, সম্প্রতি অন্যায়-অপকর্ম ও নিপীড়নের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনি থেকে শুরু করে মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশের জঙ্গলে নারী ধর্ষণ ঘটনার মূল কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি এখনই বন্ধ না করলে নিপীড়করা আরও সাহস পেয়ে যাবে। তাদের এখনই মূলোৎপাটন করতেই এ মঞ্চ গঠন করা হয়েছে।
মঞ্চের সংগঠক ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, এ আন্দোলন যারা পরিচালনা করবে তাদের নিয়ে আজ বেলা ১১টায় মঞ্চের কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ মঞ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের।
এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অন্যায়-অপকর্ম, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে কাজ করবে। নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচারে গঠিত স্ট্রাকচার্ড কমিটির সমালোচনা করে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক বিভিন্ন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস কমিটি গঠন করা হয়। সবার শেষে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি আগের কমিটিগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠনের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তার বিচার নিশ্চিত করা হয়নি।
উপাচার্য এ কমিটির প্রধান হয়েও বিচার করছেন না। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই এ ধরনের ঘটনার পুরোপরি দায় উপাচার্যকে নিতে হবে। দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া ও অধ্যাপক রায়হান রাইন, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বক্তব্য দেন। এছাড়া মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত অন্যসব রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদের নতুন ভবনের সামনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। মানববন্ধনে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। ‘রাতের আঁধারে ধর্ষণ করে, প্রশাসন কী করে’, ‘অপরাধীর শাস্তি চাই, জাবিতে ধর্ষকের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড তারা বহন করেন।
এদিকে ধর্ষণ ঘটনার বিচার দাবিতে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধীরা গণ-পোস্টারিং কর্মসূচি পালন করেছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধীরা গণ-পোস্টারিং কর্মসূচি পালন করে।
গণ-পোস্টারিং চলাকালে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেও বহু নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিপীড়কদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমরা ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ সব ঘটনার বিচার চাই।
আশুলিয়া থানায় জাবি প্রশাসনের অভিযোগ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রক্টরিয়াল বডি, হল প্রশাসন ও নিরাপত্তা শাখার লোকজনসহ পুলিশ অপরাধীদের আটক করতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহ পরান, একই বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এ এসএম মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকি ও ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন সাগর অভিযুক্তদের পালাতে সহায়তা করেন।
এ সময় অভিযুক্তদের সহযোগিতাকারীদের হল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয়। তবে ধর্ষণের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত বহিরাগত মামুন অভিযোগপত্রের আওতাভুক্ত কি না জানতে চাইলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও আইন কর্মকর্তা মাহতাব-উজ-জাহিদ এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি সুজনের : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। এ ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের আইনের আওতায় আনা ও তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গণমাধ্যমে পাঠানো সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সই করা বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে। এই অভিযোগ ওঠেছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতা ও কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
সুজন মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় হলো-সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, জ্ঞান চর্চাকেন্দ্র। এখান থেকেই জ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটে এবং শিক্ষার্থীরা জীবনমুখী ও নৈতিক শিক্ষা পায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই যখন ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটে, তখন আমরা অবাক ও ক্ষুব্ধ না হয়ে পারি না।
তাছাড়া ধর্ষণের মতো অপরাধ ও অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে যে তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ জানানো ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা সেখানে তাদের বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা আমাদের মনে শঙ্কা তৈরি করছে। তাছাড়া বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরির অভিযোগসহ এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিও আমাদের শঙ্কার আরেকটি কারণ।
বিবৃতিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয়, অন্যথায় বাদীপক্ষ বিচার পাবেন না এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। আমরা একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ দেশের সর্বত্র নারী ও শিশুসহ সব নাগরিকের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে হলরুমে আটকে রেখে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এবং ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর দেড়টায় বুয়েট শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা- ‘ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, ধর্ষণ বন্ধ করো, রুখে দাঁড়াও; সারা দেশে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করো; এ বাংলার মাটিতে ধর্ষকদের ঠাঁই নাই; নারীদের ওপর সহিংসতা বন্ধ করুন; স্টপ ভায়োলেন্স একেইনেস্ট ওমেন’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ‘বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
