তিন সংস্করণেই অধিনায়ক নাজমুল
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ছয় ঘণ্টার ম্যারাথন সভায় বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) পরিচালনা পর্ষদ সবচেয়ে বড় ছক্কা যেটি হাঁকিয়েছে, সেটি হলো গাজী আশরাফ হোসেনকে প্রধান নির্বাচকের চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া। যাকে নিয়ে আলোচনার লেশমাত্রও ছিল না, বাংলাদেশের প্রথম সাতটি ওডিআই’র সেই অধিনায়ক হঠাৎ আড়াল থেকে আলোয়। গাজী আশরাফের প্রধান নির্বাচক হওয়া যেমন সবচেয়ে বড় চমক, নাজমুল হোসেনের অধিনায়ক হওয়া তেমনি প্রত্যাশিত। তিন সংস্করণেই নাজমুল এখন বাংলাদেশের অধিনায়ক। নেতৃত্বের অমৃতে সাকিব আল হাসানের অরুচি নাজমুলের সামনে সুযোগের কপাট খুলে দিয়েছে। আর সাবেক অধিনায়ক ও স্টাইলিশ ব্যাটার গাজী আশরাফের প্রধান নির্বাচক হওয়া মানে মিনহাজুল আবেদীন অধ্যায়ের সমাপ্তি। তার সঙ্গে বিদায় নিতে হয়েছে হাবিবুল বাশারকেও। আগের নির্বাচক প্যানেলের একমাত্র আবদুর রাজ্জাককে রেখে তৃতীয় সদস্য হিসাবে যুক্ত করা হয়েছে হান্নান সরকারকে। দীর্ঘদিন বয়সভিত্তিক নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করার পর আরও বড় পরিসরে ব্যাপৃত হলেন সাবেক ব্যাটার হান্নান।
সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছয় মাস পর হওয়া বোর্ডসভা শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দলের নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করেন। যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী হওয়ার পর এটাই নাজমুলের বিসিবিতে প্রথম সভা। নতুন অধিনায়ক ও নতুন নির্বাচক কমিটির পাশাপাশি সভায় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় চুক্তির জন্য ২১ জনের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। কয়েকজন কোচ নিয়োগের ব্যাপারেও হয়েছে অগ্রগতি। ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের জন্য গঠিত বিশেষ কমিটি তাদের রিপোর্ট পেশ করলেও সভায় সেটা নিয়ে আলোচনা করার সময় হয়নি।
২০২৪ সালের জন্য নাজমুলকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিসিবি সভাপতি। আপাতত কোনো সহ-অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়নি। এতদিন তিন ফরম্যাটেই অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক বিষয় হিসাব করে বলা যায় সাকিবের অধিনায়কত্বের অধ্যায় শেষ। দিল্লিতে বিশ্বকাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে সবশেষ নেতৃত্ব দিয়েছেন এই বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার। গত অক্টোবরে ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে এক টিভি সাক্ষাৎকারে সাকিব জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপের পর আর একদিনও অধিনায়ক থাকবেন না। তবে বিশ্বকাপের মধ্যে তার চোখের সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় সব ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব থেকেই সাকিবকে বাইরে রাখা হয়েছে। তার আগে সাকিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বিসিবি সভাপতির। বিশ্বকাপে সাকিবের চোটের কারণে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পুনেতে দুটি ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাজমুল। ইনজুরির কারণে ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এবং নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি ২০ সিরিজে ছিলেন না সাকিব। তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে একটি করে ম্যাচ জেতানোয় বড় ভূমিকা রাখেন নাজমুল। কাল বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘অধিনায়কত্বের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আজকের (সোমবার) সভায় একটু বেশি সময় গেছে। তিন সংস্করণে নাজমুল হোসেন শান্তকে অন্তত এ বছরের জন্য আমরা অধিনায়ক হিসাবে নির্ধারণ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘সহ-অধিনায়ক থাকবে। তবে এ সভায় নিশ্চিত করা হয়নি। সব সিরিজে সব ক্রিকেটার থাকবে কিনা আমরা নিশ্চিত নই। একজন টেস্ট-ওয়ানডেতে আছে, টি ২০তে নাও থাকতে পারে। আমরা মোটামুটি নির্ধারণ করে ফেলেছি, সহ-অধিনায়ক কে হবে। তবে নির্দিষ্ট সিরিজে কোন ক্রিকেটার থাকছে, তার ওপর নির্ভর করে এটা পরিবর্তন হতে পারে। সহ-অধিনায়কের নাম খুব দ্রুতই জানিয়ে দেওয়া হবে।’ এখন পর্যন্ত নাজমুল তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১১ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশকে। তিন সংস্করণ মিলিয়ে সাকিব অধিনায়কত্ব করেছেন ১২০ ম্যাচে।
নতুন অধিনায়কের সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট পেয়েছে নতুন নির্বাচক কমিটিও। আগের কমিটির শুধু আব্দুর রাজ্জাক রয়েছেন এই কমিটিতে। বাদ পড়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশার। বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেনকেই যোগ্য মনে করেছে বিসিবি। প্রথমে তিনি রাজি হচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তাকে রাজি করানো হয়েছে। আর জুনিয়র নির্বাচক কমিটির সদস্য হান্নান সরকারকে তৃতীয় সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মিনহাজুল এবং হাবিবুল বাশারের অবদানের কথা মাথায় রেখে তাদের বিসিবির অন্য কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের কমিটির দায়িত্ব রয়েছে। ১ মার্চ থেকে নতুন নির্বাচক কমিটি তাদের কাজ শুরু করবে। শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের দলই তাই হবে মিনহাজুল কমিটির শেষ কাজ।
এদিকে সাকিব শ্রীলংকার বিপক্ষে হোম সিরিজে খেলবেন না। চোখের সমস্যার কারণে ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের কাছে ছুটি চেয়েছেন তিনি। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম ইকবালের ফেরার সম্ভাবনা নেই। সভায় ২০২২-২০২৩ সালের আয়-ব্যয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রথম শ্রেণির ৮৫ ক্রিকেটারের বেতন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
