Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিপিএল ২০২৪

বরিশালের প্রথম শিরোপা জয়

Icon

জ্যোতির্ময় মন্ডল

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশালের প্রথম শিরোপা জয়

ম্যাড়ম্যাড়ে, অগোছালো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ফাইনালে এসে হয়ে গেল বিশ্বকাপের চেয়েও উত্তেজনাকর! দর্শকদের সীমাহীন আগ্রহ মিরপুরের গ্যালারিতে লাল উৎসবে রূপ নিয়েছিল। ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় হাজার দশেক বেশি দর্শকের উন্মাতাল উন্মাদনার প্রতিফলন অবশ্য মাঠের লড়াইয়ে দেখা গেল না। 
এর আগে তিনবার ফাইনালে হারা বরিশাল অবশেষে তামিম ইকবালের হাত ধরে বিপিএলে নিজেদের প্রথম শিরোপার দেখা পেল। রেকর্ড চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এই প্রথম হারল ফাইনালে। 

শুক্রবার মিরপুরে ফাইনালে ডেভিড মিলারের বাইন্ডারিতে ছয় বল বাকি থাকতে ছয় উইকেটের জয় নিশ্চিত হতেই দৌড়ে মাঠে ঢোকেন বরিশালের ক্রিকেটাররা। এরপরই চলতে থাকে আতশবাজির ফোয়ারা। দশম আসরে এসে চতুর্থ ফাইনাল খেলতে নেমে সফল বরিশাল। কুমিল্লাকে মাত্র ১৫৪ রানে আটকে রেখে এবার আর পা হড়কায়নি তারা। টস জিতলেই নাকি মিরাপুরে ম্যাচ জেতা হয়ে যায়। বিপিএলে এবারের আসরে এমনটাই হয়েছে। কাল টসের পরই প্রেসবক্সে এক সাংবাদিক জানান, এবার তাহলে শিরোপাখরা কাটছে বরিশালের। 

বিপিএলে বরিশাল যেমন আগে কখনো শিরোপা জিততে পারেনি, তেমনি বাংলাদেশের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমেরও শিরোপা ছোঁয়া হয়নি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের শিরোপা না জেতার সেই আক্ষেপ এবার শেষ হলো। অধিনায়ক হিসাবে তামিম ইকবাল জিতলেন প্রথম শিরোপা। সবার প্রথমের যে আলাদা তৃপ্তি সেটা ম্যাচ জয়ের পরই দেখা গেল বাঁধনহারা উদযাপনে। 

বিপিএলের প্রতিটি ম্যাচের পরই প্রায় দুই লাখ টাকার আতশবাজি ফোটানো হয়। ফাইনালের জন্য সেটা রাখা হয়েছিল আরও কয়েকগুণ বেশি। দল গঠনের শুরু থেকে অনেকে যাদের বুড়োদের দল বলেছিলেন সেই বরিশাল হাসল শেষ হাসি। তামিম হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। 

২০২২ সালের ফাইনালে এই কুমিল্লার বিপক্ষেই মাত্র ১৫১ রানের লক্ষ্যে নেমেও এক রানের আক্ষেপে পুড়েছিল এই বরিশাল। এবার ঠিক তিন রান বেশি করেছিল কুমিল্লা। ফাইনাল হওয়ায় শুরুতে লক্ষ্যটা মোটেও মামুলি মনে হয়নি। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ দারুণ শুরুতে সব সংশয় মুছে দেন। আট ওভারে দুজন গড়েন ৭৬ রানের জুটি। তামিম ৩৯ ও মিরাজ ফেরেন ২৯ করে। ছয় রানের ব্যবধানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর দেখা গেল কাইল মায়ার্স-ঝলক। 

টানা ভালো খেলেছে বরিশালের শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক মায়ার্স। হলেন ফাইনাল সেরাও। মায়ার্সের ৩০ বলে ৪৬ রানের দারুণ ইনিংসেই জয়টা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় বরিশালের। মুশফিক ফেরেন ১৩ করে। এরপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে যোগ দিয়ে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন ডেভিড মিলার। দুটি করে উইকেট পান মাথা ফাটার পর প্রথমবার মাঠে নামা মোস্তাফিজুর রহমান ও মঈন আলী।

এর আগে টসে জিতে বরিশাল সিদ্ধান্ত নেয় ফিল্ডিংয়ের। প্রথম ওভারেই কুমিল্লার ওপেনার সুনীল নারিনের উইকেট হারায়। চার বলে পাঁচ রান করে সাজঘরে ফেরেন নারিন। কাইল মায়ার্সের বলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ নেন ম্যাককয়। যিনি দুই বল আগে নারিনের সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে কুমিল্লা আরও বড় আঘাত পায়। এবার আউট তাওহিদ হৃদয়। ফুলারের বলের থার্ডম্যান অঞ্চলে ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। ৩০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় কুমিল্লা। ১০ বলে ১৫ রান করা তাওহিদ টুর্নামেন্ট শেষ করেন ৪৬২ রানে।

ষষ্ঠ ওভারের মধ্যে কুমিল্লা হয়ে যায় ৩/৪২। এবার বিদায় নেন স্বয়ং অধিনায়ক। শিকারি সেই ফুলার। আবারও ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। অফ-স্টাম্পের বাইরে পিচ করা খাটো লেন্থের বল সপাটে মেরেছিলেন লিটন দাস। থার্ডম্যানে অনায়াসে মাহমুদউল্লাহ মুঠোবন্দি করেন ক্যাচ। লিটনের অবদান ১২ বলে ১৬। তিনটি চার। 

জনসন চার্লস যখন বিপজ্জনক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন, তখনই আঘাত হানেন ম্যাককয়। টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় চার্লস বল তুলে দেন আকাশে। মিড-অফে তামিমের নিরাপদ হাতে জমা পড়ে ক্যাচ। ১৭ বলে ১৫ রান করে বিদায় নেন চার্লস। ১০ ওভার শেষে কুমিল্লার পুঁজি ছিল ৪/৬৭।

কুমিল্লা পঞ্চম উইকেট হারায় মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে মিরাজের সরাসরি থ্রোয়ে স্ট্রাইকার এন্ডের স্টাম্প যখন ছত্রখান, মঈন আলী পপিং ক্রিজের বাইরে। ছয় বলে তিন রান করে শুকনো মুখে ইংলিশ অলরাউন্ডার সাজঘরে ফেরেন কুমিল্লাকে ৫/৭৯ এ রেখে।

কুমিল্লা ১০০ স্পর্শ করে ১৬তম ওভারে একটি ওয়াইডের মাধ্যমে। দুই রানে ‘জীবন’ পাওয়া মাহিদুল ইসলামের (৩৫ বলে ৩৮) বোল্ড হওয়ার মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে জাকের আলীর সঙ্গে তার ৩৬ রানের জুটি ভাঙে। দুটি করে চার ও ছক্কা হাঁকানো মাহিদুল ১৬.৪ ওভারে কুমিল্লাকে রেখে আসেন ৬/১১৫ এ।

আন্দ্রে রাসেল যখন ক্রিজে আসেন, মাত্র ২০ বল বাকি তখন কুমিল্লার ইনিংসের। ফুলারের এক ওভারে ২১ রান নেওয়া ক্যারিবীয় দৈত্য রাসেল অপরাজিত থাকেন ১৪ বলে ২৭ রানে। কুমিল্লার ইনিংসে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট তার ১৯২.৮৫। চারটি ছক্কায় কুমিল্লাকে পৌঁছে দেন ১৫৪/৬ এ। সপ্তম উইকেটে জাকের আলীর সঙ্গে ৩৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন রাসেল। জাকের অপরাজিত থাকেন ২০ রানে। দুটি উইকেট নেন জেমস ফুলার।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছেন যারা, তাদের স্মরণে ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিপিএলের ফাইনালে এর আগে এই দুদল খেলেছিল ২০২২ সালে। সেবার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে কুমিল্লা এক রানে নাটকীয়ভাবে জিতেছিল বরিশালের বিপক্ষে। এবারের আসরে কুমিল্লা প্রথম কোয়ালিফায়ারে ছয় উইকেটে রংপুরকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। বরিশাল এলিমিনেটর-পর্বে চট্টগ্রামকে সাত উইকেটে এবং দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ছয় উইকেটে রংপুরকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয়।

প্রথম জয়ে বরিশালে উল্লাস : বরিশাল ব্যুরো জানায়, প্রথম বিজয়ে আনন্দ উল্লাস বইছে বরিশালে। শুক্রবার খেলা উপলক্ষ্যে বরিশালের বিনোদনকেন্দ্রসহ পাড়া-মহল্লায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে খেলা দেখেন বরিশালবাসী। 
বিজয়ের পরপরই নগরবাসী ভুভুজেলা, ঢোলবাদ্য নিয়ে নগরীর সড়কে আনন্দ মিছিল করে। পাশাপাশি রাতভর উৎসবে মেতে করেছে পিকনিক। 

এর আগে নগরী ঘুরে দেখা যায়, বিবির পুকুরপাড়, বেলস্ পার্ক, নতুন বাজার টেম্পো স্টান্ড, জিলা স্কুল মোড়, আমানতগঞ্জ, কাউনিয়া, আলেকান্দা, রূপাতলী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন মহল্লায় বড় পর্দায় খেলা দেখেছে নগরবাসী।

নগরীর কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোডের তরিকুল ইসলাম ইয়াদ বলেন, ফরচুন বরিশালের প্রথম বিজয় এ অঞ্চলকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিল। 

নগরীর রূপাতলীর বাসিন্দা ইমতিয়াজ অমিত বলেন, প্রতিযোগিতামূলক চমৎকার এ খেলায় বরিশালের বিজয়ে আমরা আনন্দিত। 

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নগরীতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করেছে।
 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম