Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সংবাদ সম্মেলনে সুজন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন

কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন জানিয়েছে, দুই সিটির প্রার্থীদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে ৫১ জন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’ উল্লেখ করেছে। তাদেরসহ ৪৮ শতাংশের বেশি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। মেয়র প্রার্থীদের অর্ধেক স্বশিক্ষিত, অর্ধেক উচ্চশিক্ষিত। তবে কুমিল্লা সিটির তিনজন মেয়র প্রার্থী উচ্চশিক্ষিত। বাকি একজন এসএসসি। ময়মনসিংহে সাতজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যা বা হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে। বুধবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সুজন এসব তথ্য জানিয়েছে। আগামী ৯ মার্চ এ দুটি সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। যদিও ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এটা সবচেয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু অনেকেই এ নির্বাচন নিয়ে অনেক রকম প্রশ্ন তুলেছেন। যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে এটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে গত জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে টিম বাংলাদেশে এসেছিল তাদের প্রতিবেদনে এসেছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে যেসব পূর্বশর্ত রয়েছে, সেগুলো আমাদের গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রার্থীদের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ওই সিটির মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২২২ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬৩ দশমিক ৫১ শতাংশের পেশা ব্যবসা। অন্যদের মধ্যে ১৫ শতাংশের বেশি গৃহিণী, ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ চাকরিজীবী, ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ কৃষিজীবী এবং ১ দশমিক ৮০ শতাংশ আইনজীবী। ময়মনসিংহের পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ইকরামুল হক, এহতেসামুল হক ও শহিদুল ইসলাম ব্যবসায়ী। বাকি দুই প্রার্থী মো. রেজাউল হক ও সাদেকুল হক খান (মিল্কি) আইনজীবী। ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের ৭৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রায় ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী।

অপরদিকে কুমিল্লা সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচনে চারজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মো. মনিরুল হক, নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম এবং তাহসীন বাহারের পেশা ব্যবসা। অন্যদিকে মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন চাকরিজীবী। সুজন বলছে, কুমিল্লায় ব্যবসায়ীর হার ২০২২ সালের নির্বাচনে ছিল ৬০ শতাংশ। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা না বাড়লেও শতকরা হার ২০২২ সালের তুলনায় বেড়েছে। সুজন বলেছে, অন্যান্য নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। এ প্রবণতা নির্বাচনে অর্থের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষণ। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের আধিক্য এবং অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব হ্রাস পাওয়া ইতিবাচক নয় এবং তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্যও মঙ্গলজনক নয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে তিন পদের প্রার্থীর মধ্যে ৪৮ শতাংশের বেশি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। মেয়র প্রার্থীদের অর্ধেক স্বশিক্ষিত, অর্ধেক উচ্চশিক্ষিত। কুমিল্লায় তিনজনই উচ্চশিক্ষিত। ময়মনসিংহে সাতজন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যা বা হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।

ময়মনসিংহ সিটির প্রার্থীদের ৬৩ শতাংশের বেশি বছরে পাঁচ লাখ টাকার কম আয় করেন। অবশ্য ৪৭ জন প্রার্থী আয় উল্লেখ করেননি। অপরদিকে কুমিল্লার প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. মনিরুল হক বছরে সবচেয়ে বেশি ৭২ লাখ ৩১ হাজার ৩৩৩ টাকা আয় করেন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা তাহসীন বাহার ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৩ টাকা আয় করেন। বাকি দুই প্রার্থীর আয় পাঁচ লাখ টাকার কম। সুজন বলছে, আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রার্থীদের অনেকেই তা দেন না। বেশির ভাগই সনদ জমা দেন। ময়মনসিংহে পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ইকরামুল হক ও রেজাউল হক আয়কর বিবরণী দিয়েছেন। এই সিটি নির্বাচনের ২২২ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশের আয়কর প্রদানসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনের চারজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম এবং তাহসীন বাহারের আয়কর প্রদান সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। বাকি দুজন শুধু সনদ দিয়েছেন।

সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আয়কর বিবরণী দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা অনেকেই মানেন না। এতে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার কথা। জাতীয় নির্বাচনেও অনেকে আয়করের তথ্য দেননি। নির্বাচন কমিশন এগুলো খেয়াল করে না এবং তাদের মাথাব্যথা নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি নির্ভর করে ক্ষমতাসীন দল, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও প্রার্থীদের ওপর।

প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া তথ্য যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়ে সুজন সম্পাদক বলেন, হলফনামায় সঠিক তথ্য না দিলে বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিলে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে। এমনকি কেউ ভুল তথ্য দিয়ে নির্বাচিত হলেও নির্বাচন বাতিল হতে পারে। হলফনামায় ভুল বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। দুর্ভাগ্যবশত প্রার্থীদের অনেক তথ্যই সঠিক নয়। আশা করি, নির্বাচন কমিশন এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করবে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দিতে আইন সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন যখন নির্দলীয় হতো তখন কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন অনেকে প্রার্থী হতেন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের আইন পাশের পর প্রার্থী সংখ্যা কমেছে। আমরা জানি না কী কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার শুরু হলো। এখন তারা (ক্ষমতাসীন দল) দলীয় প্রতীক থেকে সরে এসেছে। আসলেই কি তারা দলীয় প্রতীক থেকে সরে এসেছে? আমরা দেখলাম তারা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে, যদিও দলীয় প্রতীক দেয়নি।

এ সময় সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ যদি নির্দলীয় নির্বাচন চায় তাহলে আইন সংশোধন করে এটা করা উচিত। এই নির্বাচনে (কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন) বিএনপি যদি অংশগ্রহণ করত তখন কি আওয়ামী লীগের এই কৌশল থাকত? আমরা তো আগে থেকেই দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিপক্ষে। আমরা আশা করব সরকার যদি এটা চায় তাহলে অবিলম্বে তারা যেন আইনটা সংশোধন করে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলীয় হয়ে গেছে। যখন ক্ষমতাসীন দলের কেউ প্রার্থী হয়, তখন তার পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এটা হবে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। কিন্তু এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমরা আশা করব যে, যদি ক্ষমতাসীন দল সত্যিকার অর্থে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায়, তারা যেন দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম