Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

রমজানুল মুবারক

মানবতার জয়গান ওঠে ইফতারের দস্তরখানে

Icon

মুফতি লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মানবতার জয়গান ওঠে ইফতারের দস্তরখানে

ফাইল ছবি

রোজায় ইফতার। নিজের আত্মার পরিচর্যায় দিনভর উপোস। রিপুর তাড়না থেকে নিজেকে শুদ্ধ করার এ মহাপ্রয়াস রোজাদারকে বানায় ত্যাগী। স্রষ্টার আদেশ পালনে নিমগ্ন হয়ে বান্দা বেঁচে থাকে সব নিষিদ্ধ কাজ থেকে।

সূর্যাস্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে এ সময় মোনাজাতে নিমগ্ন হয় রোজাদাররা। তখন আল্লাহ তার এ সম্মানিত বান্দাদের দেখে গর্ব করতে থাকেন।

ইফতারে ঢেলে দেন অজস্র বরকত। দোয়া কবুল করে মহিমাময় আল্লাহ তার ওয়াদা পূর্ণ করেন। বান্দা আনত নয়নে অপেক্ষা করে রোজা পূর্ণের মাহেন্দ্রক্ষণের। মুয়াজ্জিনের আল্লাহু আকবার বলার সঙ্গে সঙ্গেই মুখে তুলে নেয় বরকতি ইফতার। খেজুর, পানি খেয়ে জানান দেয় আল্লাহর বিধান পালনের। স্রষ্টা খুশি হন। রোজাদাররা আনন্দে উদ্বেলিত হয়, ভক্ষণ করেন ইফতার।

মুসলিম সমাজে ইফতার এক অনিন্দ্য আয়োজন। ধনী গরিব একাকার হয়ে যাওয়া একই দস্তরখানে। কোনো ভেদাভেদ নেই। কোনো অহম নেই। সবাই একনিষ্ঠ হয়ে আহার করে আল্লাহর নেয়ামত। তাই তো পেয়ারে হাবিব রাসূল (সা.) ইফতারের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, কোনো রোজাদারকে যদি কেউ ইফতার করায় তাহলে আল্লাহতায়ালা সেই মেজবান ব্যক্তিকে একটি কবুল রোজার সওয়াব দান করেন। আর এ সওয়াব আল্লাহ নিজে তার পক্ষ থেকে দান করেন। এখানে একটা বিষয় জেনে রাখা উচিত, আমাদের সমাজে একটি ভুল কথা প্রচলিত আছে তা হলো, মানুষ বলে মেজবান ব্যক্তি সে সওয়াব পায় রোজাদারের রোজা থেকে। অর্থাৎ রোজাদারের রোজা থেকে নাকি এ সওয়াব কাটা হয়। না! আসলে বিষয়টি তা নয়। বরং রোজাদার তো তার সওয়াব পূর্ণই পায় তার রোজা পালনে।

অন্যদিকে মেজবান ব্যক্তিকে আল্লাহ নিজে তার পক্ষ থেকে দয়া করে একটি রোজার সওয়াব দান করেন। আর রোজাদারকে মেহমানদারির কারণে পায় ভিন্ন সওয়াব। ইফতারের এ বরকতময় আয়োজন বিধর্মীদের কাছে মুসলমানদের জন্য একটি দাওয়াতের মাধ্যমও। এ সময় তারা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ধর্মের মানুষের কাছে ইফতার পাঠানোর মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াতও পৌঁছাতে পারে।

উন্নত বিশ্বের মুসলমানরা এ কাজটা করছে হরদম। সেখানকার ধার্মিক মুসলিম অধিবাসীরা প্রায়শই তাদের প্রতিবেশী নানা ধর্মের মানুষের কাছে ইফতার পাঠাচ্ছে। তারাও সাদরে গ্রহণ করছে এ মহান নেয়ামত। এর দ্বারা দূর হচ্ছে মুসলমানদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব। আল্লাহর রহমতে কেউ কেউ ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করছে।

যেমন, আমেরিকায় মুসলমানদের ‘আসসাফা ইসলামিক সেন্টার’ আছে। সেখান থেকে তারা তাদের এরিয়ায় প্রায় সব মানুষের কাছেই ইফতার পাঠায়। তেমনিভাবে আমাদের দেশেও রমজানে প্রায় সব দিনই কোথাও না কোথাও ইফতার পার্টি হচ্ছে।

আমরাও চাইলে এ বরকতপূর্ণ ইফতারকে মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পারি। কারণ, সাধারণত দেখা যায় ইফতার পার্টিগুলোতে প্রচুর খাবার নষ্ট হয়।

এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো : ইফতার পার্টিতে অত ধুমধাম আয়োজন না করে প্রয়োজনমতো রেখে বাকিটা গরিব মুসলিম এবং অনাহারি লোকদের মাঝে বিতরণ করে দেওয়া। এর দ্বারা অবশ্যই আরও বহুগুণ সওয়াব আল্লাহতায়ালা দেবেন আমরা আশা করি।

রোজাদারকে ইফতার করানোর সওয়াব সম্পর্কে হাদিসে আছে, হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য কিংবা পানি দ্বারা কোনো মুসলমানকে রোজার ইফতার করাল, ফেরেশতাগণ মাহে রমজানের এ সময় তার জন্য ইস্তিগফার করেন। আর হজরত জিবরাইল (আ.) শবেকদরে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। (তাবরানী আল মু’জামুল কবীর, ষষ্ঠ খণ্ড, হাদিস-৬১৬২)।

আরেক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজাদারকে পানি পান করাবে আল্লাহতায়ালা তাকে হাউজে কাওসারের পানি পান করাবেন। সে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত কখনো পিপাসার্ত হবে না। (কানযুল উম্মাল, ৮ম খণ্ড, হাদিস-২৩৬৫৩)। অন্য এক হাদিসে আছে, হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গোনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না। এভাবে ইফতার করানোর সওয়াব বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।

ইফতারের আগে কিংবা পরে দোয়া পড়া উত্তম। দোয়াটি হলো- আল্লাহুম্মা ইন্নি লাকা ছুমতু ওয়া বিকা আ’মানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী)।

রোজার এ ইফতারের মাধ্যমে মুসলমানরা অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে পুরো বিশ্বে। হিসাবমতে পৃথিবীতে ১.৭ বিলিয়ন মুসলমান উপোস থেকে রোজা রাখে। দীর্ঘ সময় তাদের এ উপোস থাকা আল্লাহর রহমত ছাড়া আর কি-ইবা হতে পারে!

লেখক : নিউইয়র্কের আস-সাফা ইসলামিক সেন্টারের সেক্রেটারি জেনারেল খতিব ও ইউনাইটেড উলামা কাউন্সিল অব ইউএসএ ইনকের প্রেসিডেন্ট

রমজান ইফতার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম