পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সারা দেশে মুসলমানরা তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন। বৃহস্পতিবার মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এই পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হয়। ৩০ দিন সিয়াম সাধনার পর মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উদযাপন করেন। সাপ্তাহিক বন্ধ, বাংলা নববর্ষসহ টানা পাঁচদিন ছুটি পায় সারা দেশের মানুষ। এই লম্বা ছুটি ঈদ আনন্দকে আরও রাঙিয়ে তুলে। ঈদের নামাজ, খাওয়াদাওয়া, বিনোদনসহ সবকিছুতেই বাড়তি উচ্ছ্বাস ছিল। ঈদের ছুটিতে ঢাকাসহ সারা দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোয়ও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বুধবার সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখার পরই শুরু হয়েছে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে পৃথকভাবে ঈদ শুভেচ্ছা জানান। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শুভেচ্ছা বানীতে বলেন, ‘ঈদুল ফিতর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ উপলক্ষ্যে আমি দেশে-প্রবাসে বসবাসকারী সব বাংলাদেশিসহ বিশ্ববাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি ঈদের এই আনন্দ যেন সবার মাঝে সারাবাংলায় ছড়িয়ে পড়ে। আমি দেশবাসীকে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে এই আনন্দ সবার সঙ্গে মিলেমিশে উপভোগের আহ্বান জানাচ্ছি।’ ঈদের আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসী ও বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষ সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। ঈদের আনন্দ আমাদের সবার।’ তিনি বলেন, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যাপ্তি লাভ করুক-এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা।
এছাড়া সাধারণ মানুষ নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময়, মোবাইল ফোনে এসএমএস, ফেসবুকে, ই-মেইলে বৃহস্পতিবার সারাদিন চলে শুভেচ্ছা বিনিময়। ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণকেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
রাজধানীতে সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়। এবার ঈদগাহে ৩৫ হাজার নারী-পুরুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল বলে জানিয়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। জাতীয় ঈদগাহে প্রধান ঈদের জামাতে সর্বস্তরের মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে জাতীয় ঈদগাহে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান প্রধান বিচারপতি, ধর্মমন্ত্রী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট পদস্থ’ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। নামাজ শেষে রাষ্ট্রপ্রধান ঈদগাহে মুসল্লিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের দিন পাঁচটি জামাত হয় ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে। এছাড়া বিভিন্ন মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত সকাল ৭টায় হয়। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মোকাব্বিরের দায়িত্ব পালন করেন মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক। দ্বিতীয় জামাত হয় সকাল ৮টায়। তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় হয়। চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় হয়। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের দিন বঙ্গভবনে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
রাজধানীর শিশুপার্ক, রমনা পার্ক, হাতিরঝিল, টিএসসি, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শাহবাগ, রবীন্দ্র সরোবর, চিড়িয়াখানা, গুলশান লেক-সব জায়গায় মানুষের ঢল নামে। শিশু-কিশোরদের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। টিকিট সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। বিভিন্ন খাঁচার সামনে ছিল দর্শকের উপচে পড়া ভিড়।
বিনোদনের অন্যতম মুক্তস্থান হাতিরঝিলে ঈদের দিন ও পর দিন লাখো মানুষ জড়ো হয়। ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঘোরানোর প্যাকেজ ছাড়া হয় প্রতিবারের মতো এবারও হাতিরঝিলে। ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দুপুর থেকেই রাজধানীর হাতিরঝিলে ভিড় করতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের। ওয়াটার ট্যাক্সির টিকেট-চেকার মোহম্মদ নূরে আলম বলেন, ভ্রমণের জন্য এ ট্যাক্সি ব্যবহার হবে। এফডিসি থেকে ছেড়ে গিয়ে ৩০ মিনিট ঘুরে আবার এফডিসি জেটিতে ভিড়ছে ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো। রাত ১০টা পর্যন্ত ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঘুরছেন দর্শনার্থীরা।
আনন্দের পাশাপাশি বিষাদে রূপ নেয় চিড়িয়াখানা। ঈদের দিন হাতি আক্রমণ করে মাউথের ছেলের প্রাণ কেড়ে নেয়। ঈদের দিন সকালে ঢাকার মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় হাতির আঘাতে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। চিড়িয়াখানায় মানুষের ঢল নামে। প্রতিদিনের মতোই হাতি দিয়ে ফুটবল খেলা দেখানো হয়। কিছু সময় খেলাধুলার পর হঠাৎ করে হাতিটি বিগড়ে গিয়ে সামনে একটি কিশোরকে শুঁড় দিয়ে ধরে আছাড় মারে। পরে কিশোরটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরও আফ্রিকান সিংহের খাঁচার সামনে দর্শনার্থীদের জটলা। নিরাপত্তাবেষ্টনী ডিঙিয়ে সিংহের ছবি তুলছিলেন গোটাবিশেক যুবক। এই খাঁচার সামান্য দূরেই বাঘের খাঁচা। সেখানে নিরাপত্তাবেষ্টনীর ওপর দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ভুভুজেলা বাজাচ্ছেন। এ সময় একজনকে বাঘ ও বানরের খাঁচার দিকে বাদাম ছুড়তে দেখা যায়।
এদিকে রাজধানীর রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে এসব এলাকা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরছেন তারা। সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে রমনা পার্ক ও চন্দ্রিমা উদ্যানে।
ঈদ উৎসব নির্বিঘ্ন করতে বুধবার রাত থেকে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার কাকডাকা ভোর থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা। সকালে জিরোপয়েন্ট ক্রসিং, মৎস্য ভবন ক্রসিং, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল মোড়, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, প্রেস ক্লাব লিংক রোড, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পেছনের গলি, ইউবিএল ক্রসিংয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
