Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বন্ধ ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ

১০ দিন পর চালু মোবাইল ইন্টারনেট

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

টানা ১০ দিন পর মোবাইল ফোনে ফোর-জি ইন্টারনেট খুলে দিয়েছে সরকার। রোববার বিকাল ৩টায় মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার জেরে গত ১০ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গ্রাহকদের তিন দিন মেয়াদে ৫ জিবি ইন্টারনেট বোনাস দেবে মোবাইল অপারেটররা। তবে ইন্টারনেট চালু হলেও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, টিকটকের মতো জনপ্রিয় কয়েকটি অ্যাপ ব্যবহার করতে পারছেন না ব্যবহারকারীরা। এসব অ্যাপ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে আগামী ৩১ জুলাই ঢাকায় তলব করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গতকাল মোবাইল ইন্টারনেট চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের অবসান ঘটল।

এর আগে গতকাল সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনে মোবাইল অপারেটর ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে বৈঠকের পর ফোর-জি ইন্টারনেট চালুর সিদ্ধান্ত জানান তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিল না। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কিছু কিছু জায়গায় সাময়িকভাবে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী। ইন্টারনেট চালু হলে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা যাবে কী না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানান পলক।

অ্যাপ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্দিষ্ট করে কোনো অ্যাপ্লিকেশনের কথা বলছি না। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনা ও পরামর্শক্রমেই প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি। তাদের যখন যেখানে যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন হচ্ছে, সেই সহযোগিতা দিতে একসঙ্গে কাজ করছি। কোনো নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশনের কথা উল্লেখ করতে পারছি না।

কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে আগাম ঘোষণা ছাড়াই গত ১৭ জুলাই থেকে সারা দেশে মোবাইল ইন্টারনেট তথা ফোরজি প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় সরকার। এর আগের দিন ১৬ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আংশিকভাবে বিভিন্ন স্পটে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। গত ১৮ জুলাই থেকে সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। পাঁচ দিন পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হলেও এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল চালু হলো মোবাইলে ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে না পারায় মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে না পারায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।

মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট চালুর বিষয়ে গতকাল বিটিআরসিতে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পরে তিনি জানান, দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমত, বেলা ৩টা মোবাইলে ফোর-জি ইন্টারনেট চালু হবে। দ্বিতীয়ত, ১০ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গ্রাহকদের ৫ জিবি করে ডাটা বোনাস দেবে মোবাইল অপারেটররা। ওই ডাটার মেয়াদ হবে ৩ দিন। ইন্টারনেটে যুক্ত হলে গ্রাহকেরা এ ডাটা পাবেন। যদিও গতকাল রাত পর্যন্ত ওই ডাটা পাননি অসংখ্য গ্রাহক। বৈঠক সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটরদের ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদি ডেটা প্যাকেজ বানাতে অপারেটরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থা, গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, মোবাইল, বিকাশ, নগদ, রকেট এবং উপায়’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিল না : আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশে ৫ দিন ১২ ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক মুহূর্তের জন্যও বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিল না। তিনি জানান, সরকারের কেপিআইভুক্ত যেসব প্রতিষ্ঠান ও জরুরি সেবা রয়েছে, সেখানে সব সময়ই ইন্টারনেট চলমান ছিল। গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পরিকাঠামোতে ইন্টারনেট যুক্ত রাখা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা কখনোই ইন্টারনেট বন্ধ রাখার পক্ষে না। আমরা কোনো অ্যাপ বন্ধ রাখি না।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ১৭ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই ১০ দিনের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক ফোর-জি সাময়িকভাবে কিছু কিছু জায়গায় বন্ধ ছিল। ১৭ ও ১৮ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার অনুরোধ, নির্দেশনা ও পরামর্শ সাপেক্ষে তারা বিটিআরসি ও এনটিএমসি থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেন। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কিছু কিছু জায়গায় সাময়িকভাবে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল।

প্রতিমন্ত্রী ১৮ জুলাই বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মহাখালীতে ডেটা সেন্টার ক্ষতির প্রসঙ্গ টানেন। তিনি জানান, সারা দেশে শত শত কিলোমিটার ফাইবার কেবল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন কেবল কুয়াকাটার সাবমেরিন কেবল স্টেশন চালু ছিল। এভাবে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন বন্দর ও পর্যায়ক্রমে ব্রডব্যান্ড সেবা দেওয়া হয়। ফলে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন না হলেও জরুরি সেবাগুলো ও আন্তর্জাতিক সেবাগুলো দেওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপ কর্তৃপক্ষকে তলব : সংবাদ সম্মেলনে কোন কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা যাবে বা যাবে না তা প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকেরা। এর জবাবে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার সম্পূর্ণভাবে কখনোই কোনো অ্যাপ বন্ধ করেনি। এটা নির্ভর করছে তাদের (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম) আচরণের ওপর। তারা যদি দেশের আইন, সংবিধান ও নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে দায়িত্বশীল আচরণ করে, তাহলে বাংলাদেশে সবার সহযোগিতা পাবে।

তিনি বলেন, ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটককে শনিবার চিঠি দেওয়া হয়েছে বিটিআরসি থেকে। চিঠিতে গত এক মাসে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সহিংসতা ও গুজব ছড়িয়ে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো সরাতে অনুরোধ করা হয়েছে। আইন মেনে তারা বাংলাদেশে সাইবার জগৎ ব্যবহার করতে চায় কি না, সে ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাজ করত এমন ৫০টি পেজ ও অ্যাকাউন্ট ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু একই ধরনের কাজ বিএনপির পেজ থেকে বা সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া যেসব কনটেন্ট প্রচার করছে, সেগুলো কেন বন্ধ করছে না। আবার শিশুদের অ্যাবিউজ, নারীদের প্রতি আক্রমণ, অসহিংসতা, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, গুজব প্রসঙ্গে তারা কোনো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখেনি।

তিনি জানান, ৩১ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে ঢাকায় এসে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা যুক্তি ও ব্যাখ্যা দিয়ে যদি বোঝাতে পারে যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করছে না, তাহলে আলোচনার ভিত্তিতে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

নিজের ফেসবুক ব্যবহারের ব্যাখ্যা দিলেন প্রতিমন্ত্রী : সাধারণ মানুষের ফেসবুক বন্ধ থাকলেও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী নিজেই ফেসবুক ব্যবহার করছেন এবং বিভিন্ন ধরনের পোস্টও দিচ্ছেন, যা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে সমালোচনা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি অ্যাকটিভ থাকার চেষ্টা করছি, যাতে আপনারা সংবাদমাধ্যম এবং দেশের জনগণ; দেশে ও প্রবাসে তারা যেন সঠিক তথ্যটা পায়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ইমার্জেন্সি ও অ্যাসেন্সিয়াল অনেকগুলো অবকাঠামো আছে এবং যেগুলো জরুরি সেবা, সেখানে ইন্টারনেট কিন্তু সবসময় চালু রেখেছি। কখনো শাটডাউন হয়নি। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক তথ্যটা সোশ্যাল মিডিয়াতে দেওয়া দরকার। দেশে ও বিদেশে যারা গুজব ও অপপ্রচার ছাড়াচ্ছে, তাদেরকে আমাদের ব্যাখ্যাটা দেওয়া দরকার, যাতে করে আমাদের সরকারের সঠিক তথ্যটা জানতে পারে, সেজন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার প্রত্যেকটা (অ্যাকাউন্ট) অ্যাকটিভ রেখেছি।

অনেকেই অনেকভাবে অনেক অ্যাপ ব্যবহার করছেন বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। ভিপিএন ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে এগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এফ কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল কমার্স হয়ে উঠতে পরামর্শ দেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম