Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ঢাকায় দুই পুলিশসহ মৃত্যু আরও ১৩

যাত্রাবাড়ী বাড্ডা উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় এবার প্রাণ হারালেন পুলিশের দুই সদস্য। শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। রায়েরবাগ এলাকায় দুজনকেই পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এদিন পুলিশের দুজনসহ সব মিলিয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ জনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজনের লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ছিল। এদিকে গতকালও রাজধানীতে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, রামপুরা-বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, প্রগতি সরণিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলকারীরা। এদিন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া এলাকায়। সেখানে পুলিশের সাদা পোশাকের একজনকে হত্যার পর রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ওই লাশ উদ্ধার করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এছাড়া মোহাম্মদপুর এলাকায় দিনভর থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ হয়েছে বাড্ডা-রামপুরা এলাকাতেও। এতে সেখানে অন্তত দুজনের মৃত্যুর কথা জানান স্থানীয়রা। যদিও তাদের মৃত্যু ও পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া উত্তরার হাউজ বিল্ডিং ও আজমপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।

যাত্রাবাড়ী : যাত্রাবাড়ী- শনিরআখড়া এলাকায় অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শুক্রবার রাত থেকে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। শনিবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শত শত সদস্য অবস্থান নেন। তারা সাঁজোয়া যান, হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে ওই এলাকায় অভিযান চালান। দুপুর ১টার দিকে সড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সরানোর জন্য চেষ্টা চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রথমে তারা আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ধাওয়া দেন। এরপর সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেন। পাশাপাশি র‌্যাব ও পুলিশ হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুটি ও বেলা ৩টায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। এই অভিযানে র‌্যাব ও পুলিশের গুলিতে চারজন আন্দোলনকারী প্রাণ হারিয়েছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। যদিও ওই তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী।

শনিরআখড়া এলাকায় গতকাল সাদা পোশাকের দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। রাত পৌনে ১২টার দিকে সাদা পোশাকের এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ওই পুলিশ সদস্যের মরদেহ আনতে গেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে র‌্যাব-পুলিশের ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ সদস্য নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে জানানো হয়, পুলিশ সদস্য হতাহতের তথ্য শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হালনাগাদে আছে। সেখানে একজন সদস্য নিহত ও ২৬৭ জন আহতের তথ্য রয়েছে।

গত ৭ দিন ধরে যাত্রাবাড়ী শনিরআখড়া এলাকায় বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে হাজারও আন্দোলনকারী অবস্থান নেয়। গত ৪ দিন যাত্রাবাড়ী থেকে কাজলা পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে আছে। আন্দোলনকারীরা সড়কে গাছের গুঁড়ি, টায়ার ও কাঠে আগুন জ্বালিয়ে সাইনবোর্ড পর্যন্ত অবরোধ করে। গতকালও ওই সড়কে একইভাবে অবস্থান নেয় তারা। মহাসড়কের কুতুবখালী, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলগেট, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, সাদ্দাম মার্কেটসহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে রাখে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার চেষ্টা চালিয়েও আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরাতে পারেনি। উলটো তাদের সঙ্গে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, শনিরআখড়ার কাজলা এলাকার অনাবিল হাসপাতালের সামনে ইফতি নামের ১৪ বছরের এক ‘স্কুলছাত্র’ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আন্দোলনে আহত বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান ইফতি।

রামপুরা-বাড্ডা : উত্তর বাড্ডার ফুজি টাওয়ারের সামনের সড়কে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে উৎসুক জনতাও ছিল। সেখানে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক গাড়ি আসে। তারা হ্যান্ডমাইকে অবরোধকারীদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। এরপরও আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়লে গাড়িগুলো এগিয়ে যায়। তখন অবস্থানকারীরা মূল সড়ক ছেড়ে আশপাশের অলিগলিতে চলে যান। ওইসব গলি থেকে তারা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি ছুড়লে অন্তত দুজন ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। তাদের এএমজেড হাসপাতালে নেওয়া হয়।

উত্তরা : উত্তরার আজমপুর, হাউজ বিল্ডিং ও আব্দুল্লাহপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকাল ৬টার পর হাউজ বিল্ডিংয়ের জমজম টাওয়ার চৌরাস্তা ও আশপাশের সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। তারা সড়কের ওপর আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান নেয়। রাত ৭টা ২০ মিনিটে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা সড়কে অবস্থান করছিল। আন্দোলনকারীরা যখন সড়কে এভাবে অবস্থান নেয়, তখন উত্তরা পশ্চিম থানার সামনে শতাধিক পুলিশ সদস্যকে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। থানার সামনে কাউকে অযথা না যাওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়।

এদিন দুপুর ১২টার দিকে আজমপুর বিএনএস সেন্টারের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ তাদের টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড মেরে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন সেখানে উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর দুপুর সোয়া ১টার দিকে আব্দুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেটের সামনের সড়ক অবরোধ করেন তিনশ থেকে চারশ আন্দোলনকারী। তারা রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালায়। কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে পুলিশের ৩০-৪০ সদস্যের একটি দল তাদের ধাওয়া করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এর উত্তরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পালটাধাওয়া। টঙ্গী ব্রিজ এবং ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়ক পর্যন্ত তা ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ৩টা পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি কাজী আশরাফুল আজীমের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

মোহাম্মদপুর : রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দিনভর থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেলের উত্তরে পুলিশ শত শত রাউন্ড গুলি, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ সময় মোহাম্মদপুর থেকে বসিলা ব্রিজ পর্যন্ত পুরো এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। শনিবার বেলা ১১টা থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বিজিবির টিমকে টহল দিতে দেখা যায়। এক ঘণ্টা পর আবার আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। তারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পুলিশের সঙ্গে আবার সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও দুপুর আড়াইটার দিকে ফের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। আন্দোলনকারীরা মোহাম্মদপুর থেকে বসিলা পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এছাড়া মোহাম্মদপুরের আশপাশে বেড়িবাঁধ, আদাবর, বসিলা, ঢাকা উদ্যান, রিংরোডসহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন তারা। আশপাশের পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এসময় এছাড়া একাধিক হেলিকপ্টারকে আকাশে টইল দিতেও দেখা যায়। শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

মিরপুর : দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় রাস্তা ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে তারা প্রধান সড়ক থেকে সরে গিয়ে আশপাশের গলিতে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তারা চলে যান। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।

প্রগতি সরণিতে ব্যারিকেড দিয়ে দিনভর শিক্ষার্থীদের অবস্থান : বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনে প্রগতি সরণিতে ব্যারিকেড দিয়ে দিনভর অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের হাতে বাঁশ, লাঠি ও রড দেখা গেছে। নর্দা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত এলাকাজুড়ে দুই পাশের সড়কে তারা অবস্থান নেন। পুলিশের কাজে ব্যবহার করা ‘লোহার ব্যারিকেড’ রাস্তার ওপর ফেলে রাখেন শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় অবস্থান নিয়ে তাদের ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি।

অন্যান্য এলাকা : এদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, ফার্মগেট, বিজয় সরণিসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। সকাল থেকে এসব এলাকা ও অলিগলিতে পরিস্থিতি ছিল থমথমে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা যায়। তবে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। শাহবাগ এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল। এছাড়া ফার্মগেট ও বিজয় সরণিসহ বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনীকে দিতে টহল দেখা গেছে। তাদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। তারা সাধারণ মানুষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। এদিন দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকায় মানুষকে প্রয়োজনীয় কাজে বের হতে দেখা গেছে। তবে যাতায়াতের জন্য বেশিরভাগ মানুষ রিকশা বা হেঁটে কাজ সারতে দেখা গেছে।

লাশ নিয়ে বিপাকে উত্তরার আধুনিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ : আধুনিক হাসপাতালের উপ-পরিচালক মেজর (অব.) হাফিজুল ইসলাম জানান, শুক্রবার থেকে একটি অজ্ঞাত পরিচয় পুরুষ ব্যক্তির লাশ হাসপাতালে পড়ে আছে। তার পরনে পাঞ্জাবি রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ওই লাশের খোঁজে কেউ হাসপাতালে আসেনি। পরে আমরা লাশটি উত্তরা পশ্চিম থানায় পাঠালে তারা গ্রহণ করেনি। এমনকি পুলিশ কোনো সহযোগিতাও করেনি। মেজর (অব.) হাফিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের কোনো মর্গ নেই। লাশ রাখার মতো ব্যবস্থাও নেই। লাশ সংরক্ষণ নিয়ে আমরা বিপাকে রয়েছি।

ঢাকা মেডিকেলে ১২ লাশ : কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে আহত হয়ে মারা গেছেন এমন ১২ জনের লাশ দেখা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই ১২ জনের মধ্যে ৯ জন শনিবার আহত হয়ে মারা গেছেন। আর দুজন শুক্রবার আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার মারা যান। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউর রহমান জানান, শনিবার এ হাসপাতালেও একজনের মৃত্যু হয়েছে।

সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা গেছে, সকাল থেকেই আহত মানুষ একে একে আসতে শুরু করেন। দুপুরের পর গুরুতর আহতদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। রাত ১১টা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ১৮২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৬২ জনকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভর্তি হওয়াদের অধিকাংশই গুলি, রাবার বুলেটে মাথা ও বুকে গুরুতর জখম রয়েছেন। এদের কেউই শঙ্কামুক্ত নন।

হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, রাত ১০টা পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য। তারা হলেন-গিয়াস উদ্দিন ও এএসআই মুক্তাদির।

শনিবার গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন বাড্ডা থেকে আসা অজ্ঞাতনামা (২৫), কামরুল (২৭), শনির আখড়া থেকে আসা ইমাম হাসান কাউয়ুম (২৫), অজ্ঞাতনামা ১০ বছরের শিশু, সূত্রাপুর থেকে আসা ইউসুফ মিয়া সানোয়ার (২৫), যাত্রাবাড়ী থেকে আসা জাহাঙ্গীর (৪৩), হাবিব (৪০), শিক্ষার্থী শাহরিয়ার (১৯), আজিমপুর কবরস্থানের পাশে পড়ে থাকা অজ্ঞাতনামা এক পুরুষ (২৭)। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শনির আখড়া থেকে সোহেল (৩৫) নামে এক মোবাইল মেকানিককে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। ১৫ মিনিট পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। হাসপাতালে আসা তার স্ত্রী জানান, নিহত সোহেল বাসার বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন। সেখানেই তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে ঢামেকে নিয়ে আসা হয়।

এদিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশে মর্গে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনে নিহতদের লাশ মর্গজুড়ে সারি সারিভাবে রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার জানান, অতিরিক্ত লাশ থাকায় আমরা যথাসময়ে পোস্টমর্টেম করতে পারছি না। ফলে লাশের স্তূপ বাড়ছে। তিনি বলেন, মর্গের পাশেই অস্থায়ী মর্চুয়ারি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে ৪০টি লাশ রাখার জায়গা রয়েছে। এখানে স্তূপ হয়ে গেছে লাশে। এখন নতুন করে যে লাশ আসছে সেগুলো কোথায় রাখব তা সিনিয়র কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত করা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম