খুলনায় পুলিশ শিক্ষার্থী সংঘর্ষে কনস্টেবল নিহত
গুলিবিদ্ধসহ আহত শতাধিক
খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার গল্লামারী মোড়, এম বারী সড়ক ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক শুক্রবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ারশেল, রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়েছে। সংঘর্ষ চলার সময় আন্দোলনকারীদের পিটুনিতে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০ পুলিশ সদস্য। পুলিশের গুলি-টিয়ারশেলে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী।
ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত থেমে থেমে এই সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গল্লামারী এলাকায় পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে আগুন লাগিয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা শুক্রবার দুপুর ২টায় খুলনা নিউমার্কেট এলাকায় জড়ো হতে থাকে। সেখানে প্রথম দফায় বৃষ্টির বাগড়া ও পুলিশের বাধায় তারা জড়ো হতে পারেনি। পরে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হয়ে মিছিল করতে থাকে।
মিছিলটি সোনাডাঙ্গা থানাধীন মজিদ সরণি হয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার সামনে দিয়ে যায়। সোনাডাঙ্গা থানার সামনে গেট লাগিয়ে পুলিশ পাহারায় ছিল। এ সময় কিছু শিক্ষার্থী পুলিশকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ অবস্থা বিবেচনায় গেট লাগিয়ে ভেতরে চলে যায়। সেখানে শিক্ষার্থীরা থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় থানার জানালার গ্লাসসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে যায়।
পরে মিছিলটি গল্লামারী ব্রিজ পার হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছায় বিকাল ৩টার দিকে। সেখানে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। বাকি অংশ জিরো পয়েন্টের মোড়ে অবস্থান নিতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙতে চাইলে পুলিশ কয়েক দফা টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও পালটা ইটপাটকেল ছোড়ে। সেখানে রাব্বী, ইসমাইল হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের যোগ দিতে দেখা যায়। পরে বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারী মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেলে পুলিশ ধীরে ধীরে পিছু হটে। পরে তারা জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়। তাদের দুই পাশ দিয়ে ঘিরে রাখে পুলিশ।
এ সময় সেখানেও টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর বিকালে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শিববাড়ি মোড়ের দিকে যাওয়ার সময় সাড়ে ৫টার দিকে গল্লামারী মোড়ে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। ব্রিজের অপর প্রান্ত থেকে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল, রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এতে পুরো গল্লামারী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পথচারীসহ একাধিক মানুষ আহত হয়।
এই ঘটনার সময় চারজন পুলিশ গল্লামারী কাঁচাবাজারে দলছুট হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা ওই পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দেয়। এ সময় ওই চার পুলিশ সদস্যের মধ্যে একজন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। পরে সেখানে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সুমন কুমার ঘরামী নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রাখে। অপর তিনজন পালিয়ে যেতে চাইলে তাদের মধ্যে কনস্টেবল মাজহারুল ইসলামকেও বেধড়ক মারধর করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে। তাদের খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান সুমন কুমার ঘরামি আগেই মারা গেছেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গল্লামারী ব্রিজের অপর পাশে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে আগুন দিয়ে দেয়। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এম এ বারী সড়ক ও শেরে বাংলা সড়কের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে চলে এই সংঘর্ষ। এ সময় বিপুল পরিমাণ গুলি ছোড়ে পুলিশ।
এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে সংঘবদ্ধ হয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফের মিছিল বের করে। তারা ২৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে। এদিকে সংঘর্ষে আহত বেশ কয়েকজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষের সময় শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আটকা পড়ে। রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়ি পৌঁছে দেয়।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শুধু শিক্ষার্থী হামলা করেনি। দুর্বৃত্তরা খুলনাকে অশান্ত করতেই পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের অনেক সদস্য আহত আছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, পুলিশের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একটি গ্রুপ উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
