Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী

জামায়াত শিবিরের হামলায় মদদ বিএনপির

শেখ হাসিনা পালায় না * ছাত্ররা আন্দোলন থেকে সরে আসার পর আর্মি নামিয়েছি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাধারণ ছাত্রদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। শিবিরকর্মীরা ঢাকার আশপাশে ঘাপটি মেরে থেকে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো ঘটিয়েছে। পেছন থেকে বিএনপি তাদের মদদ দিচ্ছে। আমার প্রশ্ন- এত কিছু করার অর্থ তাদের কে বা কারা সরবরাহ করছে? তিনি বলেন, শিবির একটি জঙ্গি দল। এই আক্রমণগুলোও জঙ্গি আক্রমণ। তা না হলে আমাদের একজন সাধারণ কর্মী, তাকে গলা কেটে ফেলে রেখে দিল। হাত কেটে দিয়েছে, পা কেটে দিয়েছে, ছাদ থেকে ছাত্রলীগের কর্মীদের ফেলে দিয়ে মেরেছে। এসব নৃশংসতা কে করে? এগুলো জঙ্গি জামায়াত-শিবিরের কাজ। জঙ্গিদের মদদ দেওয়ায় আজকে বিএনপির চেহারাও বেরিয়ে গেছে। এখনো হুকুম দেয় চালিয়ে যাও। তিনি বলেন, এই জঙ্গিদের দমন করে ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য। আরও কঠোর হাতে এদের দমন করে অবস্থার উন্নতি করা হবে। সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ছেলে-মেয়েরা কোটা চায় না। আন্দোলন করেছিল, আমি বাতিল করে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধারা মামলা করেছে, আদালতে স্টে-হয়েছে, আমরা আপিল করেছি। আমি নিজেও বলেছিলাম কেউ হতাশ হবেন না। তার পরও এটা দুর্ভাগ্যজনক। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে। আমার দেওয়া প্রজ্ঞাপন বাতিল হয়েছে। সরকার পক্ষ আপিল হয়েছে। অ্যাপিলেড ডিভিশন সময় দিয়েছে। এই সময়টা ধৈর্য ধরা ছাড়া কিছুই নেই। সেই সময়টা সবাই মিলে যদি ছাত্রদের একটু বিরত রাখত। আমাদের তরফ থেকে আমরা বারবার কথা বলেছি, বুঝিয়েছি, সান্ত্বনা দিয়েছি, জাতিকে আড্রেস করে বলেছি, আপনারা হতাশ হবেন না। তার পরও এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া, তখন কি ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হয়নি?

ছাত্রদের যেন কোনো ক্ষতি না নয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হয়েছে : এবারের পেক্ষাপটের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এবার যখন খবর এলো কয়েকটা গার্মেন্টে আগুন দেবে, আমি সাথে সাথে গার্মেন্টগুলো বন্ধ করার জন্য খবর দিলাম। সেখানে পুলিশ সব ধরনের নিরাপত্তা দিয়েছে। এখানে সবচেয়ে সেনসেটিভ হচ্ছে ছাত্ররা। আমি জানি না ছাত্রদের সঙ্গে কারা ছিল। কিন্তু ছাত্রদের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হয়েছে। আমরা পুলিশ ও আমাদের লোকজন সবাইকে দিয়ে চেষ্টা করেছি। জ্বালাও পোড়াও শুরু হওয়ার পরে ছাত্ররা বলেছে এর সঙ্গে আমরা জড়িত নই। এটা তারাও চায় না।

কারফিউয়ের ভেতরেও সন্ত্রাসের অপচেষ্টা করেছে, এরা কারা : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন থেকে যখন ছাত্ররা সরে এসেছে, তখন আমরা আর্মি নামিয়েছি। আমি কিন্তু তার আগে আর্মি নামাইনি। অনেকেই বলার চেষ্টা করে ছাত্রদের বিরুদ্ধে আর্মি নামাল! আমি নিজেও ছাত্র রাজনীতি করে এসেছি ওই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কাজেই আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি, রাজনৈতিকভাবে সমাধানের। তারপর আর্মি নামাতে আমরা বাধ্য হই। আর্মি নামিয়েছি, কারফিউ দিয়েছি। এই কারফিউয়ের ভেতরেও তো এরা সন্ত্রাস করার অপচেষ্টা করেছে। এরা কারা? অপরিচিত কেউ নয়। আপনারা দেখেছেন এর সঙ্গে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। সাজাপ্রাপ্ত আসামি, গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সাজাপাপ্ত আসামি বিদেশ থেকে হুকুম দেয়, এটা জ্বালাও, ওটা জ্বালাও, এটা করো, ওটা করো, আরও কয়েক দিন চালাও ইত্যাদি। আপনারা জানেন যে কয়টা ঘটনা, যতগুলো খুন-খারাবি শিবির, বিএনপি, জামায়াত, এরা একসঙ্গে করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসি, ভাগ করি না। কে আওয়ামী লীগ কে বিএনপি, আপনারা আমার কাছ থেকে ওই ধরনের কোনো আচরণ পাননি। আমি একজন বয়স্ক রাজনীতিবিদ, আমি চিনি সবাইকে। আমি দেশটাকে ভালোবাসি। আমি এটুকু বলতে পারি, যারা আমার দল করেন না, আমাদের হয়তো ভোটও দেন না, তারাও কিন্তু ভালো ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ব্যবসায় আমরা কখনো হাত দেইনি। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে দিয়ে, উৎসাহিত করেছি, সব রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। আমি জাতির পিতার কন্যা, আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা বাণিজ্য আমাদের সচল রাখতে হবে। সেই জন্যই আপনাদের ডেকেছি। এখানে আপনাদেরও সহযোগিতা দরকার। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া হবে না। আর যে ক্ষতিগুলো হয়েছে, কারা করল, এটা কোনো রাখ-ঢাকের ব্যাপার নয়। তিনি আরও বলেন, আজকে আপনারা এখানে এসেছেন, সমর্থন দিয়েছেন। আমি মনে করি আপনাদের এই সমর্থনটা এখানে দরকার ছিল। এতে আমরা আরও দ্রুত এই দুর্বৃত্ত, শিবির জামায়াত, বিএনপির যারা সন্ত্রাসী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারব। ২০১৩-১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাসী অনেককেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শাস্তি দিয়েছি, কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে আবার সেই একই চেহারা। তবে এবার এত সহজে ছাড়া হবে না। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশকে নষ্ট করছে। অনবরত বিদেশে আজে-বাজে রিপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। কাজেই আপনাদেরও সহযোগিতা চাই। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিটা যেন থাকে। আমার কাছে ক্ষমতা কিছুই নয়। আমি ক্ষমতার মুখাপেক্ষীও নই। আমি ক্ষমতায় এসেছিলাম দেশকে উন্নত করতে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, এটা আমাদেরই কষ্টের ফসল। ২০০৯ থেকে দেশটাকে যতটা উপরে তুলতে পেরেছি, সেটাকেই ধ্বংস করা হয়েছে।

কারখানাগুলো খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি মনে করেন, কারখানা রক্ষা করতে পারবেন, সেই শক্তি আছে, তবে আপনারা খুলতে পারেন। আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায়দায়িত্ব কিন্তু আমাদের দিতে পারবেন না। আপনাদের নিজ দায়িত্বে করতে হবে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা পালায় না : তাকে নিয়ে গুজব ছড়ানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, শেখ হাসিনা চলে গেছে, শেখ হাসিনা নাই! এসব গুজব ছড়ানো হয়। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা পালায় না। পঁচাত্তর সালের পর ছয়টা বছর আসতে পারিনি। কিন্তু যখনই সুযোগ পেয়েছি ওই খুনি যুদ্ধাপরাধী আমার বাপ-মা, ভাই বোন সবাইকে মেরে ফেলেছে, আমি জানি আমাকেও মারতে পারে। আমি পরোয়া করি না। ২০০৭ সালে আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দিয়ে দিয়েছে, ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছে, কিন্তু আমি বললাম আমি আসব। আসতে বাধা দিয়েছে, কিন্তু আমি জানি আমি দেশে ফিরবই, আমি ফিরে এসেছি।

নির্ধারিত দুটি দেশ সফর বাতিল করার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমি বলেছি, আমার দেশের এই ক্রাইসিসে আমি যেতে পারব না। আমাকে থাকতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে। আমি এজন্যই আপনাদের ডেকেছি, আপনাদের ভেতরে যেন কোনো হতাশা না আসে, আমার দিক থেকে সবরকম সহযোগিতা আপনারা পাবেন। আগুন দিয়ে পোড়ানোর ফলে যে ড্যামেজগুলো হয়ে গেছে, সেগুলো মেরামত করা হবে, একটু সময় লাগবে। তবে যারা আগুন দিল, পোড়ালো, তাদের বিরুদ্ধেও আপনাদের কথা বলতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগকে ছাত্রদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমাল শুরু করেছে, আমি ছাত্রলীগকে বলেছি, তোমরা বের হয়ে আসো। তারা বেরিয়ে চলে এসেছে, তাদের প্রত্যেকের রুম থেকে সমস্ত জিনিসপত্র ফেলে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, মেরেছে। আমি বলেছি, কোনো কিছু করবা না, ধৈর্য ধরো। শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে। ছাত্রলীগ কেন করে, এজন্য মেয়েদের ধরে বেঁধে মেরেছে। কত ধরনের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো বলতে চাই না। তিনি আরও বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের কথা শুনেছি, যখন যেটা দাবি করেছে মেনেছি।

ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীর : ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা নির্বাচনের আগে, আপনারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। অনেক অপপ্রচার হয়েছে। অনেক কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন হতে দেবে না, ক্ষমতায় আসতে দেবে না, অনেক চক্রান্ত কিন্তু আপনাদের যখনই ডেকেছি বা আপনারা নিজেরাও এসে সমর্থন দিয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে এই ২০২৪ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। এর আগে কখনো ছিল না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাজেট ছিল মাত্র ৬৮ হাজার কোটি টাকা, আজকে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট আমরা দিতে পেরেছি। বেসরকারি বিনিয়োগে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করে যাচ্ছি। আমরা যতগুলো আইকনিক জিনিস করেছিলাম, এগুলো সব আপনাদের ব্যবসার কাজে লাগে। বিদেশ থেকে যখন মানুষ আসে, তখন দেখে বাংলাদেশ আর ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘোরে না। বাংলাদেশ ভিক্ষা করে চলে না। বাংলাদেশেও বিনিয়োগ করা যায়।

আমি ব্যবসা করি না, ব্যবসার সঙ্গেও নেই : প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তো ব্যবসা করি না। আমি ব্যবসার সঙ্গেও নেই। আমি ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার সুযোগ ও সুবিধা সৃষ্টি করে দিয়েছি। কারণ আমি জানি ব্যবসা-বাণিজ্য না হলে কর্মসংস্থান হবে না, মানুষের উন্নতি হবে না, জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে না। আমি সেভাবেই বিবেচনা করেছি। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পেয়েছেন। আমি এটুকু বলতে পারি আমার আমলে যারা ব্যবসা পেয়েছেন, নির্বিঘ্নে পেয়েছেন, হাওয়া ভবনের খাওয়াও দিতে হয়নি, প্রতিবন্ধকতাও ছিল না। আর কাজগুলো যাতে দ্রুত পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ব্যবসার চমৎকার পরিবেশ করেছিলাম। যে কাজগুলো করেছিলাম, প্রত্যেকটার ওপর আঘাত করা হলো, আগুন দিয়ে পোড়ানো হলো। এটা কোন ধরনের আন্দোলন আমি জানি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কত সুন্দর মেট্রোরেল, পুড়িয়ে শেষ! ডিজিটাল বাংলাদেশ আমারই করে দেওয়া, আমরা না দেওয়া পর্যন্ত কবে কে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। আজকে সেই ডাটা সেন্টার থেকে শুরু করে সব কিছু পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সাবমেরিন কেবল পর্যন্ত নষ্ট করা হয়েছে। এখন সেগুলো একে একে মেরামত করতে হচ্ছে। এগুলো করতে সময় লাগবে, সময় লাগছে। তারপরও আমরা বসে নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মানুষের জানমাল রক্ষা করার জন্য কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছি। আমি তো কখনো এটা চাইনি। কারণ আমি যখন ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসি, রাতে কারফিউ ছিল। জিয়াউর রহমান যতদিন দেশ চালিয়েছিল, রোজই কারফিউ দিয়েছে। আমরা শুনতাম তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে, কারণ রাতে কারফিউ। সে কথাটা অনেকেরই হয়তো মনে নেই। আবার তরুণ যারা তারা জানেও না।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম