দেশ নিয়ে ছেলেখেলা ছাত্র জনতা প্রতিহত করবে
শাহবাগের সমাবেশে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আমরা বিভিন্ন মহল থেকে শুনেছি, ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ থেকে শুরু করে স্বৈরাচারের দোষররা আবার পালটা গণঅভ্যুত্থানের চেষ্টা করছে। আমাদের জায়গা থেকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, ছাত্র-জনতা ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছে, তারা যদি আবার দেশে পালটা গণঅভ্যুত্থান ঘটানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে, তাহলে তাদের আর অস্তিত্ব থাকবে না। এজন্য তাদের আমরা ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে সাবধান করে দিতে চাই, এ দেশ নিয়ে আর কোনো ছেলেখেলার চেষ্টা করবেন না।
দেশটা ছাত্র-জনতা মিলে একসঙ্গে যেদিকে যাওয়া প্রয়োজন, সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করব। কেউ যদি আমাদের এ দেশ নিয়ে বিন্দুমাত্র কোনো অপচেষ্টা করে ছাত্র-জনতা যে কোনো মুহূর্তে রাস্তায় নেমে তাদের প্রতিহত করবে।’
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচির অংশ হিসাবে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ সরকারি-বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং অন্যান্যরা। সেখানেই গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এ হুঁশিয়ারি দেন সারজিস আলম।
তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী যে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, এরপর আর আমাদের রাজপথে নামার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু ওই কুচক্রী মহল ও ফ্যাসিজমের দোসররা এখনও চক্রান্ত করছে। তারা দেশের এবং দেশের বাইরে থেকে বিভিন্নজনের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন অপকর্ম করছে। তারা বিভিন্ন অপচেষ্টা করে যে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে, সেটি প্রতিরোধ করার জন্য ছাত্র-জনতাকে আবার রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে। আমরা চাই না, রাস্তায় নামার মাধ্যমে আমাদের একজন ভাই-বোনের চলাফেরায় বিন্দুমাত্র অসুবিধা হোক। কিন্তু দেশ যখন সংকটে পড়ে যায়, তখন আমাদের কষ্ট করে হলেও রাস্তায় নামতে হয়। কারণ দেশ যদি দিন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। সে জায়গা থেকে আমরা ছাত্র-জনতা আজকে আবার রাস্তায় নেমে এসেছি।’
চার দফার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের কাছে খবর আসছে, কিছু দোসর শয়তানকে নিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) এ সপ্তাহে একটি পালটা গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে চায়। সেই জায়গা থেকে আমাদের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ দেওয়া। তারা যদি তাদের জায়গা থেকে কোনো নোংরা পরিকল্পনা করে, এগুলোকে প্রতিহত করার জন্য আমরা ছাত্র-জনতা এ কর্মসূচি দিয়েছি।’
বিশ্বাস করি সেটি ছাত্র-জনতার সরকার। আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করব, চাপে রাখব। আমরা এটাও বিশ্বাস করি, তাদের সদিচ্ছা রয়েছে। তারা আমাদের দাবিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেনে নেবেন। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যে দাবিগুলো জানিয়েছি, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছি, তাদের ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা শুরু হয়েছে। আমাদের এই সরকারের ওপর আস্থা আছে। আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলো করবে। কিন্তু তাদের মধ্য যদি আমরা কোনো দীর্ঘসূত্রতা দেখি, আমরা বলে দিচ্ছি, আমরা তাদের যেমন গদিতে বসাতে পারি, নামাতেও পারি। তাদের সাবধান করে দিচ্ছি, আমরা জানি কোন কাজটা করতে কতটুকু সময় লাগে, ততটুকু সময়ের মধ্যে এ কাজটি অবশ্যই হতে হবে। তা না হলে ছাত্র-জনতা এ শাহবাগের মঞ্চ থেকে পুরো বাংলাদেশে আবার তাদের বিরুদ্ধেও কথা বলবে।’
শেখ হাসিনার বিচারের প্রশ্নে তিনি বলেন, এ সাম্যের বাংলাদেশে আমরা চাই হাসিনার এমন একটি বিচার হোক, যেটি একপেশে নয়। পুরো বাংলাদেশ, পুরো পৃথিবীর মানুষ ন্যায্যতার ভিত্তিতে তার বিচার করুক। ওই খুনির জন্য আমরা ন্যায্যতার কথা বলছি বলে, আমরা তার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার কথা বলেছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয় দাবি জানাবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেদিন থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত তাই করেছি যা দেশের জনগণ চায়। এ দেশের জনগণ যদি মনে করে তাদের (আওয়ামী লীগ) এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই, তাহলে জনগণের পক্ষ থেকে আমরা সেই দাবি তুলব।’
