প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আসিফ নজরুলের বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আসিফ নজরুল
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যে বক্তব্য দিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ তার সঙ্গে একমত। তবে রাষ্ট্রপতির অপসারণের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। এ সময় বলা হয়, সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রধান সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের লিখিত কপি তিনি পাননি। তবে তিনি শুনেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বিদেশে পালিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সোমবার আসিফ নজরুল বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির কথা স্ববিরোধী। এতে তার শপথ লঙ্ঘন হয় এবং এ পদে থাকার তার যোগ্যতা আছে কি না, সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে। কারণ, ৫ আগস্ট রাতে রাষ্ট্রপতি ভাষণে বলেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এখন তিনি নতুন কথা বলছেন। তিনি এ বক্তব্যে (নতুন কথায়) অটল থাকলে তার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, সেটা আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে। এটি উপদেষ্টামণ্ডলীতে আলোচনা হওয়ার মতো মনে হচ্ছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যা বলেছেন, সরকার তার সঙ্গে একমত পোষণ করে। তবে রাষ্ট্রপতির অপসারণের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাকিটা ভবিষ্যৎ বলে দেবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে যে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, সে ব্যাপারে আলোচনা করা অবান্তর।
অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটি হলো সেন্ট মার্টিনে পর্যটন সীমিত করা হবে। মূলত নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি-এ চার মাস সেখানে পর্যটক সীমিত থাকবে। নভেম্বরে পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন। কিন্তু রাতে থাকতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে পর্যটন যেতে ও থাকতে পারবেন। তবে একদিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক এ সুযোগ পাবেন। আর ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে, এ কারণে পর্যটক যেতে পারবেন না। কিন্তু বছরের অন্য সময়ের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, সেন্টমার্টিন দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ। এটি অত্যান্ত স্পর্শকাতর জায়গা। বর্তমানে ভঙ্গুর (ভালনারাবল) অবস্থায় আছে। এ দ্বীপের ৪০ শতাংশ অবশিষ্ট আছে। এটি নজরদারি (মনিটরিং) করা না হলে ধ্বংস হওয়া কিংবা ডুবে যেতে পারে। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়ায়) অনেক ধরনের আলোচনা চলছে। এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কীভাবে ২ হাজার পর্যটন যাবে, সেটি নাম্বারিং করে সিদ্ধান্ত হবে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত নেবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল আন্দোলনের কারণে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান কী? জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, আন্দোলন করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। এ অধিকারের প্রতি সরকার শ্রদ্ধাশীল। এক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো যদি যৌক্তিক হয়, তবে সরকার তা অবশ্যই পর্যালোচনা করবে। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও বলেছেন, দীর্ঘদিনের অপশাসনের কারণে মানুষের মনে অনেক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকের অনেক দাবিদাওয়া আছে। প্রত্যেকের যৌক্তিক দাবি সরকার শুনবে। তবে দাবিদাওয়াগুলো নির্দিষ্ট একটি চ্যানেলের মাধ্যমে সরকারকে জানানোর জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণেও বলেছেন, প্রত্যেকের দাবির প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল। রাস্তা বন্ধ করে কিংবা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে দাবি জানানো বন্ধ করতে তিনি অনুরোধ করেছেন। কেউ যদি সেই অনুরোধ না রাখেন তবে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা ভেবে দেখবেন কীভাবে এটি বন্ধ করা যায়।
নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত সার্চ কমিটি কবে গঠিত হচ্ছে-এ প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সার্চ কমিটি গঠন সংক্রান্ত একটি আইন আছে। এ আইনে বলা আছে কমিটিতে কারা থাকবেন। যেহেতু ওই আইনটি এখনো বলবৎ আছে, সে কারণে আইনটি অনুসরণ করেই কমিটি গঠন করতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সার্চ কমিটির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চাওয়া হয়েছে কি না-এ প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আলোচনায় নাম চাইতেই পারেন। কিন্তু কমিটি গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। ওই প্রক্রিয়ায় বলা আছে, সার্চ কমিটিতে বিচার বিভাগের দুইজন প্রতিনিধি, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল এবং আরও দুই-একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি থাকবেন। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সার্চ কমিটি গঠনের পর কমিটি কাজ শুরু করবে। তিনি বলেন, দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি রয়েছে। সেই দাবি পূরণ সংক্রান্ত কাজেরই অংশ হলো সার্চ কমিটি। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের ব্যাপারেও তাদের দাবি আছে। সে কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কার সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কমিটি কাজ করছে। দুই প্রক্রিয়া আলাদা।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল আইনজীবী জেড আই খান পান্নাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে মামলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মামলার বাদীই আসামিদের ব্যাপারে জানেন না। জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, মামলা করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। ফলে কাউকে ঠেকানো যায় না। কিন্তু গণহারে মামলা দেওয়ার বিষয়টি আমরাও সমর্থন করছি না। সে কারণে সরকারের পক্ষ থেকে (পুলিশকে) বলা আছে যদি অপরাধের প্রমাণ না পাওয়া যায়, তবে তাকে যেন হয়রানি না করা হয়। জেড আই খান পান্নার বিষয়টি সামনে আসায় তাকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আজাদ মজুমদার যোগ করেন, এ মামলায় বাদী বলেছেন ভুলবশত এটি হয়েছে। আর জেড আই খান পান্না নিজেও বলেছেন, এ মামলা রাজনৈতিক কারণে হয়নি। এটি ব্যাক্তিগত কারণে হতে পারে।
