Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক

পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান বাংলাদেশের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান বাংলাদেশের

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার জন্য দেশটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলেছে বাংলাদেশ। এছাড়া অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান এবং ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বিদেশি সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর বিষয়টিও উত্থাপন করা হয়েছে। পাকিস্তান এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন এ তথ্য জানান। এদিন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন। আর পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ।

বৈঠকের বিষয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিদেশ থেকে আসা সহায়তা ফেরত এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার জন্য দেশটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলায় পাকিস্তান কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে-জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব জানান, এ বিষয়ে তারা (পাকিস্তান) আলোচনা অব্যাহত রাখবে।

ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি পাকিস্তান এড়িয়ে যেতে চায় কি না, এটা হলে বাংলাদেশের কৌশল কী হবে-এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। আর কূটনীতির কাজটাই হচ্ছে অবস্থান তুলে ধরে এগিয়ে যাওয়া। এখানে বিষয়টা এরকম না যে আমরা বিষয়টি তোলার পর তারা আলোচনায় রাখতে চাননি। তারা বলেছেন, এটা নিয়ে তারা ভবিষ্যতে আলোচনার উদ্যোগ রাখতে চান। এখন আমি এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নেব। এটা হচ্ছে আমার অবস্থান।

বাংলাদেশ ফেরত চাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফরমার ডেপুটি চেয়ারম্যান অব প্ল্যানিং কমিশন বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী, ৪ হাজার মিলিয়ন ইউএস ডলার, আরেকটিতে বলা আছে ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আমরা আজ এ অঙ্কটাই বলেছি। আরেকটি হচ্ছে-১৯৭০ সালে যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়, সেখানে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও এজেন্সি ২০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার পরিমাণ অর্থ দান করেছিল। আমরা সেটিও বলেছি।

সেখানে মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা হচ্ছে আরও বিস্তারিত আলোচনার বিষয়। দেড় দশক ধরে কোনো আলোচনা হয়নি। আজ আমরা যে বিষয়টি তাদের কাছ থেকে শুনতে চেয়েছি, সেটি হচ্ছে-আমরা এ বিষয়ে অ্যাঙ্গেজড থাকব। আমাদের লক্ষ্য ছিল এটা তাদের নজরে আনা। সামনে যেসব বৈঠক হবে, সেখানে আমরা এটা নিয়ে হয়তো বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ পাব। তিনি বলেন, আমরা দুটি পয়েন্ট মাথায় রেখে বিষয়টি উত্থাপন করেছি। প্রথমত, দেড় দশক পর আমরা এই লেভেলে বসলাম। ফলে এ বিষয়টি তোলা উচিত এবং তুলেছি ন্যায্যতা ও ঐতিহ্যের দিক থেকে। দ্বিতীয় হচ্ছে-আমরা তাদের বলেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, সাম্প্রতিককালে উচ্চতর যোগাযোগ এবং আমাদের সহযোগিতার কারণে সেটাকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে গেলে আমাদের অমীমাংসিত বিষয়গুলোয় আশু মীমাংসা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এখন যে সম্পর্ক, এই সময়ই বিষয়গুলো সমাধানের উপযুক্ত সময়।

একসময় আমরা ভারতের দিকে বেশি ঝুঁকতাম, এখন পাকিস্তানের দিকে বেশি ঝুকছি কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দেখুন পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের যেসব প্রাতিষ্ঠানিক মেকানিজম আছে, পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক এর একটি। সবশেষ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১০ সালে। আরেকটি মেকানিজক হচ্ছে জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন। সেটি সবশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৪ সালে অর্থাৎ ২১ বছর আগে। আমরা এখন এই স্থবির সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি এবং সেটি আমাদের জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে করছি। এক্ষেত্রে ঝোঁকার প্রশ্ন যদি বলেন, আমি একটি-দুটি বিষয় বলতে পারি, যেটি আমাদের জন্য লাভজনক। যেমন: আমরা বিমান যোগাযোগ চালু করছি। ব্যবসা-বাণিজ্য যদি বৃদ্ধি পায়, সেটিকে ঝোঁকা বলা হয় না। আমি মনে করি, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে যেভাবে অ্যাঙ্গেজড হচ্ছি, এর ভিত্তি হচ্ছে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সুফল দেখছি। কাজেই এটাকে ঝোঁকা বলে না।

জসীম উদ্দিন বলেন, সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম লক্ষ্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে উভয় দেশের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে সামনের দিনগুলোয় আরও এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। এছাড়াও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু এবং দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর ২৭-২৮ এপ্রিল : এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব জানান, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে আসার তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। ২৭ ও ২৮ এপ্রিল তিনি সফর করবেন। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে যেসব বিষয়ে সমঝোতা স্মারক নিয়ে কথা হচ্ছে, এই সফরটাকে মাথায় রেখে যাতে চূড়ান্ত করতে পারি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পাকিস্তানি দূতাবাসসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছি। যাতে আমরা তা রিভিউ এবং চূড়ান্ত করতে পারি।

প্রধান উপদেষ্টার পাকিস্তান সফরের সম্ভাবনা আছে কি না বা এ নিয়ে কথা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আপাতত পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে কাজ করছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈঠকে সার্ক নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অবস্থান একই রকম।

আটকে পড়া পাকিস্তানি ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ জন : বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি কারা এবং এর সংখ্যার বিষয়ে তিনি বলেন, আটকে পড়া যেসব পাকিস্তানি নাগরিক ছিলেন, তাদের যখন সুযোগ দেওয়া হয়, কেউ কেউ বাংলাদেশ থেকে যেতে চেয়েছিলেন। তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। আর কেউ কেউ পাকিস্তানে ফেরত যেতে চেয়েছেন। গত দেড় দশক আগে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় কথাবার্তা বলেছি। এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ জন আটকে পড়া পাকিস্তানি সেখানে ফিরে গেছেন। ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ জন রয়েছেন, যারা ১৪ জেলার ৭৯ ক্যাম্পে বসবাস করছেন।

সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা : তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিবহণ ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন, সাম্প্রতিককালে দুদেশের মধ্যে সরাসরি শিপিং রুট চালু হয়েছে এবং সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শীঘ্রই দুদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু সম্ভব হবে।

পাকিস্তান মহান মুক্তিযুদ্ধ পররাষ্ট্র সচিব

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম