Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ক্যাথলিকদের ধর্মগুরু ফ্রান্সিস মারা গেছেন

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ক্যাথলিকদের ধর্মগুরু ফ্রান্সিস মারা গেছেন

ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের শীর্ষ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। সোমবার ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ভ্যাটিকানের বিবৃতির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

পোপ দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের গুরুতর জটিলতায় ভুগছিলেন। এর আগে ইতালির রোমে একটি হাসপাতালে বেশ কিছু দিন তার চিকিৎসাও চলেছে। ভ্যাটিকান জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে ভ্যাটিকানে নিজ বাসভবন কাসা সান্তা মার্তায় তিনি মারা যান।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পোপ ফ্রান্সিসকে এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে বেশ কয়েকবার তার শারীরিক অবস্থা বেশ গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়। ভ্যাটিকান জানায়, শ্বাসপ্রশ্বাস-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পোপ ফ্রান্সিসকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল।

বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শ পদত্যাগ করার পর ২০১৩ সালের মার্চে কার্ডিনাল জর্জ মারিও বেরগোগলিও ক্যাথলিক চার্চের নেতৃত্ব পান। ফ্রান্সিসের নেতৃত্বে ভ্যাটিকানে অনেক বিষয়ের সূচনা করে। তিনি ক্যাথলিক চার্চে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেন। তবে ঐতিহ্যবাদীদের মধ্যেও জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্সের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় এক শিশুর, যার নাম রাখা হয় জর্জ মারিও বেরগোগলিও। বাবা মারিও আর রেগিনা সিভোরি। ইতালীয় অভিবাসী বাবা মারিও ছিলেন রেলওয়ের হিসাবরক্ষক। ফ্যাসিবাদের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ইতালি থেকে আর্জেন্টিনায় পালিয়ে আসেন তার বাবা-মা। পরে সেখানেই জন্ম হয় মারিওর। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে মারিও ছিলেন সবার বড়। তরুণ বয়সে নিজের ও পরিবারের দায়িত্ব ঘাড়ে এসে পড়ায় তিনি ঝাড়ুদার-নাইটক্লাবে নিরাপত্তাকর্মীর মতো চাকরি করেছেন বহু বছর।

জর্জ মারিও এসবের পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। রসায়নে স্নাতক অর্জন করেন তিনি। কাজ করেছেন স্থানীয় এক কারখানাতেও। সেখানে কাজ করতে গিয়ে তার পরিচয় হয় এস্তার বালেস্ত্রিনোর সঙ্গে। যিনি আর্জেন্টিনার সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বেশ সরব ছিলেন। পরে এস্তারকে ব্যাপক নির্যাতন করে হত্যা করা হয় বলে শোনা যায়। তার দেহও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরে তিনি সোসাইটি অব জিসাস নামের একটি ক্যাথলিক ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্য হন। এই গোষ্ঠীর সদস্যদের জেসুইট (Jesuit) বলা হয়। ওই গোষ্ঠীর সদস্য থাকাকালে তিনি দর্শন, সাহিত্য ও মনোবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। পরে যাজকত্ব লাভের পর দ্রুত পদোন্নতি পান। ১৯৬৯ সালে তিনি ধর্মযাজক হন এবং ১৯৭৩ সালে তিনি আর্জেন্টিনার প্রাদেশিক প্রধান নিযুক্ত হন। পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শ পদত্যাগ করার পর ২০১৩ সালের মার্চ মাসে কার্ডিনাল জর্জ মারিও বেরগোগলিও ক্যাথলিক চার্চের নেতৃত্ব পান। পোপ ফ্রান্সিস হলেন ইতিহাসের প্রথম জেসুইট পোপ।

বিবিসি জানিয়েছে, পোপ ফ্রান্সিস স্থানীয় ট্যাঙ্গো নাচ খুব পছন্দ করতেন। এ ছাড়া স্থানীয় ফুটবল ক্লাব সান লোরেঞ্জোর একজন বড় সমর্থক ছিলেন তিনি। ছোটবেলা একবার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তার জীবন প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। সে সময় ফুসফুসের একটি অংশ কেটে ফেলা হয়। এ কারণে সারা জীবনই তিনি সংক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন। বয়স্ক অবস্থায় তিনি ডান হাঁটুর ব্যথায় ভুগতেন, যেটিকে তিনি ‘শারীরিক অপমান’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

পোপ ফ্রান্সিস ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। তখন তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করে সবার পক্ষ থেকে তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন।

পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য আগামী শুক্রবার সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, বিশপ ও ধর্মীয় প্রতিনিধিরা এতে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে বাজিলিকা দে সান্তা মারিয়া মাগিওরে’র পাশে সমাহিত করা হবে।

ভ্যাটিকান সূত্রে জানা গেছে, তার উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য ১২০ জন কার্ডিনাল নিয়ে কনক্লেভ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। সম্ভবত লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা বা এশিয়ার কোনো তরুণ কার্ডিনাল পরবর্তী পোপ হিসাবে নির্বাচিত হতে পারেন বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।

পোপের মৃত্যুতে বিশ্ব নেতাদের শোক : পোপ ফ্রান্সিসের মৃতুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিশ্বনেতারা।

যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লস এক শোকবার্তায় বলেছেন, ‘পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি এবং আমার স্ত্রী অত্যন্ত দুঃখিত। তবে, পোপ চার্চ ও বিশ্বের সাথে ইস্টারের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পেরেছিলেন এ কথা জেনে আমাদের ভারাক্রান্ত হৃদয় কিছুটা হালকা হয়েছে।’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পোপ ফ্রান্সিসকে ‘মানবতাবাদ এবং ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ মূল্যবোধের রক্ষক’ হিসাবে স্মরণ করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পোপের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, ‘তিনি জানতেন কীভাবে আশা দিতে হয়, প্রার্থনার মাধ্যমে দুঃখ লাঘব করতে হয় এবং ঐক্য গড়ে তুলতে হয়।’ পোপের মৃত্যুতে ‘গভীরভাবে ব্যথিত’ জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি। পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক পোপ ফ্রান্সিসকে একজন ‘ভালো, উষ্ণ এবং সংবেদনশীল মানুষ’ হিসাবে স্মরণ করেছেন। মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি বলেছেন, পোপ ফ্রান্সিস ‘শান্তি, ভালোবাসা এবং করুণার কণ্ঠস্বর ছিলেন।’ এছাড়া তার মৃত্যুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, মিসর, ইসরাইল, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা পৃথক শোক জানিয়েছেন।

প্রেমিকাকে না পেয়ে পোপ হয়েছিলেন ফ্রান্সিস : ছেলেবেলায় সমবয়সি এক মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। প্রেমিকাকে বলেছিলেন, ‘আমাকে যদি বিয়ে না করো, তাহলে এ জীবন ঈশ্বরের সাধনায় উৎসর্গ করে দেব।’

কৈশোরে সেই প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ব্যথা বুকে নিয়েই পোপ এতটা পথ একলা পাড়ি দিয়েছেন। ধর্ম সাধনা করেছেন। এর স্বীকৃতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের পোপ হিসাবে।

পোপ ফ্রান্সিসের সেই প্রেমিকার নাম এমিলিয়া দামন্তে। ২০১৩ সালে দুজনেরই বয়স যখন ৭৬ বছর, তখন সেই এমিলিয়াই প্রকাশ করেন তাদের গোপন প্রেমের খবর।

এমিলিয়া বলেন, ‘তখন আমরা ১২ বছরে পা দিয়েছি। থাকতাম আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সের ফ্লোরেস উপশহরে। বেরগোগলিও একদিন একটা চিঠি দিল। আমাকে বিয়ে করতে না পারলে সংসারত্যাগী হবে, ধর্মযাজক হয়ে যাবে বলেও জানিয়ে দিল।’

২০১৩ সালে বেরগোগলি পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর এমিলিয়া বলেছিলেন, ‘আজ আর আমার লুকানোর কিছু নেই। ওটা ছিল অবুঝ প্রেম। আমাদের সম্পর্ক ছিল পবিত্র। তবে আমার মা-বাবার বাধার কারণে সেই প্রেম বিকশিত হয়নি। চিঠিতে একটি ঘরের ছবি এঁকেছিল সে। ছাদ লাল রঙের। ওর স্বপ্ন ছিল, এমন একটি ঘর কিনবে, বিয়ের পর আমাকে নিয়ে সেখানে থাকবে। চিঠি পড়ল বাবার হাতে। তিনি তো রেগে আগুন। আমাকে আচ্ছামতো পেটালেন বাবা। এরপর থেকে ওকে আর কখনো দেখিনি। মা-বাবা আমাকে দূরে দূরে সরিয়ে রাখতেন। ওর সঙ্গে দেখা হোক, তা চাইতেন না। একপর্যায়ে আমিও চাইতাম, ও যেন আমার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায়। তা-ই হয়েছিল, ধীরে ধীরে দূরে সরে গিয়েছিল সে।’

ক্যাথলিক ধর্মগুরু ফ্রান্সিস

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম