ঢাকা ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
সায়েন্সল্যাব এলাকা রণক্ষেত্র আহত ১৫
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মঙ্গলবার দফায় দফায় সংঘর্ষে সায়েন্স ল্যাব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুপক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রায় ৫ ঘণ্টা থেমে থেমে হামলা-পালটা হামলার কারণে মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে আশপাশের সড়কে সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট। তীব্র গরমে আটকে থাকা যানবাহনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গলদঘর্ম হতে হয় শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। কেউ কেউ তপ্ত রোদে হেঁটে পাড়ি জমিয়েছেন গন্তব্যে। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার জেরে সিটি কলেজে ২ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা কলেজের সব ক্লাসও ২ দিনের (বুধ-বৃহস্পতিবার) জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে অনার্স ও মাস্টার্স শ্রেণির ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষাগুলো পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনার জেরে এ সংঘর্ষ হয় বলে জানান ঘটনাস্থলের কিছু শিক্ষার্থী। এদিকে ভাঙচুর ঠেকাতে পুলিশ সদস্যরা কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ করেছে সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের প্রধান ফটক ভাঙচুর ও নামফলক খুলে নিয়ে আসেন। এরপর একপর্যায়ে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব ফুটওভার ব্রিজের নিচে অবস্থান নেন। আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন টিচার ট্রেনিং কলেজের সামনে। দুপক্ষই ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে থেমে থেমে একে অপরের ওপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নেয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ। বেলা পৌনে ৩টার দিকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ও লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদেরও পুলিশের ওপর চড়াও হতে দেখা যায়। সংঘর্ষের কারণে এই সময়ে সায়েন্স ল্যাব ও আশপাশের এলাকার দোকানপাট বন্ধ ছিল। বিকাল ৪টার কিছু আগে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে জড়ানো যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন পরপর কারণে-অকারণে একে অপরের ওপর চড়াও হন তারা। এর একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সোমবার ধানমন্ডিতে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন যুবক। ওই যুবকদের মধ্যে একজন সিটি কলেজের শিক্ষার্থী বলে দাবি করেন তারা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধভাবে সিটি কলেজের সামনে জড়ো হন। তখন সিটি কলেজের শিক্ষকরা তাদের আটকানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের গেটে ইট-পাটকেল মারতে থাকেন। এরপর থেকেই ছড়াতে থাকে উত্তেজনা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভিআইপি পরিবহণের একটি বাস ভাঙচুর করা হয়। চালকের অভিযোগ, সিটি কলেজের ছাত্ররা ওই বাসে ভাঙচুর করেছেন। বাসে উঠে ঢাকা কলেজের এক ছাত্রকে মারধর করেন তারা। এ সময় দুজন নারী আহত হয়েছেন। পরে বাসটি রাস্তার মাঝখান থেকে এক পাশে সরিয়ে নেয় পুলিশ।
এরপর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়কে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। সিটি কলেজের নামফলক খুলে নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় তাদের।
সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের দায়ী করা হচ্ছে। অথচ যারা ওই মারধরে জড়িত, তারা কেউই সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নয়। সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
এদিকে পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, এই দুই কলেজের সংঘর্ষ যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর স্থায়ী সমাধান দরকার। এতে কখন যে কার ক্ষতি হয়ে যাবে তা আমরা চাই না। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত। সংঘর্ষের মাঝে পড়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দুই দিনের জন্য ঢাকা কলেজের সব ক্লাস স্থগিত : সিটি কলেজের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে এবার ঢাকা কলেজের সব ক্লাস দুইদিনের (বুধ-বৃহস্পতিবার) জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে অনার্স ও মাস্টার্স শ্রেণির ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষাগুলো পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক পারভীন সুলতানা হায়দারের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, একাদশ, অনার্স ও মাস্টার্স শ্রেণির ক্লাস বুধবার ও বৃহস্পতিবার (২৩ ও ২৪ এপ্রিল) স্থগিত করা হয়েছে। তবে অনার্স ও মাস্টার্স শ্রেণির ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
সিটি কলেজ ২ দিন বন্ধ ঘোষণা : এদিকে সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক হোসাইন বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। আগামী ২ দিন অর্থাৎ বুধ ও বৃহস্পতিবার সিটি কলেজ বন্ধ রাখা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের বাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, সিটি কলেজের স্থাপনায় যে হামলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে সেটির অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। মারামারি করে এসব সমস্যার সমাধান হবে না বলেও জানান তিনি। সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার কলেজে ভাঙচুরের অভিযোগ এনে দেশবাসী, পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করেছেন।
ঢামেকে ৮ জন : সংঘর্ষে আহত আটজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সিটি কলেজের শিক্ষার্থী শামীম আহসানের কোমরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া অন্যরা হলেন-ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব, মো. রাজিন, মো. সিয়াম, আদিব, লিয়ন, ফজলে হাসান ও চন্দ্রিমা মার্কেটের কর্মচারী সানি। আহতদের মাথায় আঘাত রয়েছে।
যানজটে দুর্ভোগ : সংঘর্ষের সময় মিরপুর সড়কের দুপাশে যানবাহন আটকে যায়। বিকল্প পথে যানবাহনগুলো গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধানমন্ডি, কলাবাগান, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেটের আশপাশের অলিগলি ও সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এ সময় সাধারণ মানুষকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এর আগে ১৫ এপ্রিল এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পালটাপালটি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল।
