Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বক্তব্য শেখ হাসিনার

‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’

ছবি: সংগৃহীত

ভারতে বসে গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথোপকথনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।’ এই বক্তব্যের অডিও ফরেনসিক বিশ্লেষণে এটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠ বলে প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। বুধবার ফরেনসিক প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের পর বিচার কাজে বাধা, কিংবা আদালত অবমাননার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে ১৫ মের মধ্যে শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুলকে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

এদিকে, জুলাই আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে শহীদ আবুল হাসান খানকে হত্যার অভিযোগে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। একই সঙ্গে আশুলিয়া থানায় ছয়জনের মরদেহ পোড়ানোর মামলায় পুলিশের এসআই আরাফাত উদ্দিন ও কামরুল হাসানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বামীর অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি চেয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তার আবেদনটি নাকচ না করলেও জামিন না দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের জন্য বলা হয়েছে। অপরদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক পুলিশের এডিসি ইশতিয়াক আহমেদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগ দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের নেতা রাশেদ খান।

আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া অডিওতে শোনা যায়, ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি। এক মাঘে শীত যায় না।’ এমন একটি অডিও বক্তব্যের ফরেনসিক বিশ্লেষণে এটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠ বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচারকাজে হস্তক্ষেপ ও হুমকি এবং আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। ১৫ মের মধ্যে শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুলকে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

সাবেক এডিসি ইশতিয়াকের নির্যাতন নিয়ে অভিযোগ : পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইশতিয়াক আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তিনি এ অভিযোগ জমা দেন। ২০১৮ সালের ১ জুলাই ইশতিয়াক আহমেদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটে তার কক্ষে রাশেদ খানের ওপর নির্যাতন চালান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগে রাশেদ খান বলেন, ২০১৮ সালে গ্রেফতার করার পর পুলিশ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ইশতিয়াক আহমেদের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি বুট জুতা পরা অবস্থায় তার গোপনাঙ্গে লাথি মারেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে গালাগাল ও অনবরত চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুসি মারতে থাকেন। ওই নির্যাতনের রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, ‘সেই নির্যাতনে আমার শরীরের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। অনেক জায়গা থেঁতলে যায়। এখন মাঝেমধ্যে প্রেসার কমে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ব্যথায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না, ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠি। অত্যাচার করা হলেও পুলিশ তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি অভিযোগ করে রাশেদ খান বলেন, ‘আমাকে মাত্র ব্যথার কয়েকটি ট্যাবলেট দিয়েছিল পুলিশ।’

ইশতিয়াক আহমেদকে গ্রেফতারে দেরি হয়েছে উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, বিচার যত ধীরে শুরু হবে, অপরাধীরা তত দেশ ছেড়ে পালাবে। প্রশাসনের গাফিলতির সুযোগে অনেক অপরাধী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। অন্য অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। ইশতিয়াক আহমেদের নির্যাতনের শিকার অন্য ভুক্তভোগীদেরও মামলা করার আহ্বান জানিয়ে রাশেদ খান বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, ইশতিয়াক আহমেদ জামিন পেয়ে যেতে পারেন। তাকে ছাড়া হলে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে অন্যায় করা হবে।’

এর আগে রোববার পুলিশ সিটিটিসির সাবেক এ অতিরিক্ত উপকমিশনারকে রাঙামাটি থেকে গ্রেফতার করে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাকে। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হলেন আনসার উদ্দিন খান : অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আনসার উদ্দিন খান পাঠানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা থেকে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আনসার উদ্দিন খান পাঠান ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর অবসরে যান। সে সময় তিনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির পুলিশ সুপার ছিলেন।

শেখ হাসিনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম