Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা

ভারতে পাকিস্তানের পণ্য আমদানি, চিঠিপত্র বন্ধ

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার রাতেও নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গুলিবিনিময়ের খবর পাওয়া গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাকিস্তান থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। এদিকে এ উত্তেজনার মধ্যেই ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান। এ পরিস্থিতিতে দুদেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। খবর জিও নিউজ, এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা, এএনআইয়ের।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ২ এবং ৩ মের মাঝের রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতের পোস্টগুলো লক্ষ্য করে ফের গুলি চালিয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা, উরি এবং আখনুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে ছোট অস্ত্রের গুলিবর্ষণ শুরু করে পাক সেনারা। এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈন্যরা সুশৃঙ্খলভাবে সেই হামলার জবাব দিয়েছে।

এ অবস্থায় পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘এখন থেকে আর সরাসরি বা ঘুরপথে পাকিস্তান থেকে কোনো পণ্য আমদানি করার অনুমোদন দেওয়া হবে না। জাতীয় নিরাপত্তাজনিত কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে।’ পরবর্তী নির্দেশনা জারি না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এই নির্দেশনার কোনো ব্যতিক্রমের জন্য অবশ্যই ভারত সরকারের আগাম অনুমতি নিতে হবে।

এদিকে ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব শিপিং’-এর পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের পতাকা থাকা কোনো পণ্যবাহী জাহাজ ভারতের কোনো বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না। পাশাপাশি ভারতীয় জাহাজও পাকিস্তানের কোনো বন্দরে যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কড়াকড়িতে কোথাও ছাড় দেওয়া হবে কি না, তা ক্ষেত্রবিশেষে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া শনিবার ভারতীয় যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান থেকে ডাকযোগে আর কোনো চিঠি বা পার্সেল ভারতে পাঠানো যাবে না। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আকাশপথে বা স্থলপথে পাকিস্তান থেকে সব ধরনের চিঠি এবং পার্সেল এ দেশে ঢুকতে দেওয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভারতের সঙ্গে চলমান তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান। শনিবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর দাবি করেছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে সামরিক বাহিনী। আবদালি অস্ত্র ব্যবস্থা (এডব্লিউএস) নামের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘ইন্দুস’ সামরিক মহড়ার অংশ হিসাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, এই উৎক্ষেপণের লক্ষ্য ছিল সেনাদের অপারেশনাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম এবং উন্নত ম্যানুভারেবিলিটি বৈশিষ্ট্যসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যাচাই করা। আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, উৎক্ষেপণটি সেনাবাহিনীর কৌশলগত বাহিনী কমান্ডের কমান্ডার, কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পাকিস্তানের কৌশলগত সংস্থাগুলোর বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনা, বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।

একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশের এমন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ‘গুরুতর উসকানি’ হিসাবে বিবেচনা করতে পারে ভারত। তবে ইসলামাবাদ বলেছে, ‘সামরিক বাহিনীর অপারেশনাল প্রস্তুতি যাচাই এবং ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত নেভিগেশন সিস্টেম ও অন্যান্য কারিগরি সক্ষমতা প্রমাণ করাই ছিল এডব্লিউএস ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের উদ্দেশ্য।’

পহেলগাঁওয়ে হামলা-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আমেরিকার মতোই এবার দুদেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপ। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রশমনে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক শীর্ষ প্রতিনিধি কাজা কাল্লাস। শুক্রবার তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি দুই দেশকেই সংযত হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। পরে সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘আমি দুই পক্ষকেই সংযম প্রদর্শন করার অনুরোধ করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আলোচনায় বসতে বলেছি। কারণ উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে কারও তাতে লাভ হয় না।’ এর আগে নয়াদিল্লিতে ফোন করে একই আহ্বান জানিয়েছিলেন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনছে ভারত : যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম কিনছে ভারত। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদনও দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিজেদের নৌবাহিনীর জন্য সি-ভিশন সফটওয়্যার ও এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে চায় ভারত। ‘কৌশলগত ঐক্যের অংশ হিসাবে ভারতের কাছে ইন্দো-প্যাসিফিক মেরিটাইম ডোমেইন অ্যাওয়্যারনেস সফটওয়্যার (সি-ভিশন) এবং আনুষঙ্গিক উপকরণ বিক্রয়সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। এই প্যাকেজের মূল্য ১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার।’

সিন্ধুতে বাঁধ বানালে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি : পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ভারত যদি সিন্ধুতে কোনো বাঁধ তৈরি করে, তবে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। শুক্রবার জিও নিউজের ‘নয়া পাকিস্তান’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের যে পানি প্রাপ্য, তা আটকাতে ভারত কোনো বাঁধ তৈরি করলে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। আসিফ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমস্যার কথা তুলে ধরছে ইসলামাবাদ। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শুধু গুলি-বন্দুকেই আগ্রাসন হয় না। আগ্রাসনের আরও একটা রূপ পানি আটকে দেওয়া। সেটা করলে খিদে-তেষ্টায় মানুষ মারা যেতে পারেন।’

রাওয়ালপিণ্ডিতে মহিলা উদ্ধারকারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ : ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অবনতির মধ্যে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডিতে। ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতির জেরেই এই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেখানকার বেসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তর এবং রাওয়ালপিণ্ডি জেলা প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এরই অংশ হিসাবে শহরজুড়ে ১৬টি আপৎকালীন সাইরেন বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে নজরদারি এবং উদ্ধারকাজের জন্য ৩৮টি চেকপয়েন্টও বসানো হয়েছে। উদ্ধারকাজে সাহায্য করতে ইচ্ছুকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে স্থানীয় বেসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তর। স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে অনেক মহিলাও রয়েছেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আহতদের কীভাবে উদ্ধার করতে হবে, কোনো ভবনে আগুন লাগলে বা ভেঙে পড়লে কীভাবে মানুষকে নিরাপদে অন্যত্র সরাতে হবে, কীভাবে আগুন নেভাতে হবে, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কোনো আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রথমে সদর দপ্তরের সাইরেন বেজে উঠবে। সেখান থেকে শহরের বাকি সাইরেনগুলোও বেজে উঠবে।

পাকিস্তান

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম