খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন আগামীকাল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
লন্ডনে প্রায় চার মাস চিকিৎসা শেষে আগামীকাল দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ বিমানে (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) আজ ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা। খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসছেন তার দুই পুত্রবধূ-ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান। বিমানবন্দরের টারমাকে বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থেকে চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাবেন। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত পথে পথে অভ্যর্থনা জানাবেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে দলটি। চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানানোর ক্ষেত্রে বিএনপি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে কারা কোথায় অবস্থান নেবেন, তারা কী করতে পারবেন, কী করতে পারবেন না, সে বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পর দুই পুত্রবধূসহ খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে উৎফুল্ল নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা শেষে ৬ মে (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ১০টায় দেশে ফিরবেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। দেশে ফিরলে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন বিএনপি ও এর বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রুহুল কবির রিজভীর নির্দেশনা অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়ান হোটেল পর্যন্ত অবস্থান করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। ছাত্রদল অবস্থান করবে লা মেরিডিয়ান হোটেল থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত। যুবদল অবস্থান করবে খিলক্ষেত থেকে হোটেল র্যাডিসন পর্যন্ত। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি অবস্থান করবে হোটেল র্যাডিসন থেকে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত। স্বেচ্ছাসেবক দল অবস্থান করবে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত। কৃষক দল অবস্থান করবে বনানী কবরস্থান থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত। শ্রমিক দল অবস্থান করবে কাকলী মোড় থেকে বনানীর শেরাটন হোটেল পর্যন্ত। ওলামা দল, তাঁতীদল, জাসাস, মৎস্যজীবী দল অবস্থান করবে শেরাটন হোটেল থেকে বনানী কাঁচাবাজার পর্যন্ত। মুক্তিযোদ্ধা দলসহ সব পেশাজীবী সংগঠন অবস্থান করবে বনানী কাঁচাবাজার থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত। মহিলা দল অবস্থান করবে গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর থেকে গুলশান অ্যাভিনিউ রোড পর্যন্ত। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর থেকে গুলশান অ্যাভিনিউ রোড পর্যন্ত অবস্থান করবেন। আর বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা যার যার সুবিধামতো স্থানে অবস্থান নেবেন।
রিজভী বলেন, সব নেতাকর্মী দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তার এক পাশে দাঁড়াবেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেলে যাওয়া যাবে না। হেঁটে হেঁটেও যাওয়া যাবে না। এছাড়া বিমানবন্দর ও বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসভবনে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নেত্রী ফিরে আসবেন। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে প্রচণ্ড আবেগ কাজ করছে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষ আজকে উজ্জীবিত যে, তাদের প্রিয় নেত্রী দেশে ফিরে আসবেন। তাকে যথাযথ অভ্যর্থনা জানানো, এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শুধু বিএনপি নয়, সারা দেশের মানুষ আজ তাকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে। জনগণ যাতে তাদের নেত্রীকে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে অভ্যর্থনা জানাতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে চার মাস লন্ডনে দেশনেত্রী চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। একদিকে ভালো পরিবেশ, বিশেষ করে পারিবারিক পরিবেশ এবং একই সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উন্নত চিকিৎসার মধ্য দিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি আগের চেয়ে অনেক সুস্থবোধ করছেন। সেই কারণে তিনি দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সোমবার লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর ছাড়বেন খালেদা জিয়া। বিমানবন্দরে মাকে বিদায় জানাবেন ছেলে তারেক রহমান। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হয়। ৮ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি লন্ডনের দ্য ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয় তার। অর্ধযুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছেন খালেদা জিয়া। ৭৯ বছর বয়সি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন লিভারসিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।
