Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ভারতের হামলা লজ্জার বললেন ট্রাম্প, উদ্বেগ জাতিসংঘের

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভারতের হামলা লজ্জার বললেন ট্রাম্প, উদ্বেগ জাতিসংঘের

পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে লজ্জার বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে এ হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। উভয়পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছতে বলেছে রাশিয়া ও জাপান। অন্যদিকে ভারতের সামরিক অভিযানকে দুঃখজনক বলেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশ এবং অপর বিশ্বনেতারাও বিষয়টি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। 

মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের কয়েকটি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এটা লজ্জার। ওভাল অফিসের দরজা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আমরা এ খবর শুনেছি। তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয়, অতীতের ইতিহাসের ভিত্তিতে মানুষ বুঝতে পেরেছিল যে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তারা (ভারত-পাকিস্তান) দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে। খুব শিগগির চলমান সংকটের অবসান ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভারত ও পাকিস্তান-দুদেশের কাছ থেকেই সর্বোচ্চ মাত্রার সংযত আচরণ প্রত্যাশা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে জানান, নিয়ন্ত্রণ রেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তজুড়ে ভারতের সামরিক অভিযানে মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য বিশ্ব প্রস্তুত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা আশা করি, নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে বিরাজমান বিরোধ শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক পথে, ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি এবং ১৯৯৯ সালের লাহোর ঘোষণার আলোকে, দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধান হবে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান সব সময় একে অপরের প্রতিবেশী ছিল এবং থাকবে। আমরা চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে। আমরা উভয়পক্ষকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানাই। উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার, সংযম প্রদর্শন করার এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকেও বিরত থাকার অনুরোধ জানাই। যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি আমরা। আশা করি, এটি দ্রুত শেষ হবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্বকে নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।

জাপানের মন্ত্রিপরিষদের প্রধান সচিব ইয়োশিমাসা হাযাশি এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের উদ্বেগ, পরিস্থিতি আরও প্রতিশোধমূলক অবস্থানের দিকে যেতে পারে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাতে পরিণত হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কে সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জোরালোভাবে আহ্বান জানাই।

ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে দেশটিতে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার বলেন, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে ইসরাইল। বিপরীতে পাকিস্তানের প্রতি সংহতি জানিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে তুরস্ক। বুধবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারকে টেলিফোন করে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁয়ে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির পর থেকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুদেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এ হামলা চালাল ভারত। নয়াদিল্লি এই হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। 

বিশ্ব মিডিয়ায় পাকিস্তানে ভারতের হামলা : পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর বিশ্ব মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে। পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো একাধিক খবর ও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে গেলে তা হবে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভয়ংকর। এজন্য দেশ দুটিকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল-‘হাই রিস্ক : ইন্ডিয়ান অ্যাটাকস ইন পাকিস্তান রেইজ ফিয়ার্স অব ওয়াইডার কনফ্লিক্ট’ অর্থাৎ ‘উচ্চঝুঁকি : পাকিস্তানে ভারতীয় হামলায় বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা’। একই সংবাদমাধ্যমের আরেকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম-‘অপারেশন সিঁদুর : হোয়াটস দ্য সিগনিফিকেন্স অব ইন্ডিয়ান পাকিস্তান টার্গেটস’ অর্থাৎ ‘অপারেশন সিঁদুর : ভারতের পাকিস্তান লক্ষ্যবস্তুর তাৎপর্য কী’। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মতো ভারত পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ এবং ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র পাঞ্জাবে আক্রমণ করেছে। লাহোরের পাশের মুরিদক পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল শহর, শিয়ালকোট ও বাহাওয়ালপুরেও হামলা করেছে ভারত। দেশটি এসব স্থানকে লক্ষ্যবস্তু হিসাবে বেছে নেওয়ার পেছনে নির্দিষ্ট কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। হামলা নিয়ে লাইভ খবর প্রচার করেছে বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটির লাইভের শিরোনাম ছিল-টেনশনস স্কেলেট এজ পাকিস্তান ভউজ রেসপন্স টু ইন্ডিয়ান অ্যাটাকস আফটার পহেলগাম কিলিংস’ অর্থাৎ পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর ভারতীয় হামলার জবাব দেওয়ার পাকিস্তানের প্রতিজ্ঞায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। 

পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে লাইভ খবর দিয়েছে সিএনএনও। সংবাদ সংস্থাটির খবরের শিরোনাম ছিল-পাকিস্তান ভউজ টু রেসপন্ড আফটার ইন্ডিয়া লাঞ্চেস স্ট্রাইক ইন ওয়েক অব কাশ্মীর ম্যাসাকার’ অর্থাৎ, কাশ্মীরে গণহত্যার পর ভারতের হামলার জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাকিস্তানের। তবে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-ভারতশাসিত কাশ্মীরের বাইরে পাকিস্তানের আক্রমণের জবাব দেওয়ার আশঙ্কা কম। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল-‘পাকিস্তান আনলাইকলি টু রেসপন্ড উইথ অ্যাটাক ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্টার্ড কাশ্মীর’। এতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভাষ্যকার শহীদ হুসেন আলজাজিরাকে বলেছেন, ভারতশাসিত কাশ্মীরের বাইরে ইসলামাবাদ প্রতিশোধমূলক আক্রমণের পথ বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা কম, যদিও উত্তেজনা বৃদ্ধি না করে যে কোনো আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুতির জানান দেবে দেশটি।

২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির পর থেকে দুই দেশে চলমান উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে হামলা চালাল ভারত। নয়াদিল্লি এই হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’।


ডোনাল্ড ট্রাম্প

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম