আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে পারবে ট্রাইব্যুনাল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এতে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অপরাধ সংঘটন, অপরাধ সংঘটনের আদেশ প্রদান ও সহায়তা, উসকানি প্রদান ও মদদদান, ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতা করা অথবা অন্য যে কোনোভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করা হলে ট্রাইব্যুনাল সেই দলের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। আইনজ্ঞরা মনে করছেন, সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী জুলাই গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে জুলাই গণহত্যা, দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি ও দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও নেতাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম (সাইবার স্পেসসহ) নিষিদ্ধ থাকবে। একই সভায় রাজনৈতিক দলকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন (সংশোধনী) অধ্যাদেশ অনুমোদন করা হয়। তার ধারাবাহিকতায় রোববার জারি করা হলো অধ্যাদেশ। এতে বলা হয়, এই আইন বা প্রযোজ্য অন্যান্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারা-উপধারা (২)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, মদদ দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে অথবা অন্য যে কোনোভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে, সেক্ষেত্রে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠনের নিষিদ্ধ ঘোষণা, এর নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত অথবা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি জব্দ করার ক্ষমতা থাকবে ট্রাইব্যুনালের। আইনে ‘সংগঠন’ শব্দটির সংজ্ঞায়নও করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় সংগঠন বলতে যে কোনো রাজনৈতিক দলকে বোঝাবে। পাশাপাশি দলের অধীনস্থ, সম্পর্কিত বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন অথবা গোষ্ঠীকে বোঝাবে।
জানা গেছে, গত শনিবার রাতেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এই গেজেট প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (দ্বিতীয় সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স, ২০২৫ প্রণয়ন ও জারি করেছেন।
শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গৃহীত হয়।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম রোববার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, সংশোধনীর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) মনে করে, এটি একটি যথোপযোগী উদ্যোগ। গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আরও বলেন, যদিও বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনেও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বা সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়ার বিধান আছে। তারপরও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের আইন বা ট্রাইব্যুনালে সংগঠন বা ব্যক্তির বিচার হলে তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালে এই আইন প্রণয়নের পর ২০১৩ সালে তৎকালীন সরকার ওই আইন সংশোধন করে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনেরও বিচারের ব্যবস্থা করেন। তবে ওই আইনে সংগঠনের শাস্তির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আইনটি শনিবার সরকার সংশোধন করে। যাতে সংগঠনের শাস্তির বিধান রাখা হয়।
তাতে বলা হয়, কোনো সংগঠন যদি বিচারে প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য-তবে ট্রাইব্যুনাল ওই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে পারবেন। তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। অথবা তার সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারবে। ওই সংশোধনীর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিরুদ্ধে তদন্ত বিচারকার্য পরিচালনা এবং শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, এতদিন যে অবস্থায় ছিল সেক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সংগঠনের বিরুদ্ধে তদন্ত বা বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো বাধা ছিল না। বর্তমানে সংশোধনীর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা রাখা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আরও বলেন, আমরা প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জুলাই আন্দোলনে অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছি। তদন্ত সংস্থাকে সহায়তা করছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি রিপোর্ট একদম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। একটি রিপোর্ট প্রসিকিউশনে সাবমিট করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের যুগোপযোগী সংশোধন করায় আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
